নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘করোনা’ আতঙ্ক গ্রাস করেছে চিৎপুর যাত্রাপাড়াকেও। এর জেরে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন অপেরার সব শো বাতিল করা হয়েছে। কলকাতা যাত্রা কর্মী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হারাধন রায় শুক্রবার বলেন, ইতিমধ্যেই বিষয়টি রাজ্য যাত্রা অ্যাকাডেমির তরফে চিঠি দিয়ে আমাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরই চিৎপুরের সমস্ত অপেরার যাবতীয় শো বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যাত্রাপাড়া সূত্রের খবর, ময়না, এগরা, কাঁথি, বেলদা, নন্দকুমার, কামারপুকুর, চাকদহ, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, বর্ধমান, দুর্গাপুরে যে সব ছোটখাট যাত্রা দলগুলি আছে, তারাও যাত্রা মঞ্চস্থ করা থেকে বিরত থাকছে। এদিন চিৎপুরের যাত্রাপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, চারদিকে কেমন যেন একটা নিঝুম পরিবেশ। যাত্রা অপেরার অফিসগুলি ফাঁকা। অন্য সময় সেখানে জেলার বিভিন্ন সংস্থার লোকজন আসেন যাত্রা বুকিং করতে। ফলে ওই চত্বর গম গম করে সারাদিন। যাত্রা কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, এভাবে বেশিদিন চললে এই লোকশিল্পের পরিণতি যে কী হবে, তা ভেবেই আমরা শিহরিত হচ্ছি। রাজ্য যাত্রা সম্মেলনের সভাপতি সমীর সেন বলেন, যাত্রার সব থেকে ভালো মরশুম হল চৈত্র বৈশাখ মাস। এই সময়েই এই ধরনের বিপর্যয় ঘটায় আমাদের অনেক টাকা ক্ষতি হয়ে গেল। এখন প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও অপেরার বুকিং রয়েছে। কিন্তু করোনার জেরে আমাদের অনেক বুকিং বাতিল করতে হয়েছে। চিৎপুরের বেশ কয়েকটি অপেরার কর্মকর্তারা বলেন, যে সব সংস্থা ইতিমধ্যে টাকা দিয়ে বুকিং করেছেন, আমরা তাদের জানিয়ে দিয়েছি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগামী দিনে তাঁরা ফের সেখানে যাত্রা করবেন। ওই কর্মকর্তাদের কথায়, সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে অবজ্ঞা করে আমরা তো আর জেলায় গিয়ে যাত্রা করতে পারি না। সেই কারণেই আমাদের এই সিদ্ধান্তের কথা সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে জানিয়ে দিয়েছি।
তবে যাত্রা বন্ধ হওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে যাত্রাকর্মী গোরাচাঁদ মণ্ডল, প্রশান্ত সাহা, রবীন্দ্রনাথ হালদারদের। তাঁরা একরাশ অভিমানের সুরে বলেন, এতগুলি দিন আমাদের কী করে চলবে? অপেরা কর্তৃপক্ষ তো আর আমাদের বসিয়ে বসিয়ে মাইনে দেবে না। আমাদের আপাতত বাড়ি চলে যেতে বলা হয়েছে। দেশের বাড়িতে গিয়েই বা কী করব। আমরা তো আর অন্য কোনও কাজ জানি না। তাই যাত্রা বন্ধ হওয়ায় আমাদের রুটি রুজিতে টান পড়ল। বিভিন্ন যাত্রা কর্মীদের বক্তব্য, এই কঠিন সময়ে সরকার যদি আমাদের কথা একটু চিন্তা করে, তাহলে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সকলেই কমবেশি উপকৃত হবে। যাত্রা শিল্পী অরিন্দম ভট্টাচার্য, পূবালি বসু প্রমুখরা বলেন, করোনার জেরে আমাদের বুকিং করা যাত্রাগুলি বাতিল হচ্ছে শুনে খারাপ লাগছে।