খরচের চাপ এত বেশি থাকবে সে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। কর্মক্ষেত্রে নানান সমস্যা দেখা ... বিশদ
করোনার থাবা থেকে নাগরিকদের বাঁচাতে স্বাস্থ্যদপ্তর নির্দেশ দিয়েছে, কেউ ইংল্যান্ড বা বিদেশ থেকে ফিরলে, সেই ব্যক্তি বা মহিলাকে নিজের ফ্ল্যাটে স্বেচ্ছা নির্বাসিত হয়ে থাকতে হবে ১৪ দিন। যদি এর মধ্যে তাঁর শরীরে ভাইরাসের উপসর্গ না দেখা যায়, তাহলে তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন। আর উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে হবে। কিন্তু অনেকেই ১৪ দিন তো দূর, ১৪ ঘণ্টাও বাড়িতে থাকছেন না বিদেশ থেকে ফিরে। যেমন মানিকতলা-কাঁকুড়গাছি এলাকার কাউন্সিলার শান্তিরঞ্জন কুণ্ডু বললেন, আমার ওয়ার্ডে ছ’জন বিদেশ থেকে তিনদিন আগে ফিরেছেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে চারজনই বেপরোয়া মনোভাব নিয়ে এলাকায় ঘুরছেন। আমাকে এলাকার লোকজন বারবার অভিযোগ করছেন। এঁরা এত শিক্ষিত হয়েও যদি দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে কাজ করেন, তাহলে কী করি বলুন তো! এঁদের তো আর ধাক্কাধাক্কি দিয়ে ঘরে ঢোকানো যায় না।
আবার রাজ্যের মধ্যে যিনি দ্বিতীয় আক্রান্ত হলেন, তিনি দক্ষিণ কলকাতার ৮৫ নম্বর ওয়ার্ডের পণ্ডিতিয়া রোডের একটি অভিজাত আবাসনের বাসিন্দা। গত ১৩ মার্চ তিনি লন্ডন থেকে ফিরেছেন। কিন্তু তারপর থেকে তিনি যেখানে যেমন খুশি ঘুরেছেন। গিয়েছেন শপিং মলে, রেস্তরাঁয়। তাঁর বাবার বাথরুম ফিটিংসের বিশাল ব্যাবসা। রয়েছে একাধিক দোকান। কালীঘাটের এসপি মুখার্জি রোড এবং ঈশ্বর গাঙ্গুলি স্ট্রিটে তাঁদের দু’টি দোকান রয়েছে। সেখানে গিয়েও দু’দিন বসেছেন। এলাকার কাউন্সিলার তথা কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, এঁরা সচেতন না হলে কীভাবে হবে আর? বিদেশ ফেরত বেপরোয়া কিছু নাগরিকের আচরণে বিপদে পড়েছেন শহরবাসী। তাঁরা এখন উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন।
এলাকার এক প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, ওই যুবক দোকানেও বসেছিলেন। সেখানে কয়েকজন কর্মী রয়েছেন। এসেছেন অনেক ক্রেতাও। এবার তাঁরা কী করবেন, এটা কোনওভাবে বোঝার চেষ্টা করেছেন ওই যুবক এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা? আবাসনের বাসিন্দারা বললেন, বিদেশে ওই যুবক মাঝেমধ্যেই গিয়েছেন। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি আলাদা। যদিও পরিবারের সদস্যদের কথায়, তাঁদের ছেলে বিদেশ থেকে ফেরার পর কোথাও বের হয়নি, ঘরেই ছিলেন।
গড়িয়াহাট ও বালিগঞ্জ এলাকার বেশ কয়েকটি অভিজাত আবাসনে বিদেশ থেকে বাসিন্দারা ফিরেছেন। যোধপুর পার্ক, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড কানেক্টর, নিউ আলিপুরেও একইভাবে ঘরে ফেরা চলছে। কিন্তু, তাঁদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা নির্দেশিকাকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনছেন না। যেমন বালিগঞ্জের অভিজাত এক আবাসনে বিদেশফেরত এক তরুণী বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে উদ্বিগে রয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে ঘরবন্দি থাকার বদলে রীতিমতো পাড়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন গড়িয়াহাট থানা এলাকার এক যুবক। বাবা এলাকার নামী ব্যবসায়ী। এলাকার মানুষের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিস যুবকের বাবাকে নির্দেশ দেয় ছেলেকে ঘরবন্দি করে পর্যবেক্ষণে রাখতে। লালবাজারের এক পুলিসকর্তা বললেন, এরকম শিক্ষিত ও অভিজাত মানুষদের ধরপাকড় করা সম্ভব নয়। কিন্তু রাস্তায় তাঁরা ঘুরবেন, সেটাও করতে দেওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে মহামারী আইন বলবৎ হওয়ায়, প্রশাসন বাধ্য করতে পারে এধরনের নিয়ম ভঙ্গকারীকে ঘরবন্দি করতে।