সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক। কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার বা ... বিশদ
রয়েছে উপরাষ্ট্রপতি, লোকসভার অধ্যক্ষ, প্রতিরক্ষার তিন বিভাগীয় প্রধান এবং বেশিরভাগ সংসদ সদস্যের ভবনগুলি।
বহু কথাবার্তা
এই ক্ষমতার বৃত্তে কথাবার্তা বলতে এখন কী? কথাবার্তার বিষয়গুলো হল: জম্মু ও কাশ্মীরের অঙ্গচ্ছেদ, সংসদের উভয় কক্ষে বিতর্কিত বিলগুলির জায়গা করে দেওয়া, আঞ্চলিক শাসক দলগুলির আত্মসমর্পণ, নরেন্দ্র মোদির আধিপত্য, কংগ্রেস দলের নেতৃত্বের সমস্যার কষ্টসাধ্য সমাধান, এবং সুষমা স্বরাজের দুঃখজনক বিদায়। সোজা কথায়, অর্থনীতি বাদে সবকিছুরই চর্চা জারি আছে।
এই ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে মোটামুটি ৫০ কিলোমিটার পেরিয়ে যেদিকেই যাওয়া যাক, প্রতিটি গ্রামে এবং নগরের দরিদ্র জনপদগুলিতে আলোচনাটা একেবারে অন্য। তাদের কথাবার্তার সারাৎসার হল অর্থনীতি—সকলের প্রকৃত মজুরি বা প্রকৃত আয়পত্তর কমে যাচ্ছে অথবা থমকে গিয়েছে। তাদের আলোচনায় উঠে আসছে কর্মীসঙ্কোচন আর ছাঁটাইয়ের কথা। বৃথা কাজের সন্ধানের আক্ষেপ শোনা যাচ্ছে। বন্যা অথবা খরায় বিপর্যয় এবং মৃত্যু প্রসঙ্গ নিয়ে চর্চা কানে আসছে। আলোচনা চলছে জল ও বিদ্যুতের সঙ্কট কতটা বিপন্ন করে তুলছে তাদের। বৈষম্যে-নির্দয় পৃথিবীতে বেঁচেবর্তে থাকার সংগ্রামের কথাই তারা বলে চলেছে।
প্রায় সাড়ে এগারোশো কিলো মিটার দূরে মুম্বই।
এই মহানগরীতেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সেবি, স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বহু প্রথম সারির কোম্পানি ও ব্যাঙ্কের কর্পোরেট হেড কোয়ার্টার্স। তাই এখানে একমাত্র চর্চার বিষয়টি
হল অর্থ অথবা অর্থসঙ্কট। আলোচনা চলছে বিএসই এবং এনএসই সূচকের ভয়ঙ্কর ধস, ভারতীয় মুদ্রামানের অবনমন, লগ্নিকারীদের বন্ডের উপর প্রদেয় অর্থের ভাগ বেড়ে চলা, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যঙ্কগুলির বিপুল লোকসান, অনমনীয় কর ব্যবস্থা (এবং সেটার কঠোর প্রয়োগ নীতি), ফরেন পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট (এফপিআই) সরে যাওয়া এবং ক্যাফে কফি
ডে-র প্রমোটার ভি জি সিদ্ধার্থের আত্মহত্যা নিয়ে।
বেপরোয়া সরকার
আমার মতে, একটা সরকার যদি যত্নশীল হয় তবে শ্রমজীবী এবং গরিব মানুষের কথাবার্তাগুলোকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে সে। শ্রমজীবী মানুষজন অন্যসকল উদ্বেগের বিষয়ের শরিক হতে পারে, এমনকী ভোটও দিতে পারে পপুলার পারসেপশনের উপর ভিত্তি করে, কিন্তু তাদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয় একটাই—অর্থনীতি। দুর্ভাগ্যের হল, এই সরকারের কাছে অর্থনীতিটা মনে হয় সবচেয়ে কম ভাবনাচিন্তার বিষয়, ‘অপারেশন জম্মু ও কাশ্মীর’-এর পর বিজয়প্রদর্শনের আদিখ্যেতা এই সরকার আড়াল করতে পারবে না।
অর্থনীতির একটি স্ন্যাপশট রাখছি:
(১) জিডিপি বৃদ্ধির হারের অবনমন অব্যাহত। সারা বছরের ৬.৮ শতাংশ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকের ৫.৮ শতাংশের পর ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিক খুব একটা আশাব্যঞ্জক ঠেকছে না। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং সংশ্লিষ্ট অন্যরা পুরো ২০১৯-২০ সালের জন্য পূর্বাভাস নরম সুরে রেখে বলেছে যে জিডিপি বৃদ্ধির হারটা ৬.৯ শতাংশ হতে পারে। অএতব, যদি প্রথম ত্রৈমাসিক আর একবার ৫.৮ শতাংশ বৃদ্ধি দিতে পারে তবে আমরা ভাগ্যবান বলে মনে করব।
