আসনে যথাসুখে মেরুদণ্ডকে সোজা করে যথাসম্ভব স্থির হয়ে ভজনে বসবে। প্রথমে মনকে ভ্রুদ্বয়ের মধ্যস্থানে (অজ্ঞাচক্রে) স্থির করবে। যদি প্রারম্ভে তা সম্ভবপর না হয় তবে সর্ব্বপ্রথম নাসাগ্রে দৃষ্টি এবং মনকে স্থির করে, পরে ভ্রুদ্বয়ের মধ্যস্থানে মনকে টেনে আনবে। পরে ভ্রুদ্বয়ের মধ্যস্থান থেকে ঊর্ধ্বদিকে মনের দৃষ্টি চালিত করে ব্রহ্মরন্ধ্রের উপরিভাগে জ্যোতির্ম্মণ্ডল মধ্যবর্ত্তী দণ্ডায়মান শ্রীগুরুমূর্ত্তি (তুমি যে দিকে মুখ করে আছ শ্রীগুরু সেইদিকে মুখ করে আছেন, এইভাবে) কিছুক্ষণ ধ্যান করবে। পরে মনে মনে তাঁকে দণ্ডবৎ প্রণতি করবে। অতঃপর শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণ মূর্ত্তি ধ্যান করবে। তাঁরা তোমার দিকে মুখ করে আছেন এবং তাঁদের চরণ তোমার ভ্রুদ্বয়ের মধ্যস্থানে স্থিত আছে এইভাবে চিন্তা করে ধ্যান করবে। তোমার বাম চক্ষুর সম্মুখে শ্রীশ্রীকৃষ্ণ এবং দক্ষিণ চক্ষুর সম্মুখে শ্রীশ্রীরাধারাণীকে ধ্যান করবে। তাঁরা প্রসন্নবদনে তোমাকে দেখেছেন এইভাবে কিছুক্ষণ ভক্তিপূর্ব্বক ধ্যান করবে,—‘‘প্রভু, আমি তোমার দাস (অথবা দাসী), আমাকে চরণে স্থান দিয়ে সর্ব্বদা রেখো।’’
অতঃপর মন্ত্র জপ করতে হবে। আজ্ঞাচক্রে (ভ্রুদ্বয়ের মধ্যস্থানে) মন স্থির করে দক্ষিণ হস্ত বুকের কাছে ধরে জপ আরম্ভ করবে। ভ্রুদ্বয়ের মধ্যস্থানে মন্ত্র উচ্চারণ করবে। মনে মনে উচ্চারণ করাই প্রশস্ত। ওষ্ঠ এবং জিহ্বা নেড়ে, সশব্দে অথবা নিঃশব্দে জপ করা অপেক্ষা মনে মনে জপ করা শ্রেষ্ঠ। যদি এই প্রকার মানসিক জপ করা সম্ভব না হয় তবে যেমন পারবে তেমন করবে। মন্ত্রের প্রতিটি অক্ষরের ধ্বনি সুস্পষ্টরূপে মনে উচ্চারিত হচ্ছে তার ধ্যানই যথার্থ ধ্যান। অর্থাৎ মন্ত্রের ধ্বনিটি স্পষ্টরূপে উচ্চারিত হচ্ছে তাই অনুভব করতে চেষ্টা করবে। সেই সময় মূর্ত্তির ধ্যান করবার আবশ্যকতা নাই। স্থির চিত্তে মন্ত্রের ধ্বনি শুনতে থাকবে। এই মন্ত্রের ধ্বনিই ভগবৎস্বরূপ এইরূপ চিন্তা করবে। সেই ভগবদ্রূপে আত্মসমর্পণ পূর্ব্বক নিজেকে সম্পূর্ণরূপে তদধীন এবং তদভিন্ন ভাব সহ মুক্তামালার মত একটির পর একটি মন্ত্র অবিচ্ছেদে জপ করে যাবে। যারা নাম মন্ত্র পেয়েছে তারা দক্ষিণ হস্ত বুকের কাছে ধরে এবং বাম হস্ত বাম হাঁটুর উপর চিৎ করে রেখে জপ করবে। দক্ষিণ হস্ত দ্বারা মন্ত্রজপের গণনা করবে এবং বাম হস্ত দ্বারা জপের সংখ্যা রাখবে।
দীক্ষামন্ত্রে দীক্ষিতগণকে মালায় জপ করতে হবে। দক্ষিণ হস্ত দ্বারা মালা ধারণ করে, মালাকে বুকের নিকট আনয়ন করে জপ আরম্ভ করবে। বাম হস্ত বাম হাঁটুর উপর চিৎ করে রেখে জপের সংখ্যার গণনা রাখবে। মালাকে অনামিকার উপর তার মধ্য থেকে অগ্রভাগে রেখে অঙ্গুষ্ঠ ও মধ্যমাকে মালার উপরিভাগে স্থাপন করবে। তারপর মধ্যমার অগ্রভাগ দ্বারা মালার গুটি জপান্তর ক্রমে চালিত করবে। জপের সময় মালাকে তর্জ্জনী এবং কনিষ্ঠা দ্বারা স্পর্শ করবে না। বাম হস্তের দ্বারা সাধারণতঃ মালা জপ করবে না। এক একবার সম্পূর্ণ মন্ত্রটি জপ করে (মনে মনে উচ্চারণ করবে) এক একটি মালার গুটি চালনা করবে। মালার বড় গুটি থেকে জপ আরম্ভ করবে। সাক্ষী লঙ্ঘন করবে না। অর্থাৎ বড় গুটি থেকে জপ করতে করতে শেষে মালার ছোট গুটিতে পৌঁছালে সাক্ষীকে না ডিঙ্গিয়ে মালাকে ঘুরিয়ে ছোটগুটি থেকে পুনরায় জপ করতে করতে বড়গুটি পর্য্যন্ত আসতে হবে। এইভাবে সাক্ষীর নিকটে পৌঁছালেই মালা ঘুরিয়ে নিয়ে জপ করবে।
কাঠিয়া বাবা কৃষ্ণদাসজী মহারাজ প্রণীত ‘নিম্বার্ক সাধন প্রণালী’ থেকে