খরচের চাপ এত বেশি থাকবে সে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। কর্মক্ষেত্রে নানান সমস্যা দেখা ... বিশদ
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারিখটা ভারতের ইতিহাসে কালো কালিতে লেখা রয়েছে। চিরকাল থাকবে। শুধু গণধর্ষণ নয়, প্যারামেডিক্যালের ওই ছাত্রীর উপর বাসের মধ্যে অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছিল ছয় দুষ্কৃতী। যুবতীর শরীর এবং মন নৃশংসভাবে ক্ষতবিক্ষত করে রাস্তায় মৃত্যুর জন্য ফেলে দিয়েছিল তারা। ব্যাপক প্রহার করা হয়েছিল তাঁর বন্ধুটিকেও। এই একটি ঘটনা আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল ভারতজুড়ে। প্রতিবাদে পথে নেমেছিল গোটা দেশ। দুষ্কৃতীদের ফাঁসির দাবিতে সওয়াল করেছিল আট থেকে আশি। প্রশ্ন তুলেছিল, এতটুকু সামাজিক নিরাপত্তা কি সরকার আমাদের বাড়ির মেয়েদের দিতে পারে না? কেন্দ্র বাধ্য হয়েছিল আইনে বদল আনতে। ধর্ষণেও ফাঁসি হতে পারে... নিশ্চিত করেছিল আমাদের আইন ব্যবস্থা। শুধু তাই নয়, নাবালককেও অপরাধ বিচারে সাবালকের মতো বিচারের আওতায় আনার নিদান দিয়েছিল আইন।
কিন্তু দোষীদের সাজা দেখে যেতে পারেননি নির্ভয়া। সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত হার মেনেছিলেন তিনি। তবে পরাজয় স্বীকার করেননি তাঁর মা আশা দেবী। আদালতের অলিন্দে দাঁড়িয়ে বছরের পর বছর যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। একের পর এক প্রাণভিক্ষার আবেদন জানিয়েছে ধর্ষণকারীরা। আইনকে কাজে লাগিয়ে আইন ব্যবস্থার সঙ্গেই দিনের পর দিন প্রতারণা করেছে। ফাঁসির দিন এগিয়ে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা... তারপরই আর একটি আবেদন। রাষ্ট্রপতি, সুপ্রিম কোর্ট, কিংবা দিল্লি হাইকোর্ট। আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হওয়ারও চেষ্টা করেছে। সুপ্রিম কোর্টকে বাধ্য করেছে বৃহস্পতিবার শেষ রাত পর্যন্ত শুনানি করার। সেখানে ওই ধর্ষণকারীদের আইনজীবী আর্জি জানিয়েছেন, ওদের পাকিস্তান বা চীন সীমান্তে পাঠিয়ে দিন। কিন্তু ফাঁসি দেবেন না। আদালত শোনেনি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ রায় দিয়েছে, ফাঁসি হবে। দু’ঘণ্টা পরেই। আর সেটাই হয়েছে। শাস্তি হয়েছে দোষীদের। বিচার পেয়েছেন নির্ভয়া।
কেন এই নাম তাঁর? পিতৃদত্ত নাম তো নয়! এই নাম দিয়েছিল দেশবাসী। পিছু না হটে অসম লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা কষে যেভাবে তিনি দেশবাসীকে সচেতন এবং প্রতিবাদী হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, তা কুর্নিশ করার মতো। তাই মৃত্যুর পরও প্রত্যেক নারীর মধ্যে বেঁচে আছেন তিনি। প্রতিবাদের নাম হিসেবে। কঠোর আইনের নেপথ্য লক্ষ্য ছিল একটাই, সমাজ থেকে এই অপরাধকে দূর করা। যা আজও হয়নি। এখনও দেশের প্রত্যেক প্রান্তে ধর্ষিতা হন আমাদের কারও মা, বোন, স্ত্রী। কারণ ঘুণপোকা ঢুকে পড়েছে সমাজের মননে। কুরে কুরে ঝাঁঝরা করে দিয়েছে সমাজকে। এই দায় পুরুষতান্ত্রিক সমাজের। ঔদ্ধত্যের। অবজ্ঞার। আমরা মুখে নারীদের সমানাধিকারের কথা বলব, অথচ কাজের বেলায় শুধুই দ্বিচারিতা। ভারতের সংস্কার এটা নয়। কিন্তু অপ্রিয় সত্যের মতো তাই সমাজের মধ্যে তা অসুরের মতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বদল চাই। ভাবনায়। শিক্ষায়। সেটা শুরু করতে হবে বাড়ি থেকে। সন্তানকে ছেলেবেলা
থেকে আমরা কী শিক্ষা দিচ্ছি, সেটাই আসল। নারী সমাজকে সম্মান
করার শিক্ষা আমরা যদি তাকে দিতে পারি, তাহলেই সে ভবিষ্যতে হবে সুনাগরিক। না হলে?
বারবার জন্ম নিতে হবে নির্ভয়াদের। অকালে ঝরেও যেতে হবে।