বিতর্ক বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। ... বিশদ
ভগবানের কোন ভাবই মন্দ নয়, এই-ই প্রভু রামকৃষ্ণের ভাব। সমস্ত ভাবের জমাটবাঁধা শ্রীরামকৃষ্ণ। প্রভু তাঁর দিব্যধামে দিব্যশরীরে সর্বদাই বর্তমান আছেন। মহারাজ ও তাঁর অন্যান্য ভক্তগণ যাঁরা স্থূলদেহ ত্যাগ করে গেছেন, সকলেই সেই দিব্যধামে, দিব্যশরীরে সর্বদাই বর্তমান আছেন, এতে আর কোন সন্দেহ নাই। সেই মা কালীই ঠাকুররূপে এসেছিলেন। স্বয়ং আদ্যাশক্তি, সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আধারভূতা সেই জগজ্জননী স্বয়ং ঠাকুরের দেহ আশ্রয় করে লীলা করেছেন।
‘রামকৃষ্ণ’ এ-যুগের ডঙ্কামায়া নাম, মহামন্ত্র। সব সময়—চলতে ফিরতে, খেতে শুতে, স্বপনে জাগরণে, সর্বাবস্থায়ই জপ করা চলে। এ যুগে ঠাকুরের নাম করলেই মুক্তি। এ যুগে মা ‘রামকৃষ্ণ’ নামে অধিক প্রসন্না। প্রভুর লীলাস্থল দক্ষিণেশ্বর—আমাদের কৈলাস, আমাদের কাশী, আমাদের বৈকণ্ঠ, আমাদের গোলোক, জারুজালেম। পঞ্চবটী মহাসিদ্ধ পীঠ। দক্ষিণেশ্বরের প্রতি ধূলিকণা পবিত্র। স্বয়ং শ্রীভগবানের পাদস্পর্শে দক্ষিণেশ্বর মহাতীর্থে পরিণত হয়েছে! এখানে সকল তীর্থের সমাবেশ। দক্ষিণেশ্বর তীর্থরাজ। ঠাকুর ত সব জায়গায় আছেন, কিন্তু মঠে (বেলুড় শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ) তাঁর বিশেষ প্রকাশ। বেলুড়মঠে ঠাকুর সাক্ষাৎ বিরাজ করেন। তাঁর ছবি শুধু ছবি মাত্র নয়, তিনি ছবিতেও আছেন। বেলুড়মঠ এ যুগের মহাতীর্থ, সাক্ষাৎ কৈলাসপুরী। সমস্ত সংঘের মাথা। বহুলোকের কল্যাণের জন্যে ভগবান, যিনি পরব্রহ্ম, তিনি এই রামকৃষ্ণ-রূপ ধরে এ যুগে এসেছেন। তুমি যখন সেই যুগাবতারের আশ্রয়ে এসেছ, তখন ভাবনা কি?
রামকৃষ্ণ-নাম ও শ্রীরামকৃষ্ণ-রূপই তাঁর সেই নামরূপাতীত শান্তিময় অবস্থায় নিয়ে যায়। নাম রূপের পারেই তো যেতে হবে।
ঠাকুরই দুর্গা, ঠাকুরই কালী, ঠাকুরই রাম, কৃষ্ণ, শিব; আবার ঠাকুরই সেই নির্বিশেষ শুদ্ধ চৈতন্য। প্রভু জগতে এসেছেন, যে রূপেই হোক, জগতের কল্যাণ হবে। তিনি আমাদের দয়া ও প্রেমের ঠাকুর। প্রেমই তাঁর কল্যাণ-রূপের প্রকাশ ভাব।
আমরা জানি যে ঠাকুরই স্বয়ং সনাতন ব্রহ্ম।
জগদম্বার জীবন্ত বিগ্রহ শ্রীরামকৃষ্ণকে ঠিক ঠিক জানা হলেই সব জানা পাওয়ার শেষ হবে। প্রভুই এ যুগে সত্য অবতার। সত্য যুগধর্মসংস্থাপক, যুগাচার্য। তিনি সর্বদেবীর সমষ্টি। তিনি পূর্ণব্রহ্ম নারায়ণ। সনাতন বৈদিক ধর্ম লোপ হয়ে গেলে জগতের আধ্যাত্মিকতাই নষ্ট হয়ে যাবে, তাই সনাতন ধর্মকে রক্ষা করতে ভগবান অবতীর্ণ হলেন রামকৃষ্ণরূপে। ঈশ্বর-অবতারের কাজে অসম্ভব সম্ভব হয়। তাঁর মধুর জীবন্ত মূর্তিই জীবের ধ্যেয়, তাঁর পবিত্র চরিত্র পাঠ ও আলোচনাই শাস্ত্রাধ্যয়ন, তাঁর নামগুণ গান করাই কীর্তন ও তাঁর ভক্তসঙ্গই সাধুসঙ্গ। আমার পূর্ণ বিশ্বাস, যিনি শ্রীরামকৃষ্ণচরণে আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁর এ ভবসাগর পার হবার আর চিন্তা নেই। তাঁর শ্রীচরণে কাতরে প্রার্থনা করলে মনের সব অজ্ঞানতা দগ্ধ হয়ে যায়। ‘বালানাং রোদনং বলম্’। যে কাতরে প্রার্থনা করবে, তাকেই তিনি দয়া করে থাকেন। ভক্তি হলে মুক্তি-টুক্তি সব হয়।
‘যার শেষ জন্ম, সে এই ঘরে আসবে’—এর অর্থ যে কায়মনোবাক্যে অন্তরের সহিত শ্রীরামকৃষ্ণের অবতারত্বে বিশ্বাস করে, সেই তাঁর ঘরে আসে, তারই শেষ জন্ম। তার বিশ্বাস, ভক্তি, জ্ঞান, মুক্তির কোন অভাব হবে না—আমি খুব জোরের সঙ্গে একথা বলছি। যদি কোন ভক্তের দীক্ষা বা সন্ন্যাস গ্রহণের পর অসদাচার দৃষ্টিগোচর হয়, আপাতদৃষ্টিতে তা খুব খারাপ। কিন্তু আমার বিশ্বাস যে, যদি ঠিক ঠিক শ্রীরামকৃষ্ণের অবতারত্বে সে বিশ্বাস করে থাকে, তা হলে কোন সময় তার অনুতাপ আসবেই আসবে। যদি অনুতাপ দুর্ভাগ্যবশত না আসে, তবে জানতে হবে যে, তার পূর্বোক্ত বিশ্বাস নেই, এবং শেষ জন্মও নয়।