উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
ইতিহাস বলছে, ওই নির্ভীক ব্যক্তির নাম আগস্ট ল্যান্ডমেসের। অত্যন্ত সাধারণ জার্মানি পরিবারের ছেলে আগস্ট চাকরির আশায় ন্যাৎসি পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, চাকরি পেতে গেলে শাসকদল ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু ভ্যাগ্যের লিখন অন্যকিছু ছিল। পার্টির কাজ করতে করতেই একদিন তাঁর সঙ্গে দেখা হল নিপীড়িত এক তরুণীর। নাম ইরমা একলের। ইহুদি পরিবারের তরুণী ইরমার প্রেমে পড়লেন আগস্ট। খবর পাঁচ কান হতে সময় লাগেনি। খবর পৌঁছাল পার্টির কাছেও। এক ইহুদি রক্তের মহিলার সঙ্গে প্রেম! পার্টি কোনওভাবেই মানল না। সঙ্গে সঙ্গে দল থেকে বহিষ্কার করা হল। এতেই থামল না ন্যাৎসিরা। আগস্ট এবং ইরমার বিয়েকে বেআইনি ঘোষণা করল তারা। ততদিনে ইরমার কোলে তাঁদের প্রথম কন্যা সন্তান ইনগ্রিড জন্ম নিয়েছেন। কিন্তু, সামাজিকভাবে একঘরে আগস্টের পরিবার। কাজ জোটে না। ঘরে খুব অভাব। একরত্তি মেয়েটি খিদেয় কাঁদে। বাবা হয়ে সেই দৃশ্য কীভাবে সহ্য করবেন আগস্ট। তাই স্বামী-স্ত্রী ঠিক করলেন ডেনমার্কে পালিয়ে যাবেন। কিন্তু পারলেন না। ওঁত পেতে বসে থাকা ন্যাৎসিদের হাতে ধরা পড়ে গেলেন তাঁরা। জাতি বিদ্বেষ আইনে দোষী সাব্যস্ত হলেন আগস্ট। কিন্তু প্রমাণের অভাবে তাঁকে মুক্তি দিলেও আদালত জানিয়ে দিল, ইরমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ভুল করলে কঠোর শাস্তি পেতে হবে। আদালতের নির্দেশ কেয়ার করলেন না দম্পতি। প্রকাশ্যেই একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন। প্রেম বড়। সমাজ নয়। সমাজের চোক রাঙানি, জাতি বিদ্বেষকে তাঁরা তুচ্ছজ্ঞান করে এগিয়ে যেতে চান। কিন্তু বাস্তবে রাষ্ট্রশক্তি এক সাধারণ দম্পতির মনোবলের থেকে অনেক বড়। এই সত্যটি আগস্ট এবং ইরমা যেদিন বুঝলেন, সেদিন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই ফের জাতি বিদ্বেষের অভিযোগে গ্রেপ্তার হলেন আগস্ট ল্যান্ডমেসের। তাঁকে আড়াই বছরের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হল বোরজেরমুর কনসেন্টট্রেশন ক্যাম্পে। ক্যাম্পে যাওয়ার দিন শেষবার নিজের স্ত্রী ও মেয়েকে দেখতে পেলেন আগস্ট। পুলিসের গাড়ির পিছন পিছন ছুটতে ছুটতে ছোট মেয়ে ইনগ্রিড ক্লান্ত হয়ে রাস্তায় বসে পড়েন। গাড়ির কালো ধোঁয়া ধীরে ধীরে রাস্তার বাঁকে মিলিয়ে যায়। ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত ইনগ্রিড সেদিনের সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন। ভয়াবহ-অনিশ্চিত বাস্তবের মুখোমুখি হয়েও তাঁর মায়ের মনোবল কতটা দৃঢ় ছিল, তার বর্ণনা দিয়েছেন ইনগ্রিড। এই ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যেই ইরমা একলেরকে গ্রেপ্তার করল জার্মানের গুপ্ত পুলিস গেস্টাপো। পাঠানো হল জেলে। সেখানেই দ্বিতীয় কন্যা সন্তানের জন্ম দিলেন ইরমা। সদ্যজাত মেয়ে মায়ের আদরটুকুও পেল না। তার আগেই ইরমাকে নিয়ে যাওয়া হল ওরানিয়েনবুর্গ কনসেন্টট্রেশন ক্যাম্পে। দুই মেয়েকে অনাথদের শিবিরে। এরপর ইরমার কী হল, আর জানা যায়নি। শোনা যায়, ক্যাম্পে অসহনীয় অত্যাচারে কমপক্ষে ১৪ হাজার মহিলা মারা যায়। হয়তো তাঁদের মধ্যে ইরমাও একজন। এরপর কেটে যায় কয়েক বছর। ক্যাম্প থেকে ফিরলেন বিধ্বস্ত আগস্ট। হন্যে হয়ে খুঁজতে লাগলেন স্ত্রীকে। কেউ কিছুই বলতে পারল না। বাধ্য হয়ে চাকরি নিলেন একটি কোম্পানিতে। অন্যদিকে তখন উত্তাল বিশ্ব। বেজে গিয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা। ধরে ধরে সেনায় ভর্তি শুরু হল। আগস্ট ল্যান্ডমেসেরকেও ভর্তি নেওয়া হল। ১৯৪৪ সালের ১৭ অক্টোবর। ক্রোয়েশিয়ায় যুদ্ধ করতে গিয়ে হারিয়ে গেলেন আগস্ট ল্যান্ডমেসের। একই সঙ্গে হারিয়ে যায় এক অদ্যম সাহসীর কাহিনী। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ছোট হলেও প্রতিবাদ করে যেতে পেরেছিলেন। তাঁর সেই প্রতিবাদ ছবি হয়ে ধরা থাকল আগামী বিশ্বের জন্য।