(২) কোর সেক্টরের বৃদ্ধি ৫০ মাসের ভিতর সবচেয়ে কম হয়েছে—০.২ শতাংশ। সমস্ত ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রে ক্যাপাসিটি ইউটিলাইজেশনের ছবিটা গড়পড়তা—৭০ শতাংশের নীচে।
(৩) এই মুহূর্তে এশিয়ার সবচেয়ে খারাপ পারফর্মিং কারেন্সির নাম রুপি বা ভারতীয় মুদ্রা। আগস্ট মাসে মার্কিন ডলারের সাপেক্ষে রুপির পতনের হার ৩.৪ শতাংশ।
(৪) গত জুন (২০১৯) ত্রৈমাসিকের শেষে নতুন প্রকল্পে (বেসরকারি এবং সরকারি উভয় ক্ষেত্র মিলিয়ে) বিনিয়োগ ঘোষণাটি ছিল গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন—৭১,৩৩৭ কোটি টাকা। ওই ত্রৈমাসিকে সম্পূর্ণ-হওয়া প্রকল্পগুলির মোট মূল্য ৫ বছরের ভিতরে সর্বনিম্ন—৬৯,৪৯৪ কোটি টাকা। রেলে পণ্যমাশুল (কয়লা, সিমেন্ট, পেট্রলিয়াম, সার, লোহা প্রভৃতি পরিবহণ) বাবদ আয় ২০১৯ সালের এপ্রিল-জুনে ২.৭ শতাংশ বেড়েছে বটে, কিন্তু পূর্ববর্তী বছরের একই সময়কালের (৬.৪ শতাংশ) থেকে তা অনেকটাই কমে গিয়েছে।
(৫) এপ্রিল-জুলাই, ২০১৯ সময়কালে রপ্তানি (পণ্য এবং পরিষেবা) ৩.১৩ শতাংশ বেড়েছে বটে, পূর্ববর্তী বছরের একই সময়কালের তুলনায় আমদানি কমেছে ০.৪৫ শতাংশ—যা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মন্দা নির্দেশ করে।
(৬) কনজাম্পশন বা উপভোগ এত কম অতীতে কখনও দেখা যায়নি। ২০১৯-২০ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে বিক্রি হ্রাস পেয়েছিল গাড়িতে ২৩.৩ শতাংশ, মোটরবাইকে ১১.৭ শতাংশ, বাণিজ্যিক গাড়িতে ৯.৫ শতাংশ এবং ট্রাক্টরে ১৪.১ শতাংশ। পরিস্থিতি জুলাই মাসে আরও খারাপ হয়েছে। শিল্প সমিতিগুলির (সিয়াম এবং ফাডা) অভিযোগ, ২,৩০,০০০ মানুষ কাজ হারিয়েছে এবং ২৮৬টি ডিলারশিপ কমে গিয়েছে। নির্মাণ শিল্পের অবস্থাও ভয়ঙ্কর—২০১৯ সালের মার্চের শেষের খবর, ১২ লক্ষ ৮০ হাজার ফ্ল্যাট অবিক্রীত রয়ে গিয়েছে।
(৭) ফাস্ট মুভিং কনজিউমার গুডস (এফএমসিজি) উপভোগের চিত্রটাও আশাব্যঞ্জক নয়। হিন্দুস্থান লিভার, ডাবর, ব্রিটানিয়া ইন্ডাস্ট্রিজ, এশিয়ান পেইন্টস প্রভৃতি যে রিপোর্ট দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে বিক্রিবাটা বৃদ্ধির বহর (ভলিউম গ্রোথ রেট) পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় অর্ধেক হয়েছে কিংবা তার চেয়েও কমে গিয়েছে।
(৮) জুলাই মাসে পাইকারি মূল্যসূচক (ডব্লুপিআই) বেড়ে হয়েছিল ১.০৮ শতাংশ। সূচকের ভিতরে, ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রের মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে ০.৩৪ শতাংশ হয়েছিল। এসব মোটেই ভালো লক্ষণ নয়, এসব চাহিদা হ্রাসের শঙ্কা।
(৯) প্রথম ত্রৈমাসিকে (২০১৯-২০) কেন্দ্রীয় সরকারের মোট কর রাজস্ব (গ্রস ট্যাক্স রেভিনিউ) বেড়েছে মাত্র ১.৪ শতাংশ, অথচ পূর্ববর্তী বছরে একই সময়কালে এটা বেড়েছিল ২২.১ শতাংশ। এই পরিস্থিতি এটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে যে কর্পোরেট এবং ব্যক্তি রোজগেরে উভয়েরই আয় কমেছে। সুতরাং খরচাপাতিতেও টান পড়েছে তাদের।
পরিকল্পনা কোথায়?
বৃদ্ধির চার চালকের মন্ত্র-এর কাছে আমরা ফিরি: সরকারি ব্যয়, বেসরকারি বিনিয়োগ, বেসরকারি উপভোগ এবং রপ্তানি। স্পষ্টত, ইঞ্জিনগুলির একটিও চাঙ্গা হচ্ছে না এবং বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হচ্ছে না। এটা
অনেক বার বলা হয়েছে এবং মান্য অর্থনীতিবিদগণ
সহ অনেকেই বলেছেন। কিন্তু, সরকার সে-কথায় কর্ণপাত করতে কিংবা সে-কথা বুঝতে কিংবা সেইমতো পদক্ষেপ করতে ইচ্ছুক নয়। অর্থনীতি হল এমন
একটি ক্ষেত্র, যেখানে পেশিপ্রদর্শনের দেশাত্মবোধ কোনও কাজে আসবে না। পক্ষান্তরে, এটা
অর্থনীতিকে গোল্লায় পাঠানোর কাজটিই করতে পারে।