উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
রাজ্য বনদপ্তরের সঙ্গে এবিষয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে এরকমই চাঞ্চল্যকর তথ্য দেওয়া হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, বাঁকুড়া সহ একাধিক জেলাতেই এবছর প্রথম থেকেই শিকার উৎসবের আড়ালে প্রাণী মারা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ২৭ মার্চ পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝিটকার জঙ্গলে প্রায় শতাধিক বন্যপ্রাণী হত্যা করা হয়েছে। তারপরে ২৯ মার্চ পশ্চিম মেদিনীপুরেরই গুড়গুড়িপাল জঙ্গলে একইভাবে শতাধিক প্রাণী হত্যা করা হয়েছিল। ১৩ এপ্রিল লালগড়ের জঙ্গলে প্রায় দুই শতাধিক প্রাণী এবং হাজারের কাছাকাছি পাখি হত্যা করা হয় শিকার উৎসবের নামে। সম্প্রতি ১৮ এপ্রিল বাঁকুড়ার বাসুদেবপুর, জয়পুরের জঙ্গলে এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের আড়াবাড়ি জঙ্গলেও শিকার উৎসব হয়। তিনটি জঙ্গলে প্রায় পাঁচ শতাধিকেরও বেশি বন্যপ্রাণী এবং হাজারের বেশি পাখি শিকার করা হয়। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, তাদের কাছে শুধুমাত্র বড় আকারে জেলায় জেলায় যে শিকার উৎসব হচ্ছে সেগুলিরই পরিসংখ্যান এসেছে। কিন্তু এছাড়াও চলতি বছরে হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গাতে ছোট ছোট দলে একাধিক শিকার উৎসব পালিত হয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অন্যতম সদস্য অরবিন্দ পাল বলেন, সেক্ষেত্রে বন্যপ্রাণী এবং পাখি হত্যার সংখ্যাটা আরও অনেকটাই বেশি হতে পারে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন। তিনি আরও বলেন, আগামী মাসে পাঁশকুড়া এবং বান্দোয়ানে বড় আকারে ফের শিকার উৎসব হওয়ার কথা রয়েছে। প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ না নিলে, আরও বহু প্রাণীই মারা যাবে। অরবিন্দবাবু জানান, তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় শিকার উৎসবের সময় হাজির থেকে দেখেছেন, অংশগ্রহণকারীদের মতে এটা তাদের কাছে ফূর্তির একটি দিন। অর্থাৎ আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের শিকার উৎসবকে ঢাল করে আসলে বন্যপ্রাণী মারার এক অন্য খেলা জেলায় জেলায় চলছে। বিশেষ করে বিভিন্ন জায়গায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষরা কোনও অন্তঃসত্ত্বা প্রাণী বা বাচ্চাদের নিয়ে থাকা মা প্রাণীদের হত্যা করে না। কিন্তু এখন বিভিন্ন জেলায় যে শিকার উৎসব চলছে, তাতে কোনও প্রাণীকেই রেহাই দেওয়া হচ্ছে না। আর আগেকার দিনে শিকার উৎসবে মূলত বন্য শুকর এবং খড়গোশের শিকার করা হতো। কিন্তু এখন যে কোনও প্রাণীই হত্যা করা হচ্ছে। বহু ক্ষেত্রে প্রাণীদের আবার শিকার করা হয় না। ফাঁদ পেতে জ্যান্ত অবস্থায় ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই ঘটনাতেই স্পষ্ট, সেই প্রাণীগুলির সঙ্গে পরবর্তীকালে কী করা হতে পারে। তাঁর আরও দাবি, তিনি বহু জায়গাতেই শিকার উৎসব চলাকালীন উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যেকটি জায়গাতে হাজার পাঁচেকের বেশি মানুষ এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু তাদের মধ্যে ৩০¬-৪০ শতাংশ মানুষই আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত নয়। এদের দাবি ফূর্তির জন্যই তারা এই উৎসবে আসেন। রীতিমতো গাড়ি করে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত এমনকী অন্য জেলা থেকেও এইসব লোক শিকার করতে আসছেন জঙ্গলে।
সংগঠনের আর এক সদস্য তথা বন্যপ্রাণ নিয়ে কাজ করা শুভ্রজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় বলেন, শুধু বনদপ্তরের পক্ষ থেকে এই শিকার উৎসব আটকানো সম্ভব নয়। বিশেষ করে যেখানে হাজার হাজার মানুষ অস্ত্র নিয়ে শিকার করতে যাচ্ছে, সেখানে পুলিস সহ জেলা প্রশাসনকেও এগিয়ে এসে পদক্ষেপ করতে হবে। আইনে তার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। তাই তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। আদালত পদক্ষেপ করতে কড়া নির্দেশ দিয়েছে। তাই তাঁরা আশাবাদী এবার হয়ত প্রশাসন একটু নড়েচড়ে বসবে। বনদপ্তরের বন্যপ্রাণ শাখার এক কর্তা বলেন, বিষয়টি তাঁদেরও নজরে রয়েছে। এবছরও বহু প্রাণীই হত্যা করা হচ্ছে। পুলিস এবং জেলা প্রশাসনের সাহায্য চেয়েও বহু ক্ষেত্রে পাওয়া যাচ্ছে না। হাইকোর্টের নির্দেশের পর এবিষয়ে কার্যকরি পদক্ষেপ হবে বলে তাঁরা আশাবাদী।