সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক। কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার বা ... বিশদ
আঁচলে মুখটা মুছে বেঞ্চ ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন তিনি— ‘ভাই সরো, চা’টা আমিই বানাই।’ আমতা আমতা করে পরিমল বলার চেষ্টায়, দিদি, খুব গরম। ছ্যাঁকা লেগে যাবে। ‘ছাড়ো তো, এসব অনেক করেছি, এখনও তো বাড়িতে করি। ও আমি ঠিক করে নেব।’— নাছোড় মুখ্যমন্ত্রীর আব্দারে চায়ের হাতা বাড়িয়ে দিলেন পরিমল। সসপ্যানে হাতা নেড়ে বললেন, ‘এই তো হয়ে গিয়েছে।’ এবার হাতা দিয়ে চা তুলে ছাঁকনিতে ছেঁকে একটা কেটলিতে ভরেও ফেললেন। সঙ্গীদের বিহ্বলতা কাটছিল না। গ্যাস স্টোভের পাশে মিল্ক মেডের কৌটো থেকে এবার দুধ মিশিয়ে নিলেন কেটলিতে। হাঁ করে দেখছিলেন পরিমল। ‘কাগজের কাপগুলো এগিয়ে দাও। চা’টা ঢেলে সবাইকে দিই।’ স্টিলের থালায় পরপর সাত-আটটা কাপে চা ঢেলে নিলেন নিজের হাতে। ‘কই সুব্রত’দা, শিশির’দা নিন, শুভেন্দু নাও।’ সঙ্গী সাংবাদিকরাও বঞ্চিত হলেন না। চায়ে লম্বা চুমুক দিয়ে সুব্রতবাবুর গলায় পরিতৃপ্তি— ‘দারুণ, খুব ভালো হয়েছে চা।’ খুশির ঝিলিক শুভেন্দুর চোখেমুখে। প্রবীণ শিশিরবাবুর সংযোজন— ‘আমি তো বেশ কয়েকবার মমতার হাতের রান্নাও খেয়েছি। সে তো আরও চমৎকার।’
চায়ের ছোট্ট দোকান জুড়ে এবার জানা পরিবারের পড়শিদের ভিড়। কেউ প্রণাম করতে আবার কেউ সেলফির আব্দারে। সবার কথা রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী। আদর করলেন বাচ্চাদের। এবার শুরু এক নতুন পর্ব। চায়ের দাম মেটাতে গেলেন। কিছুতেই তা নিতে পারবেন না বলে জানিয়ে পরিমল জানার আকুতি— ‘দিদি, আপনি আমার দোকানে এসেছেন, বসেছেন, চা বানালেন, সবাইকে খাওয়ালেন। এটাই সচেয়ে বড় প্রাপ্তি। আমি অনেক বেশি দাম পেয়েছি। টাকা নিতে বলবেন না।’ অগ্নিকন্যা এবার পরম মমতায় বললেন, ‘আমি তোমার দিদি তো, দিদি দিলে না বলতে নেই। পরিবারের সবার জন্য মিষ্টি কিনো।’ পরিমলের চোখ ছলছল। ঢিপ করে প্রণাম করলেন মমতাকে। ‘তাই হবে দিদি’। ফের গাড়ির দিকে মুখ্যমন্ত্রী। পরিমলের দোকানে হামলে পড়া ভিড়। তখনও দিদি’র তৈরি চা কেটলিতে রয়ে গিয়েছে অনেকটাই।
এদিন ওল্ড দীঘার প্রশাসনিক বৈঠক সেরে হঠাৎই মুখ্যমন্ত্রী বেরিয়ে পড়েন। গন্তব্য কোথায় কেউ জানে না। দীঘা বাইপাস ধরে গ্রামের সরু রাস্তা ধরে বেশ কিছুটা ঘুরে ফের মূল সড়কে। গাড়ি ছুটল দীঘা বর্ডারের দিকে। দীঘা থানার সীমানা পেরিয়ে মমতার কনভয় তখন উদয়পুরের রাস্তায়। মোবাইলে ‘ওয়েলকাম টু ওডিশা’ বার্তা। ডানদিকে বালেশ্বর জেলার ভোগরাই গ্রাম। বাঁ’দিকটা দীঘার পদিমা-১ গ্রাম পঞ্চায়েত। কনভয় থামল দত্তপুর গ্রামের মুখে আদিবাসী পাড়ায়। হেঁটে সোজা কানু সরেনের ভাঙা ঘরে। স্ত্রী সীতা সোরেন তখন দুপুরের খাবারে ব্যস্ত। কী করেন, দু’টাকা কেজির চাল পাচ্ছেন? খুঁটিয়ে জানলেন সব। ঘরের হাল দেখে মুখ্যমন্ত্রী ডেকে নিলেন জেলাশাসককে। ওদের ঘরটা বানিয়ে দিন। পাশে দাঁড়িয়ে দীঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান শিশির অধিকারী। বললেন, এরকম ৭৬টা আদিবাসী পরিবার রয়েছে এখানে। জমিটা পর্ষদের। আমরা এদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করছি। এরপর কুশ রাণা, রামি বাস্কে, গৌরি পাত্র সহ আরও কয়েকটি বাড়িতে ঘুরে মমতা শুনলেন অনিয়মত রেশন মেলা আর পানীয় জলের অপ্রতুলতার কথা। আদিবাসী পাড়ার উঠোনে বসেই সেই সমস্যা মেটানোর নির্দেশও দিলেন। তাঁকে ঘিরে আবালবৃদ্ধবণিতার ভিড়। সঙ্গে নিয়ে আসা কয়েক কৌটো লজেন্স বিলিয়ে দিলেন কচিকাঁচাদের মধ্যে। গ্রামজুড়ে তখন যেন উৎসব।