খরচের চাপ এত বেশি থাকবে সে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। কর্মক্ষেত্রে নানান সমস্যা দেখা ... বিশদ
আগামীকাল, রবিবার, ২২ মার্চ ভারত জুড়ে এই জনতা কার্ফু পালনের ডাক দিয়েছেন মোদি। করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পরীক্ষামূলকভাবে এটা কার্যকর করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ওইদিন কেউ বাইরে বেরবেন না। প্রতিটি রাজ্য সরকারকেও তিনি এই কাজ সফল করতে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে বলেছেন। মোদি বলেছেন, ভারত এই লড়াইয়ে কতটা সক্ষম সেদিন তারও একটি পরীক্ষা হবে। একইসঙ্গে ওই দিন বিকেল পাঁচটায় পাঁচ মিনিট ধরে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সাধুবাদ জানানো হবে সেইসব মানুষকে, যাঁরা করোনার থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করার জন্য সেবা ও সংগ্রাম চালাচ্ছেন।
এই ধরনের পদক্ষেপের বিশেষ কয়েকটি কারণ উল্লেখযোগ্য— প্রথমত, করোনা ছড়ানোর মাধ্যমগুলি এতই সহজ যে, এটা গুণিতকের হিসেবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। দুই থেকে চার, চার থেকে আট, আট থেকে ষোল, এই রকম বা তার চেয়েও বেশি। এতে প্রথম পর্যায়ে বিরাট কোনও অসুস্থতা চোখে পড়ছে না, যাতে একজন আক্রান্ত হলেই শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। তাই বাইরে ঘোরাঘুরি করলে, তাঁর সংস্পর্শে এলে অন্যদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণ। দ্বিতীয়ত, রাজ্যে বা দেশে একসঙ্গে বহু লোক আক্রান্ত বা রোগীর সংস্পর্শে এলে তাঁদের কোয়ারেন্টাইনে বা আইসোলেশনে রাখার মতো চিকিৎসা কাঠামো নেই। তাই নিজেকে এই রোগ থেকে দূরে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। তৃতীয়ত, আমরা এখন প্রাদুর্ভাবের দ্বিতীয় পর্যায়ে আছি, এটা তৃতীয় বা চতুর্থ ধাপে যাওয়ার অর্থ হল দলে দলে মানুষের আক্রান্ত হওয়া অথবা তাঁদের মধ্যে কারো কারো বা বেঘোরে মৃত্যু। তখন হয়তো চিকিৎসা দেওয়ার মতো লোকও জুটবে না। তৃতীয়ত, চিকিৎসা খরচ সহ অন্যান্য খরচ কমাতে নিজেদের গৃহবন্দি করে রাখাও এই সঙ্কটকালীন পরিস্থিতিতে একান্ত কাম্য।
সেই কারণে প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, হাসপাতালগুলিতে চাপ কমাতে দেশবাসীকে অনুরোধ করা হচ্ছে, রুটিন চেক আপ অথবা নিয়ন্ত্রণে থাকা রোগের চেক আপ থেকে বিরত থাকুন। তিনি এও বলেছেন, আমি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যদ্রব্য নিয়ে
কোনও সঙ্কট হবে না। তাই অযথা মজুতদারি করবেন না। দেশে প্রচুর খাদ্যপণ্য রয়েছে। আতঙ্কে কেনাকাটা বাড়িয়ে দেবেন না। তাতে আরও সঙ্কটের সৃষ্টি হবে।
এই অবস্থায় দেশবাসীকে শপথ নিতে হবে যে, আমরা আমাদের কর্তব্য পালন করব। আমাদের সঙ্কল্প নিতে হবে, আমরা সংক্রমিত হব না এবং কাউকে সংক্রমিতও করব না। প্রধানমন্ত্রীর আর্জি, এরকম সময়ে একটাই মন্ত্র, আমরা সুস্থ থাকব এবং সকলকে সুস্থ রাখব। তাই সরকার সতর্কতা জারি করে বলেছে, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া আগামী কিছুদিন কেউই অযথা বাইরে বেরনোর চেষ্টা করবেন না। চাকরি, ব্যবসা কাজ যাই করুন চেষ্টা করুন ঘরেই থাকতে। জরুরি পরিষেবা বাদ দিয়ে সকলেই ঘরে থাকুন।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণকে ধরেই বলা যায়—এই মুহূর্তে ভারতের প্রতিটি নাগরিকের উচিত সরকারের পাশে এসে দাঁড়ানো। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন যে, মানুষ যদি স্বেচ্ছাবন্দি হবেন, তাহলে তাঁরা খাবেন কী? আবার এটাও তো ঠিক যে, বেঘোরে যদি প্রাণটাই চলে যায়, তাহলে মুণ্ড গেলে খাবটা কী? ভারতীয়দের যে খাদ্যাভ্যাস তাতে কয়েকদিনের মতো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ভাঁড়ার কমবেশি অনেকের ঘরেই থাকে। আপাতত, তাই দিয়েই চলুক না! আর জনতার কার্ফু দিনটিকে বাদ দিলে অন্য দিনগুলিতে সব দোকানপাট তো আর বন্ধ থাকছে না। তাই কেনাকাটার সুযোগও থাকছে। সুতরাং, হোক পরীক্ষা, সফল হোক জনতা কার্ফু। কারণ, এটাই এখন বাঁচার লড়াই।