খরচের চাপ এত বেশি থাকবে সে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। কর্মক্ষেত্রে নানান সমস্যা দেখা ... বিশদ
২০০১ সালে লন্ডনে এক বিজ্ঞান সম্মেলনে দেশের প্রধান বিজ্ঞান উপদেষ্টা স্যর উইলিয়াম স্টুয়ার্ট বলেছিলেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ছিল রাসায়নিক, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিল পারমাণবিক এবং তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে জৈবিক। এই প্রসঙ্গে অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের মন্তব্যও স্মরণ করা যেতে পারে। তিনি বলেছিলেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কী দিয়ে হবে, আমি তা সঠিকভাবে বলতে পারব না। কিন্তু চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধ হবে লাঠি এবং পাথর দিয়ে। অর্থাৎ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে যে মানব সভ্যতার আধুনিকতা ধ্বংস হয়ে যাবে, সেই ইঙ্গিতই মিলছে আইনস্টাইনের বক্তব্যে। অর্থাৎ সব হারিয়ে মানুষ আবার নতুন করে সবকিছু শুরু করবে।
এর জন্য দায়ী আমরাই। এই বিশ্বকে নিজের আধিপত্যবাদ দিয়ে আমরা বারবার মূর্খের মতো বাঁধতে চেয়েছি। এই মূর্খতাই মানুষের বিনাশের কারণ হয়ে উঠবে একদিন। সে নিজেই হয়ে উঠবে তার ধ্বংসের কারণ। আজ এই করোনা ভাইরাস যেন সেই জৈব অস্ত্র হয়ে মানুষের অস্তিত্বের মুখে বড় প্রশ্ন এঁকে দিয়েছে। এখান থেকে হয় মানুষ নতুন করে লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে, অথবা তার অনেকটাই ধ্বংস হয়ে যাবে। করোনা যেভাবে দেশে-বিদেশে ছড়াচ্ছে, তাতে আমরা স্পষ্টতই বুঝতে পারছি, নিজেদের অসহায়তার কথা। উইল স্মিথ অভিনীত ‘আই অ্যাম লেজেন্ড’ ছবিটি যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা স্মরণ করতে পারবেন, সেই মানবহীন নিউ ইয়র্ক শহরটির কথা। ক্যানসার রোগ সারানোর যে টিকা আবিষ্কার করা হয়েছিল, তার ভাইরাসে বিশ্বের ৯০ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আর বাকি মানুষরা পিশাচ হয়ে গিয়েছে। তারা আলো সহ্য করতে পারে না। তারা কাঁচা মাংস খায়। মানুষও তাদের ভক্ষ্য। এই অবস্থা থেকে মানব-সভ্যতাকে ফিরিয়ে আনার লড়াই চালান মার্কিন সেনা দপ্তরের ভায়রোলজিস্ট রবার্ট নেভিল। অসাধারণ এক সিনেমা। আজ এই করোনা আতঙ্কের মুখে দাঁড়িয়ে সারা বিশ্বের যে ছবি দেখছি, তা ওই সিনেমার মতোই। জনমানব শূন্য। নাগরিক সভ্যতা আজ কাঁপছে, মানুষ আজ ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে। আগামী প্রজন্ম কোনদিকে যাবে, সবটাই অনিশ্চিত। ভেঙে পড়েছে সারা বিশ্বের অর্থনীতি। ব্যবসা-বাণিজ্য, পণ্য রপ্তানি, আমদানি, মানুষের দেশান্তরে গমন, সব বন্ধ। এক করোনাতেই থরহরি কম্পমান! মানুষ বিরাট শক্তিমান, এই অহঙ্কারের মুখে ঝামা ঘষে করোনা বারবার মানুষকে বুঝিয়ে দিচ্ছে এত অহঙ্কার করো না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমাদের দেশ দেখেছিল দুর্ভিক্ষ। শহরের রাজপথে মৃতদেহের সারি। ‘ফ্যান দাও মা’ বলে চিৎকার। তার পাশাপাশি কিন্তু একদল মানুষ কালোবাজারির মাধ্যমে ফুলে ফেঁপে উঠেছিল। আজ যখন চারিদিকে আতঙ্ক বাড়ছে, তখন শুরু হয়ে গিয়েছে হোর্ডিং এবং কালোবাজারির একটা ট্রেন্ড। অভিযোগ উঠেছে তার প্রথম পদক্ষেপ দেখা গেল কেন্দ্রীয় সরকারের কাজে। তেলের দাম যখন সারা বিশ্বে করোনা আতঙ্কে কমে গিয়েছে, তখন আমাদের দেশের সরকার তেলের দাম বাড়িয়ে তার ভাঁড়ারে প্রচুর টাকা তুলে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একে তো সরকারের কোষাগার ভাঁড়ে মা ভবানী। সেই দুরবস্থা কাটাতে সরকার এই মুহূর্তটাতেই বেছে নিল। তাহলে আর অসৎ ব্যবসায়ীদের সরকার বাঁধবে কোন নৈতিকতার দড়িতে? হে রাম, এরা জানে না, এরা কী ভুল করছে!
কাল কী হবে আমরা জানি না। আজ আমাদের লড়াই জারি থাকুক। সঙ্ঘবদ্ধ লড়াইয়ে মানুষ আবার ঘুরে দাঁড়াবেই। অন্যায় থাকবে,
অসৎ থাকবে। পাশাপাশি সৎ থাকবে, সজ্জন থাকবে। আবার
লড়াকু মানুষও থাকবে।