বিতর্ক বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। ... বিশদ
ভগবানের জন্য ষোল-আনা ত্যাগ করার নাম হচ্ছে সন্ন্যাস। গীতাতে এ-সব কথা আছে। গেরুয়া পরলেই সন্ন্যাসী হয় না; অনেক ত্যাগ তপস্যার দরকার। তোমরা হয়তো বলবে—এত যে সন্ন্যাসী দেখছি, তারা কি সকলেই ভগবানের জন্য ষোল-আনা ত্যাগ করেছে? না—তা করতে পারেনি; তবে এরা চেষ্টা করছে তাঁর জন্য সর্বত্যাগী হতে, তাঁকে মনেপ্রাণে ভালবাসতে। তাঁর দায় হলে এক মুহূর্তে ঠিক ঠিক সন্ন্যাসী হয়ে যেতে পারে। আর দেখ, একটা ভাল উদ্দেশ্য নিয়ে লোকে সন্ন্যাস নেয়। আর কিছু না হোক, সদ্ভাবে জীবনটা কাটিয়ে দিতে চেষ্টা করে, কারো অনিষ্ট করতে যায় না। এটা কি কম কথা! যুবা বয়সই সাধন-ভজনের ঠিক সময়; এ সময়টা আলস্যে কাটিও না, সাধন-ভজন করে তাঁকে লাভ কর, মানুষ হও। যদি সাধন-ভজন না করতে পার, তবে কোন সত্ কাজ কর, কারও অনিষ্ট করো না। পরচর্চা করো না, তার চেয়ে ঘুমান ভাল।
যার সাধু স্বভাব সে কখনও অসাধু ভাব আনতে পারে না। তার মনে কখনও অমন প্রবৃত্তি হয় না। সে কোন কাজ গোপন করে করতে চায় না, যা করে সব প্রকাশ্যে সে নির্ভীক-চিত্ত সিংহের মত দুনিয়ার কাউকেও ভয় করে না। আর কেনই বা করবে? কারো অনিষ্ট করে না, কারো চর্চায় থাকে না, সত্—কপটতা নেই, কেনই বা (ভয়) করবে?
ছেলের বাপ হলেই হল? তোমার যে দায়িত্ব আছে—যে পর্যন্ত ছেলে সাবালক না হয়। ছেলের ভালমন্দ তোমার উপর নির্ভর করছে। বাপ-মায়ের দোষেই ছেলে খারাপ হয়। তারা কি জানে?—যেমন শিক্ষা পাবে, তেমনই হবে। সেজন্য বাপ-মাকে খুব সাবধানে চলাফেরা, কথাবার্তা কইতে হয়। কারণ বাপ-মাকেই ছেলে বেশী নকল করে। ছেলে সাবালক হয়ে গেলে—নিশ্চিন্ত; তখন সে নিজের কর্মের জন্য নিজেই দায়ী, বাপ-মার আর কোন ‘দায়’ থাকে না। কিন্তু এ ঘোর দায়িত্ব কটা লোক বুঝে? ছেলেগুলো কোন প্রকারে খেতে-পরতে পেলেই যথেষ্ট হল—এই ভাল। আরে, মানুষের আকার হলেই কি মানুষ হয়? মানুষের আকারে অনেক দানা-দৈত্যও আছে—পশু আছে। দশটা দানা-দৈত্যের মতো ছেলের চেয়ে একটা ‘মানুষ’ ভাল। ছেলেদের আর দোষ কি? তাদের মানুষ করলে তবে তো মানুষ হবে? ছেলেকে মানুষ করতে হলে বাপ-মাকে আগে মানুষ হতে হবে—তবে হবে। এই দায়িত্ব-জ্ঞান কি অমনি হয়, কত সত্-সঙ্গ করতে হয়, আদর্শ পুরুষদের জীবন দেখতে হয়, কত সব চেষ্টা করতে হয়, তবে হয়। যার এ দায়িত্ব-জ্ঞান আছে সেই মানুষ। আমার ছবি ‘অমুক’ পূজো করছে। তা সে পূজো না করলে আমার আর স্বর্গে যাওয়া হবে না! আমার ছবি পূজা করে কি হবে? তাঁকে (ঠাকুরকে) পূজো কর, যাতে কল্যাণ হবে। ত্রৈলঙ্গস্বামী কত যে কষ্ট (তপস্যা) করেছেন, তা তোমরা কি বুঝবে? তাঁকে যারা ভক্তি-শ্রদ্ধা করে, পূজো করে, তাদের কল্যাণ হবেই। তিনি (ঠাকুর) বলতেন—‘‘ত্রৈলঙ্গস্বামী সব্সে পার। শরীর সাধারণের মতো, কিন্তু কর্ম মানুষের মতো নয়। শিবত্ব প্রাপ্ত হয়েছেন। বিশ্বনাথ আর ত্রৈলঙ্গস্বামী অভেদ।’’
মাস্টার মহাশয় খুব পণ্ডিত লোক; ওঁর দরুন কত লোকের কল্যাণ হয়েছে, আর এখনও হচ্ছে। ‘কথামৃত’ পড়ে কত লোকে ঠাকুরকে জানতে পাচ্ছে। মাস্টার মহাশয়ের বয়স হয়ে আসছে, এখন তাঁর দয়ার শরীর ভাল থাকলেই বাঁচোয়া। এ-সব লোক যতদিন সংসারে থাকে সংসারের কল্যাণ।
সত্লোক অপরের দুঃখ দেখলে দুঃখিত হয়; আর যদি শক্তিতে কুলোয় তো যতটুকু পারে দুঃখ দূর করতে চেষ্টা করে। কিন্তু অসৎলোক অন্যের দুঃখে আনন্দিত হয়, হাসে; বলে—কর্মফলে ভুগছে। জানে না—তারও একদিন অমনি দুঃখ হতে পারে। এ-সব অতি নীচ জীবের কথা। মানুষের ধর্ম হচ্ছে—পরস্পরের দুঃখ দূর করতে চেষ্টা করা, পরস্পরের কল্যাণ কামনা করা। মহাপুরুষদের জীবন দেখলে এ সব বুঝতে পারবে।