উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
চলতি বছরের মার্চ মাসে মায়ানমার থেকে সোনা সহ ডিআরআইয়ের হাতে ধরা পড়ে আইজ্যাক লালপেখলুয়া। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় প্রায় তিন কেজি সোনা। চোরাপথে তা কলকাতায় নিয়ে আসা হচ্ছিল। ধৃতকে জেরা করে জানা যায়, এই সোনা তাকে দেয় মায়ানমারের এক ব্যক্তি। যে সেদেশে বসে চোরাচালান চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এই রুট দিয়ে সোনা আসছে উত্তর-পূর্ব ভারতের মিজোরাম, মণিপুরে। সেখান থেকে শিলিগুড়ি হয়ে তা যাচ্ছে কলকাতা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
তবে মায়ানমারে এত অবাধে কীভাবে যাতায়াত করছে সোনার চোরাচালানে যুক্ত কারবারিরা? এই নিয়ে ডিআরআইয়ের অফিসাররা জেরা শুরু করেন আইজ্যাককে। কথায় কথায় সে জানায়, যাতায়াতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সেজন্য তাদের সেখানকার পরিচয়পত্র করিয়ে দিচ্ছে চোরাকারবারের পাণ্ডারা। সেখানকার ভোটার কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের বৈধ কাগজপত্র তৈরি করে দেওয়া হয়। যা নাগরিকত্বের প্রমাণস্বরূপ ব্যবহার করা হচ্ছে। সেখানে তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে কেউ চ্যালেঞ্জ করলে, এই সমস্ত প্রমাণপত্র দেখানো হচ্ছে। যে কারণে সহজেই মায়ানমারের একপ্রান্ত খেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াত করতে পারছে তারা। এমনকী এই সমস্ত কাগজপত্র দিয়ে মায়ানমারের পাসপোর্ট পর্যন্ত তৈরি করে ফেলা হচ্ছে। এই পাসপোর্ট ব্যবহার করেই তারা চীনে যাচ্ছে। সেখান থেকে নিয়ে আসছে সোনার বিস্কুট। এমনকী তাইল্যন্ড, সিঙ্গাপুরে যাওয়ার ক্ষেত্রেও তা কাজে লাগানো হচ্ছে। ভুয়ো নাম দিয়েই পাসপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে। ভারত সরকার কোনও চোরাচালানকারীর নামে লুকআউট নোটিস জারি করলে, ধরা পড়া এড়াতে মায়ানমার থেকে তৈরি করা ভুয়ো নামের পাসপোর্ট তারা ব্যবহার করছে বলে খবর।
জিজ্ঞাসাবাদে আইজ্যাক জানায়, তার কাছেও মায়ানমারের ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে। তার ডেরায় তল্লাশি চালিয়ে সেটি বাজেয়াপ্ত করা হয়। তদন্তে জানা গিয়েছে, মায়ানমারের এক সোনা পাচারকারী তাকে এই ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করে দেয়। ভুয়ো নথি জমা দিয়েই তা বানানো হয়েছিল। মণিপুর থেকেই নাম, জন্মতারিখ থেকে শুরু করে সমস্ত নকল নথি তৈরি করা হয়। এরপর তা পৌঁছয় মায়ানমারের এক ব্যক্তির কাছে। যে সেখানকার নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরির কাজ করে থাকে। অফিসাররা জানতে পেরেছেন, এরকম একাধিক এজেন্ট রয়েছে, যাদের মাধ্যমে মায়ানমারের ভোটার কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে শুরু করে সমস্ত কাগজপত্র হাতে পাচ্ছে উত্তর-পূর্ব ভারতে সোনা চোরাচালানে যুক্ত ব্যক্তিরা। আইজ্যাকের ড্রাইভিং লাইসেন্স কীভাবে তৈরি হয়েছিল, তা জানতে ইতিমধ্যেই মায়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে ডিআরআই। পাশাপাশি সেদেশে কারা এই কারবারে জড়িত রয়েছে, তা নিয়ে খোঁজখবর চলছে। যাতে এখানকার নাগরিকরা সেখান থেকে নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র জোগাড় করে চোরাকারবার চালাতে না পারে।