বিতর্ক বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। ... বিশদ
পূর্ব্বেও বলা হইয়াছে, ঈশ্বর ও মানবের মধ্যে সম্বন্ধ স্থাপনের বৈদিক উপায় হল যজ্ঞ। পূজানুষ্ঠান তন্ত্রশাস্ত্রের নিজস্ব সম্পদ্। যুগ-যুগ ধরিয়া এই অনুষ্ঠানটিকে ভারতীয় ধর্ম্মের প্রায় সকল সম্প্রদায়ই গ্রহণ করিয়াছেন। পূজায় দুইটি বস্তুর প্রাধান্য, মন্ত্র ও উপচার। এই নিবন্ধে কেবলমাত্র উপচারের কথাই বলিব। যে সকল উপচার দ্বারা যেভাবে ঐ কার্য্যটি অনুষ্ঠিত হয় তারা সংক্ষেপে আলোচনা করিব। মন্ত্র-রহস্য বা প্রয়োগবিধি বলা সম্ভব নহে।
পূজার বাহ্য ও আন্তর দুইটি দিক্। উভয়েরই মূল্য সমান। কাহারও কাহারও ধারণা, বাহ্য-পূজা হইতে মানস-পূজা শ্রেষ্ঠ এবং নিম্নাধিকারীই বাহ্যপূজা করিবে। এই ধারণা ঠিক নহে। মূলতঃ বাহ্য-পূজাই পূজাপদবাচ্য। বাহ্য-পূজায় অসমর্থ ব্যক্তিকেই মানসপূজা করিতে বলা হইয়াছে। বাহিরে পূজা ত্যাগ করিয়া অন্তরের পূজা বিধি নহে। বস্তুতঃ অন্তর বাহির দুই মিলিয়াই সমগ্র পূজা। মানবদেহের যেমন হস্ত-পদাদি অঙ্গ, প্রাণশক্তি অঙ্গী। পূজারূপিণী দেবী-দেহেরও সেইরূপ মন্ত্রোচারণ-পূর্বক উপচার সমর্পণ হইল অঙ্গ, অন্তরে অনুরাগ হইল অঙ্গী। এই নিবন্ধে প্রধানতঃ অঙ্গের কথাই বলিব। বহুদিন যাহার আশাপথ চাহিয়া আছি, এইরূপ কোন অতীব প্রীতির পাত্র, অথচ মর্য্যাদাসম্পন্ন নিতান্ত নিজজন যদি আমাদের গৃহে আসিয়া উপনীত হন, তাহা হইলে আমরা তাঁহাকে যেভাবে গ্রহণ করি, সেই ভাবটি লইয়াই দেবতার পূজা। উপচার সকলও সেই ভাব লইয়াই নির্ণীত হইয়াছে। ঈশ্বর আমাদের কত আপন জন, কত প্রেমের পাত্র, অথচ তিনি কত বিরাট বস্তু। আজ তিনি আমাদের দুয়ারে নামিয়া আসিয়াছেন, তাঁহার দিব্যধাম হইতে। তাঁহাকে সম্মান করিতে হইবে, সংবর্ধনা করিতে হইবে, পরম যত্নে সেবা করিতে হইবে। আমাদের নিজের যেরূপ স্নান, আহার, বিশ্রাম প্রয়োজন তাঁহারও সেই রকমই দরকার—এই বোধে আত্মবৎ পরিচর্য্যা তাহাই পূজার প্রধান দিক। সকল দেবতার পূজার অঙ্গই মূলতঃ একপ্রকার। পূজায় যদি মহাস্নান থাকে, বলি-হোম থাকে, তাহা হইলে সেই পূজাকে মহাপূজা কহে। আমাদের শারদীয়া দুর্গোৎসব একটি মহাপূজা। পূজার সময় আমরা অনেকেই পুরোহিতের উপর পূজার ভার ন্যস্ত করিয়া নিজেরা অন্য কার্য্যে ব্যাপৃত থাকি, পূজামণ্ডপে বসিয়া মহাস্নান হোমাদি দর্শন করি না। দর্শন করিলে অনুভব করিতে পারা যায়, ঐ সকল অনুষ্ঠান কত বিচিত্রতাময় গম্ভীরার্থদ্যোতক। মায়ের মহাপূজার কথাই বলিব।
পূজার উপচার সামর্থ্যানুসারে পঞ্চবিধ, দশবিধ ও ষোড়শবিধ হইতে পারে। মহাপূজায় ষোড়শোপচারই বিধি। বিভিন্ন গ্রন্থোক্ত নির্ঘণ্টা উপচারগুলির নামে অল্পবিস্তর পার্থক্য দৃষ্ট হয়। মহানির্বাণতন্ত্রে ষোড়শ উপচারের নাম নিম্নরূপ—
‘‘আসনং স্বাগতং পাদ্যমর্ঘ্যমাচমনীয়কম্।
মধুপর্কং তথাচম্যং স্নানীয়ং বস্ত্রভূষণৈঃ।।
গন্ধপূষ্পে ধূপদীপে নৈবেদ্যং চন্দনং তথা।
দেবার্চ্চনাসু নির্দ্দিষ্টা উপচারশ্চ ষোড়শ।।’’
মহানামব্রত ব্রহ্মচারীর ‘চণ্ডী চিন্তা’ থেকে