খরচের চাপ এত বেশি থাকবে সে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। কর্মক্ষেত্রে নানান সমস্যা দেখা ... বিশদ
প্রশ্ন ফাঁস হলে সরকারের মুখে কালি পড়ে। শিক্ষা ও পরীক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে খুব সহজেই আঙুল তোলা যায়। আর প্রশ্ন ফাঁসের জেরে সেই পরীক্ষা বাতিল হলে ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদের ক্ষোভের আগুনে ঘি পড়ে। কারণ মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত থাকে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ পরিবার। তাই পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন বেরিয়ে গেলে সরকারকে ভয়ঙ্কর বিব্রত হতে হয়। বাম জমানায় এরাজ্যের পরীক্ষার্থীদের সেই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে বার বার। রাজ্যের ক্ষমতা বদলের পরেও সেই চেষ্টায় ছেদ পড়েনি। পরীক্ষা কেন্দ্রের পাঁচিল বেয়ে টুকলি সরবরাহের ছবি বেশ কয়েকবার ফুটে উঠেছে টিভির পর্দায়। এতে শুধু সরকারই কালিমালিপ্ত হয় না, পরীক্ষার্থীদের মনোবলেও চিড় ধরে। অথচ এর জন্য দায়ী সেই পরীক্ষার্থী এবং পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত কিছু শিক্ষক।
সভ্যতা ও বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বদলে গিয়েছে প্রশ্ন ফাঁসের ধরন। এখন আর আগের মতো ছাপাখানা থেকে প্রশ্নপত্র বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা তেমনটা ঘটে না। এখন মোবাইলের যুগে প্রশ্ন ফাঁস হয় হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে হোয়াটসঅ্যাপে ছেড়ে দিতে পারলেই কেল্লা ফতে। সেই কারণেই রাজ্য সরকার এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ কিছু কড়া ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে। রাজ্যজুড়ে প্রায় শ’তিনেক সেন্টারকে চিহ্নিত করা হয়েছে যাদের টোকাটুকি এবং প্রশ্ন ফাঁসের ক্ষেত্রে ‘সুনাম’ আছে। সেই সব সেন্টারে মোবাইল নিয়ে পরীক্ষার্থীদের প্রবেশ ঠেকাতে হ্যান্ডহেল্ড মেটাল ডিটেক্টরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে পরীক্ষা চলাকালীন বেশ কয়েকটি জেলার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এমনকী, যে সেন্টার টোকাটুকি ঠেকাতে ব্যর্থ হবে সেই স্কুলের অনুমোদন পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হতে পারে।
প্রশ্নটা হচ্ছে, পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে এমন কড়া পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন হল কেন? পরীক্ষা তো ছাত্রদের ভবিষ্যৎ গড়ার গেটওয়ে। ছাত্রছাত্রীরাই তো ভবিষ্যৎ সমাজ গড়ার কারিগর। তাদের কাছে মূল্যবোধটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই মূল্যবোধ গড়ে তোলার সব চেয়ে বেশি দায়িত্ব অভিভাবকদেরই,
দায়িত্ব রয়েছে শিক্ষকদেরও। কোনও ছাত্র যদি ভুল করে তাহলে অভিভাবকের উচিত, তার পাশে না দাঁড়িয়ে সেই ভুলটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া। তাকে সংশোধনের চেষ্টা করা। অথচ বহু ক্ষেত্রেই ঘটে ঠিক
তার উল্টোটা। কিছু অভিভাবক তাঁর সন্তানকে নির্দোষ প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগে যান। এমনকী, নকল করার দায়ে টেস্টে অকৃতকার্য
সন্তানকে ফাইনাল পরীক্ষায় বসানোর জন্য অভিভাবককে আদালত পর্যন্ত দৌড়তেও দেখা গিয়েছে। এই মানসিকতার বদল খুবই জরুরি। মনে রাখতে হবে, আজ সাময়িক লাভের জন্য সন্তানের অন্যায়কে সমর্থন করলে ভবিষ্যতে সন্তানের অন্যায় কাজের শিকার হতে হবে তাঁকেই। তাই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মূল্যবোধ গড়ে তোলাটা অভিভাবকের আশু কর্তব্য। সেটা ঠিকঠাক ভাবে করতে পারলেই পরীক্ষাকে ঘিরে এই সমস্ত অবাঞ্ছিত ঝঞ্ঝাট ঠেকানো যাবে। শুধু আইন করে তা সম্ভব নয়। আইন করে বড়জোর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।