উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
কেরলের ভোট প্রচারের শেষ দিনে হঠাৎ এই দৃশ্যের অবতারণা কেন হল? তারপর পিছনে রয়েছে একটা ছোট প্রেক্ষাপট। এবারের ভোট-যুদ্ধে দাদা রাহুলের দ্বিতীয় ‘কুরুক্ষেত্র’ কেন্দ্র তথা কেরলের পাহাড়-জঙ্গলঘেরা ওয়ানাড়ের জেলাসদর কালপেট্টা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ওয়ারাকান্দি গ্রামে গিয়ে রবিবার দুপুরে ট্যাপিওকা খাওয়ার মজা উপভোগ করেছেন প্রিয়াঙ্কা। আদিবাসী কুরমুন সম্প্রদায়ের মাত্র ৩০ ঘর পরিবারের কলোনি। তিনি এদিন সেখানে গিয়েছিলেন সেই গ্রাম তথা গোটা কেরলের গর্ব হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যাওয়া শহিদ সিআরপিএফ জওয়ান ভিভি বসন্তকুমারের বাড়িতে। পুলওয়ামাকাণ্ডে নিহত বসন্তকুমারের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার জন্য স্বয়ং রাহুল দু’বার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু মাওবাদী সংক্রান্ত বিষয়ে নিরাপত্তার কারণে তাঁর সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। দাদার কথা রাখলেন বোন। আর সেখানেই বসন্তকুমারের প্রতিবেশীদের সঙ্গে আলাপ জমানোর পর্বেই ঘটে গেল সেই ট্যাপিওকা ভোজনের বিরল ঘটনা।
প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে এদিন দোভাষী হিসেবে সঙ্গী হয়েছিলেন কেরলের আর এক ‘গর্ব’ কালপেট্টারই বাসিন্দা সুধন্যা সুরেশ। কেরলের প্রথম আদিবাসী মেয়ে হিসেবে সুধন্যা সম্প্রতি আইএএস পরীক্ষায় ভালো র্যা ঙ্ক নিয়ে পাশ করেছেন। হতদরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা সুধন্যাকে রাহুল-প্রিয়াঙ্কা আগেই অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছিলেন। মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন কালপেট্টার হেলিপ্যাডে রাহুলের সঙ্গে সপরিবারে লাঞ্চ করেছিলেন সুধন্যা। এদিন প্রিয়াঙ্কার সঙ্গী হয়ে নিজেকে আরও ধন্য মনে করছেন। সেই সুধন্যা এবং বসন্তকুমারের স্ত্রী সিনার দেওয়ার বর্ণনা অনুযায়ী জানা গেল, জঙ্গিহানায় নিহত জওয়ানের মা শান্তাদেবীকে প্রথমেই জড়িয়ে ধরেন প্রিয়াঙ্কা। তারপর একে একে পরিচিত হন সিনা এবং তাঁর দুই ছেলেমেয়ে অনামিকা ও অমরদীপের সঙ্গে। বসন্তকুমারের পরিবারকে প্রিয়াঙ্কা বলেন, আমার ঠাকুমা আর বাবাকেও জঙ্গি হানার শিকার হতে হয়েছিল। আপনাদের মানসিক যন্ত্রণা আমি বুঝি। বড় হয়ে অনামিক শিক্ষক ও অমরদীপ মেকানিক হতে চায় শুনে তারিফও করেন তাদের কোলে বসিয়ে। সবশেষে সিনাকে হিম্মৎ না হারার বরাভয় দিয়ে জানান, যে কোনও প্রয়োজন বা সাহায্যে গান্ধী পরিবারকে পাশে পাবে তুমি। শুধু যোগাযোগটুকু কোরো। এত বড় মাপের ভিআইপির আগমনে বিহ্বল সিনার চোখে তখন চিক চিক করছে জল।
বসন্তকুমারের বাড়ি থেকে বেরিয়েই তাঁকে ঘিরে ধরে প্রতিবেশী কুরমুন আদিবাসী পরিবারগুলির সদস্যরা। রাহুলের বোন সটান তাঁদের কলোনিতে চলে আসবেন সেটা স্বপ্নেও ভাবেননি তাঁরা। খোশমেজাজে থাকা প্রিয়াঙ্কা তাঁদের সকলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পরিচয় করেন। সেখানকার সমস্যা সম্পর্কে খোঁজখবর করেন। তারপর তাঁদের কাছ থেকে প্রায় যেচেই সেই রান্না করা ট্যাপিওকার পদ খান। তাঁকে সঙ্গ দেন সুধন্যাও। যা দেখে গোটা কুরমুন কলোনি অভিভূত। সবশেষে সঙ্গী সুধন্যাকে ধন্যবাদ জানান প্রিয়াঙ্কা। অপেক্ষমান সাংবাদিকদের কাছে গিয়ে শ্রীলঙ্কার জঙ্গিহানার তীব্র নিন্দা করেন। সেই সঙ্গে প্রত্যাশামতো বিজেপি এবং মোদি সরকারের তীব্র সমালোচনা করে আগামী মঙ্গলবার কেরলের ২০টি লোকসভা আসনের ভোটে কংগ্রেস তথা ইউডিএফ প্রার্থীদের জয়ী করার আহ্বানও জানান তিনি।
নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী বসন্তকুমারের বাড়ি শনিবারই যাওয়ার কথা ছিল প্রিয়াঙ্কার। কিন্তু দুর্যোগের কারণে তা বাতিল হয়। রাতে কালপেট্টার কাছে বৈথেরিতে একটি রিসর্টে থেকে যান। প্রচারের শেষ দিনে কোনও জনসভা বা রোড শো-এর গতানুগতিক কর্মসূচিতে যাননি। কিন্তু বসন্তকুমারের বাড়ি যাওয়া এবং আদিবাসী কলোনিতে সময় কাটানোর মাধ্যমে শেষ লগ্নের প্রচারের সার্চ লাইট নিজের দিকে টেনে আনলেন রাহুলের বোনই।