উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
বিবিসি লিখেছে, বেজোস-ম্যাকেঞ্জির সাড়ে তিন হাজার কোটি ডলারের এই বিচ্ছেদ আগের সব রেকর্ডকে ম্লান করে দিয়েছে। এর আগে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ডিভোর্সের রেকর্ড ছিল আর্ট ডিলার অ্যালেক ওয়াইল্ডেনস্টাইন ও তার স্ত্রী জোসেলিনের। ১৯৯৯ সালে সেই ডিভোর্সের রফা হয়েছিল ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে। বিচ্ছেদের মাসুল গুণতে গিয়ে বেজোসকে এখন বিশ্বের শীর্ষ ধনীর মুকুট হারাতে হবে। সেক্ষেত্রে হয়ত ধনীদের তালিকায় আবার শীর্ষস্থানে ফিরবেন মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস।
চলতি বছরের জানুয়ারিতেই ২৫ বছরের সম্পর্কের ইতি ঘটিয়ে বিচ্ছেদের পরিকল্পনার কথা ট্যুইট করে জানিয়েছিলেন ম্যাকেঞ্জি। জেফ সেই টুইট শেয়ারও করেছিলেন। বর্তমানে অ্যামাজনের সম্পত্তির পরিমাণ আট হাজার ন’শো কোটি ডলার। সংবাদসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, অ্যামাজনের সিইও বেজোসের হাতে এতদিন কোম্পানির ১৬.৩ শতাংশ শেয়ার ছিল, যার অর্থমূল্য ১৪৩ বিলিয়ন ডলার। বিচ্ছেদের চুক্তি অনুযায়ী এর ৪ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা পাচ্ছেন ম্যাকেঞ্জি। তবে কোম্পানির বোর্ডে নিজের ভোটিং ক্ষমতা তিনি বেজোসকেই দিয়ে দিয়েছেন। ফলে অ্যামাজনে বেজোসের শেয়ার আর সম্পদের পরিমাণ কমলেও কোম্পানির উপর বেজোসের নিয়ন্ত্রণ আগের মতই থাকছে। মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্ট আর বেজোসের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ব্লু অরিজিন’-এর শেয়ারের ভাগও প্রাক্তন স্বামীর হাতে ছেড়ে দিয়েছেন ম্যাকেঞ্জি। এক ট্যুইটে ম্যাকেঞ্জি লিখেছেন, ‘পরস্পরের সহযোগিতায়’ বিবাহবিচ্ছেদের এই পর্ব চুকতে পেরে তিনি সকলের কাছে কৃতজ্ঞ।
চার সন্তানের বাবা-মা বেজোস আর ম্যাকেঞ্জির সংসার শুরু হয়েছিল ১৯৯৪ সালে অনলাইন-রিটেল সংস্থা অ্যামাজনের যাত্রা শুরুরও আগে। বেজোস আমাজন প্রতিষ্ঠা করলে ম্যাকেঞ্জিও সেখানে যোগ দেন। তিনি ছিলেন আমাজনের প্রথম কর্মীদের একজন। নিজেদের বিয়ের পঁচিশতম বছরেই মাইক্রোসফট এবং অ্যাপলকে হারিয়ে পৃথিবীর ধনীতম কোম্পানি হিসেবে উঠে আসে আমাজন। অর্থাৎ, যে সময়কালে ধনকুবের হয়ে উঠছেন তাঁরা, সেই সময় একসঙ্গেই ছিলেন জেফ এবং ম্যাকেঞ্জি। বেজোসের বয়স এখন ৫৪ বছর, আর ম্যাকেঞ্জির ৪৮।
ম্যাকেঞ্জির আরও একটি পরিচয় হল তিনি একজন গল্পকার। এর বাইরে ম্যাকেঞ্জি সম্পর্কে খুব কমই জানে মার্কিন সংবাদমাধ্যম। কারণ, তিনি নিজেই তাঁর সম্পর্কে খুব কম জানতে দেন বাইরের দুনিয়াকে। নিজের লেখালেখি আর চার সন্তানকে নিয়ে ব্যস্ত থাকাকেই বরাবর প্রাধান্য দিয়ে এসেছেন ম্যাকেঞ্জি। নিজেকে সব সময় বইপড়ুয়া অন্তর্মুখী স্বভাবের বলে চিত্রিত করেন তিনি। শুরু থেকেই পুরোদস্তুর একজন সাহিত্যিক হতে চেয়েছেন ম্যাকেঞ্জি। ছ’বছর বয়সে শিশুতোষ গল্পের বই ‘দ্য বুক ওয়ার্ম’ দিয়ে তাঁর লেখালেখির শুরু। ১৯৯২ সালে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্রিয়েটিভ রাইটিং বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। নোবেলজয়ী লেখিকা টনি মরিসন ছিলেন সেখানে তাঁর শিক্ষক। ম্যাকেঞ্জির লেখা বই ‘দ্য টেস্টিং অব লুথার অলব্রাইট’(২০০৫) এবং ‘ট্র্যাপস’ (২০১৩) সমালোচকদের বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে।
