সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক। কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার বা ... বিশদ
এ থেকেই বোঝা যায়, জালনোটের কারবার গুজরাতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লেও পশ্চিমবঙ্গ কিন্তু উদ্বেগজনক জায়গাতেই রয়েছে। বারবার তদন্তে যে দুশ্চিন্তার বিষয়টি উঠে এসেছে, তা হল, ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন দাউদের সিন্ডিকেটের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাকিস্তানের ছাপাখানায় দিস্তা দিস্তা জাল নোট ছাপিয়ে তা ভারতের বাজারে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। ভারতীয় অর্থনীতিকে ধ্বংস করতে তারা বেছে নিয়েছে জম্মু-কাশ্মীর, পাঞ্জাব, রাজস্থান, গুজরাতের মতো রাজ্যের সীমান্তকে। এসব ব্যাপকভাবে চলার প্রবণতায় রাশ টানতেই মোদি সরকার নোটবাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে কারবারিরা নতুন দু’হাজার টাকা নোটের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যগুলি নকল করার ব্যাপারে সমস্যায় পড়লেও ধীরে ধীরে যা খবর পাওয়া যাচ্ছে, তা কোনওমতেই স্বস্তির নয়।
সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, যে কাগজের উপর দু’হাজার টাকার নোট ছাপা হচ্ছে, সেটি ইদানীং তৈরি হচ্ছে থাইল্যান্ডে। এর বৈশিষ্ট্য এমনই যে আসন-নকল তফাৎ করা খুবই কঠিন। একইসঙ্গে তারা যে কালি ব্যবহার করছে, তাও খুবই উন্নত মানের। সব মিলিয়ে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেটিং এজেন্সি (এনআইএ), স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) প্রভৃতি ওজনদার এবং বাঘা বাঘা তদন্তকারী সংস্থার চোখে ধুলো দিয়ে জাল নোটের উৎপাদন, বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে তা ঢুকিয়ে বৈষ্ণবনগর, মালদহের কালিয়াচক প্রভৃতি জায়গার মাধ্যমে রাজ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজও সমানতালে চলছে। আর সেই কারণেই বোধহয় সাম্প্রতিককালে খাস কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলার নিউ মার্কেট, ময়দান প্রভৃতি এলাকা থেকে একের পর এক জাল নোটের কারবারি ধরা পড়েছে। তাদের প্রায় সবার কাছ থেকেই উদ্ধার হয়েছে মোটা অঙ্কের জাল নোট। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আবার তা দু’হাজারি নোট।
আরও একটি ঘটনা সম্প্রতি উৎকণ্ঠা বাড়িয়েছে। কলকাতা পুলিসের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স একটি বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির কারখানার হদিশ পায়। উদ্ধার হয় বেশ কয়েকটি নাইনএমএম পিস্তল। কিন্তু তদন্তে এই ঘটনার সঙ্গে জাল নোটের কারবারিদের সংযোগও প্রকাশ্যে চলে আসে।
সব মিলিয়ে জাল নোটের কারবারিরা কিন্তু তাদের সাম্রাজ্য বাড়িয়েই চলেছে। তদন্তকারীদের বিপথে পরিচালিত করতে নিত্যনতুন প্রযুক্তিও তারা আবিষ্কার করছে। দারিদ্র্য, বেকারত্ব প্রভৃতির সুযোগ নিয়ে আপাত নিরীহ অল্পবয়সি ছেলেদের ক্যারিয়ার হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে। কারণ, একদিকে যেমন খুবই কম পয়সায় এদের দিয়ে কাজ করানো যাচ্ছে, তেমনি এই লাইনে তেমনভাবে পরিচিত না হওয়ায় এদের দিয়ে কাজ করানোও অনেক সহজ হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ এর সঙ্গে সামাজিক অবক্ষয়ও জড়িয়ে পড়ছে।
সামগ্রিকভাবে এর মোকাবিলায় যে বড়সড় পদক্ষেপ করা জরুরি, সে ব্যাপারে সকলেই একমত। আর সেই লক্ষ্যেই এই মাসে দিল্লিতে ডাকা হয়েছে জরুরি বৈঠক, যাতে কেন্দ্র এবং রাজ্যের সমস্ত এজেন্সিকে হাজির থাকার কথা বলা হয়েছে। বৈঠক এর আগেও অনেক হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। কিন্তু আপাতত যা পরিস্থিতি, তাতে সমস্যার একেবারে মূলে গিয়ে তার শিকড় উপড়ে ফেলার মতো সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং সেইমতো পদক্ষেপ করতে হবে। নাহলে জঙ্গি কার্যকলাপের মতোই আগামীদিনে ভয়াবহ চেহারা নেবে এই জালনোটের রমরমা।