বিতর্ক বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। ... বিশদ
শ্রীরামকৃষ্ণকে পূজা করলে আপনি শাক্ত হতে বিরত হন না, কারণ আপনার কুলদেবতা যে শক্তি, শ্রীরামকৃষ্ণ সেই শক্তিরই মানববিগ্রহ। শ্রীরামকৃষ্ণের ধ্যান ও তাঁর কাজের জন্যে আপনি দেহধারণ করুন। সর্বান্তঃকরণে তাঁর চিন্তা করে এই জন্মেই বিমুক্ত হন। এ জগতে প্রত্যেক সাধকই শাক্ত। শক্তির আরাধনা করেন না, এমন কে আছেন? শক্তিহীন ঈশ্বরকে কে উপাসনা করেন? তাঁর শক্তিকে বাদ দিয়ে ঈশ্বরকে ধারণা করা যায় না, যেমন মিষ্টতাকে বাদ দিয়ে চিনির ধারণা হয় না।
অগ্নি ও তার দাহিকাশক্তির ন্যায় ঠাকুর ও মা অভেদ।
শ্রীরামকৃষ্ণের ভেতর দিয়ে জগৎপ্রসূতি কালীর আমিত্বই সর্বতোভাবে প্রকাশ পেত। বিশ্বজননী, লীলাময়ী কালীই শ্রীরামকৃষ্ণ-বিগ্রহ ধারণ করে তাঁর অসংখ্য পুত্রকন্যাকে জ্ঞানভক্তি দেবার জন্যে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।
ঠাকুরের সাক্ষাৎ শিষ্যগণের প্রায় সকলেই তাঁর অদর্শনের পর তাঁর দর্শন পেয়েছেন।
মহারাজকে (স্বামী ব্রহ্মানন্দ) ভক্তি করা আর ঠাকুরকে ভক্তি করা একই কথা।
স্বামীজীকে দেখা আর ঠাকুরকে দেখা একই কথা। উভয়ে অন্তরে অভিন্ন, দেহমাত্র ভিন্ন।
বাবু রামদা (স্বামী প্রেমানন্দ) ও ঠাকুর আলাদা নয়। যারা ঠাকুরকে দর্শন করেনি, বাবুরামের দর্শনে তাদের শ্রীশ্রীঠাকুরের দর্শন সিদ্ধ হয়েছে।
ঠাকুর অধিকক্ষণ গেরুয়া কাপড় পরতে পারতেন না, কারণ গেরুয়া কাপড় পরলেই তিনি বাহ্যজ্ঞান হারাতেন ও সমাধিস্থ হতেন।
চরাচর সমস্ত জগৎ মহাকাল-শক্তি কালীর অধীন। এই কালশক্তিই ঈশ্বর। কালশক্তিই সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ের কারণ। এইজন্যে শাস্ত্রকার তাঁকে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিবের জননী বলেছেন। তিনিই ব্রহ্মনামে অভিহিত। শ্রীকৃষ্ণের ভেতর এই মহাকালীর বিকাশ সমাধিক পরিমাণে ছিল, এই কারণে তিনি ঈশ্বরাবতার। যিনি অব্যয়, তিনি পুরুষ ও প্রকৃতিরূপে পরিণত হন। প্রকৃতি বা শক্তি স্রষ্টার হৃদয়ে থাকেন। লক্ষ্মী নারায়ণের হৃদয়ে থাকেন স্রষ্টা বা পুরুষ অনন্ত ব্রহ্মে থাকেন আর ব্রহ্ম আপনাতে আপনি থাকেন। তিনি অনন্ত, তাই তিনি নিষ্ক্রিয়।
বহির্দৃষ্টিতে ঈশ্বর বহু, অন্তর্দৃষ্টিতে তিনি এক। পরিধির দিক হতে ব্যাসার্ধ বহু, কেন্দ্রের দিক হতে এক। সত্যদৃষ্টির সহায়ে দেখলে সত্তা এক ব্যতীত দুই নেই। আপেক্ষিকতার দ্বিক হতে দেখলে একই সত্তা বহুরূপে প্রতিভাত হয়। যে সুখের বিচ্ছেদ নেই, তাকেই ভগবান বলে, আর যে সুখের বিচ্ছেদ আছে তাকে ইন্দ্রিয়পরায়ণতা বলে। ব্রহ্ম নিত্য, দেশকাল নিমিত্তের অতীত, সচ্চিদানন্দ স্বরূপ। জগৎ দেশকালনিমিত্ত হতে জাত ও মিথ্যা। মিথ্যা শব্দের অর্থ—আদিমান ও অন্তযুক্ত, অনিত্য। মিথ্যা অর্থে শূন্য নয়, এই-ই শ্রীমৎ শঙ্করের অনুমোদিত অর্থ ও গ্রাহ্য।
দু’টি পরস্পর-বিরোধী বিন্দুর মিলন-স্থানে ঈশ্বর সর্বদা স্পষ্টতররূপে প্রতীয়মান হন। তিনি আলোকও নন, অন্ধকারও নন, তিনি এই উভয়ের অতীত। ঠিক এদের মিলনস্থান তাঁকে দেখা যাবে। সেইজন্যে দিবা ও রাত্রির সন্ধিসময়ে প্রাতে ও সন্ধ্যায় ধ্যানাভ্যাস প্রশস্ত। মধ্যাহ্নে সূর্য যে সময়ে শিরোপরি বিরাজমান এবং রাত্রির মধ্যকালকেও সন্ধিসময় বলে। মন সন্ধিক্ষণে তার সর্বোচ্চ স্তরে আরোহণ করে।