বেজোস এর ঠিক উল্টো। ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিকসের প্রতি ছিল তাঁর ব্যাপক আগ্রহ। ষাটের দশকের জনপ্রিয় সায়েন্স ফিকশন সিরিজ ‘স্টার ট্রেক’-এর বিশেষ ভক্ত তিনি। স্কুলে পড়ার সময়েই নিজেদের বাড়ির গ্যারেজে তৈরি করেন একটি ছোট গবেষণাগার। বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি কীভাবে কাজ করে তার খুঁটিনাটি জানতে দিনের বেশির ভাগ সময় ওই গ্যারেজেই পড়ে থাকতেন। ১৯৮৬ সালে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক শেষ করেন। এরপর ওয়াল স্ট্রিটের তিনটি কোম্পানিতে কাজ করেন।‘ডিই শ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সময় তাঁর মাথায় ঘুরতে থাকে ইন্টারনেটের অপার সম্ভাবনার কথা। ইন্টারনেটকে কাজে লাগিয়ে নতুন কী ব্যবসা দাঁড় করানো যায়, তখন সেটিই ছিল তাঁর মূল ভাবনা। বেজোস নিজেই জানিয়েছিলেন, বিশ্বের সেরা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আমাজনের পরিকল্পনা নিউ ইয়র্ক থেকে সিয়াটলে গাড়ি চালানোর সময় করেছিলেন তিনি।
১৯৯৪ সালে ‘ডিই শ’-এর চাকরি ছেড়ে সিয়াটলে চলে যান তিনি। সেখানে এক বছর গবেষণার পর নিজের বাড়ির গ্যারেজে ১৯৯৫ সালের ১৬ জুলাই প্রতিষ্ঠা করেন আমাজন। ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইনে বই বিক্রি করাই ছিল বেজোসের প্রথম ব্যবসা। প্রথম এক মাসে আমেরিকাসহ ৪৫টি দেশে অনলাইনে ২০ হাজার ডলার বা ১৬ লাখ টাকার বই বিক্রি করে আমাজন। সেই সময় অনলাইনে বইয়ের এমন বিক্রি ছিল অনেকটা অভাবনীয়। এরপর শুরু হয় আমাজনের জয়যাত্রা। ১৯৯৮ সালে বইয়ের বাইরে গান ও সিনেমার সিডি বিক্রি করতে শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০০৭ সালে ডিজিটাল মাধ্যমে বই পড়ার যন্ত্র ‘কিন্ডেল’ বাজারে নিয়ে আসেন বেজোস। স্ক্রেপহিরো নামে একটি অনলাইন প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে আমাজনের পণ্যসম্ভারে ৪০ কোটি পণ্য রয়েছে। ২০০০ সালে মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘ব্লু অরিজিন’ প্রতিষ্ঠা করেন। নিত্যনতুন উপায়ে আমাজনরে ব্যবসা বাড়ানোর পাশাপাশি ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে ২৫ কোটি ডলারে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকাটি কিনে নেন তিনি। বেজোস দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন করে প্রাণ ফিরে পায় প্রভাবশালী মার্কিন পত্রিকাটি। বেজোস ‘এক্সপেডিশন’ নামে ব্যক্তিগত ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড থেকে বিনিয়োগ করেন। গুগলে প্রথম দিককার বিনিয়োগকারী হিসেবেও তাঁর পরিচিতি রয়েছে। অভিনয়ের অভিজ্ঞতাও রয়েছে জেফের। ২০১৬ সালে স্টার ট্রেক বিওয়াইন্ড-এ অভিনয় করেন।
অফিসে জেভ যে সভাগুলো করেন, সেখানে যে কজনই উপস্থিত থাকুক না কেন, তাঁদের আপ্যায়নের জন্য দু’টি পিৎজা আর পানীয় থাকে। দু’টি পিৎজার কমও না বেশিও না। লোক বেশি হলে ওই দু’টি পিৎজা ভাগ করে খেতে হবে। আর কম হলে একেকজন বেশি বেশি পিৎজা খেতে পারবেন। জেভ বিশ্বাস করেন, এই দুই পিৎজার নিয়মেই নাকি উৎপাদনশীলতা বাড়ে। এটাই নাকি জেভের ‘টু পিৎজা রুল’!