সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক। কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার বা ... বিশদ
টেক্সাসে সপ্তাহান্তের ওয়ালমার্টে থিকথিকে ভিড়। সেখানে হঠাৎই ঢুকে পড়ল এক বন্দুকবাজ। তার এলোপাথাড়ি গুলি প্রাণ কেড়ে নিল ২০ জনের। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই ঘটে গিয়েছে এমনই এক মর্মান্তিক ঘটনা। টেক্সাস থেকে প্রায় বারোশো কিলোমিটার দূরে ওহায়োতে। সেখানেও অপর এক বন্দুকবাজের গুলিতে প্রাণ গিয়েছে অন্তত ৯ জনের। চলতি বছরে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে মোট এগারোটি। এবং এতে প্রাণ গিয়েছে অন্তত আড়াইশো জনের। ক্যালিফোর্নিয়া, ভার্জিনিয়া, কলোরাডো, ক্যারোলিনা, ইলিনয়, ফ্লোরিডা, লুসিয়ানিয়া সর্বত্রই সজাগ বন্দুকবাজরা। গত বছরে এই ধরনের ঘটনায় মোট ৩৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০১৭ সালে এই ধরনের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল আড়াইশো জনেরও বেশি। দেখা যাচ্ছে এই হিংসা ক্রমেই প্রসারিত।
অনেকেই বলছেন, এই হিংসার উদ্গাতা নাকি স্বয়ং ট্রাম্প। তাঁকে অনেকেই বলেন ‘শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী’। তিনিই আজকের সমাজের মধ্যে উগ্র জাতীয়তাবাদের বীজ বপন করছেন বলে অভিযোগ তুলে সোচ্চার সেদেশের অনেকেই। যার ফলেই নাকি মার্কিন নাগরিকদের তরুণ প্রজন্মের মনে আজ এত অসূয়া, হিংসা, অভিমান। বর্ণবিদ্বেষের ঘৃণা আবার তাঁদের মধ্যে নতুন করে জেগে উঠেছে। বর্ণবিদ্বেষের যে হিংসা বহু বছর আগে মার্কিন দেশ বহন করত, বহু আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যার বিনাশ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছিল, দেখা যাচ্ছে, তা এখনও মরেনি। সেই অভিশাপ আজ আবার নতুন করে ফিরে এসেছে।
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তার রয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্র। রয়েছে উগ্রপন্থা আটকানোর অনেক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বাইরের জঙ্গিদের তারা অনেকটাই আটকাতে পেরেছে। কিন্তু তাদের সমাজের ভিতরেই প্রভূত হিংসা বুকে নিয়ে ফুঁসছে যেসব ‘দেশীয় জঙ্গি’, যে হিংসা তাদের নির্বিচারে মানুষ মারতে উৎসাহিত করছে, সেই মৌলবাদ, সেই উগ্রপন্থাকে আজ তারা কীভাবে দূর করবে! রক্তের ভিতরে জেগে থাকা এই কীটদের সে দূর করবে কী পন্থায়! সেটা আজ তাদের নতুন করে ভেবে দেখার সময় এসেছে।
একটা সময় ছিল যখন মার্কিন সভ্যতার মধ্যে একটা অবসাদ জমত। তাদের সম্পর্কের ভিতগুলো ছিল খুবই নড়বড়ে। আমাদের মতো বাবা, মা, কাকা, ভাইবোনেদের সঙ্গে সম্পর্কের মতো ওদের সম্পর্কের ভিতটা ততটা নিবিড় নয়। তাছাড়া মুক্ত যৌনতার অবসাদ তাদের বারবার ক্লান্তির দিকে ঠেলে দিয়েছে। একটু স্নেহ বা ভালোবাসার পরশ তাদের সেই ক্লান্তি দূর করতে সক্ষম। কিন্তু আজকের এই হিংসা তাদের যে উন্মার্গগামিতার পথে ঠেলে দিচ্ছে, সেখান থেকে তাদের ফেরাতেই হবে। এই উগ্র জাতীয়তাবাদ থেকে যে হিংসার জন্ম, তা কিন্তু সমগ্র জাতিকেই এক বিপন্ন সময়ের দিকে ঠেলে দেবে। এটা রবীন্দ্রনাথ কিংবা গান্ধীজি থেকে শুরু করে সারা বিশ্বের বহু মনীষীই বলে গিয়েছেন। মনে রাখা দরকার, আমরাও কিন্তু ক্রমেই ঝুঁকে পড়ছি এক উগ্র জাতীয়তাবাদের দিকে। চারিদিকে যে অসহিষ্ণুতা এবং পিটিয়ে মারার ঘটনা ঘটছে তা নিয়ে আমাদেরও উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ আছে। উগ্র জাতীয়তাবাদ অন্ধত্বের জন্ম দেয় এবং তা ক্রমেই একটা প্রজন্মকে ঠেলে দেয় গভীর খাদের দিকে। তাই অচিরেই সতর্কতা প্রয়োজন।