নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর: আজ মহালয়া। পিতৃপক্ষের অবসানের পর দেবীপক্ষের সূচনা। আর সেইসঙ্গে বাঙালির উৎসবেরও। বছরভর অপেক্ষা তো এই চারটে দিনের। এই পুজোয় আবার অষ্টমী-নবমী একসঙ্গে পড়ে যাওয়ায় একদিনের আনন্দে কোপ পড়েছে। আম বাঙালি অবশ্য বের করে ফেলেছে বিকল্প পথও। পুজো তাই শুরু আজ, মহালয়াতেই। বহু পরিবারই প্ল্যান সেরে ফেলেছেন প্যান্ডেল হপিংয়ের। আর মানুষের এই উৎসবের আবহ একশো গুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে মঙ্গলবার শ্রীভূমিতে এসে উৎসবের ঢাকে কাঠি দিলেন তিনি। বলে গেলেন, ‘পুজোর জন্য আমরা এক বছর অপেক্ষা করে থাকি।’ মুখ্যমন্ত্রী পুজোর উদ্বোধন না করলেও তাঁর উপস্থিতিতেই পুজোর আমেজ শ্রীভূমিজুড়ে। তিনি আসা মাত্র ঝলমলিয়ে জ্বলে উঠল মণ্ডপের আলো। রাস্তার দু’ধারে চন্দননগরের আলোকসজ্জা তখন জানান দিচ্ছে, পুজো এসে গিয়েছে। রাস্তার দু’ধারে নৃত্য, বাংলার বাদ্যযন্ত্রের বোলে স্বাগত জানানো হল মুখ্যমন্ত্রীকে। মঞ্চ থেকে তাঁর বার্তা, ‘দেবীপক্ষ পড়েনি। তাই পুজোর উদ্বোধন করব না।’ ওই মঞ্চ থেকে শ্রীভূমির কর্ণধার তথা দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু জানালেন, ‘বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় শ্রীভূমির মণ্ডপের দ্বারোদঘাটন। তারপরই দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারবেন।’ অর্থাৎ বেজে উঠল আলোর বেণু। আজ, বুধবার উৎসবের উৎসাহকেই শিখরে নিয়ে যাবেন মমতা। উদ্বোধন করবেন শতাধিক পুজোর। উপস্থিত থাকবেন কয়েকটিতে। বাকি ভার্চুয়াল।
তিনি মুখ্যমন্ত্রী। দিনভর পাহাড়প্রমাণ ব্যস্ততা। অবসর নেই অভিধানে। তার মধ্যেও ফাঁক খুঁজে নেন নিজের জন্য। টালির ছাউনির নীচে তাঁর কালি, কাগজ, মন এক হয়ে যায়। পুরনো শিল্পসত্তার টানেই বেরিয়ে আসে শতশত শব্দ, অক্ষরের। মুখ্যমন্ত্রীর কথা ও সুর নিয়ে আজ প্রকাশিত হচ্ছে ১০টি বাংলার গানের অ্যালবাম—‘অঞ্জলি’। নচিকেতা, শ্রীরাধা, রাঘব, ইন্দ্রনীল, অদিতি সহ নামী শিল্পীদের কণ্ঠে শোনা যাবে মুখ্যমন্ত্রীর গান। শ্রীভূমিতেই এদিন বলছিলেন, ‘দু’বছর গান শিখেছি। তারপর বাবা হারমোনিয়াম বিক্রি করে দেন।’ ছোট্ট এই একটি বাক্যই জানান দেয়, রাজনীতির আঙিনার ফায়ার ব্র্যান্ড, অগ্নিকন্যারও মন খারাপ হয়! বাম-রাম আর অতি বামদের সমালোচনার আতসকাচের নীচে দিনভর ‘বিশ্লেষিত’ হন তিনি। তাঁর বাচনভঙ্গি, চলনবলন থেকে পরনের শাড়িটুকুও। আর জি কর কাণ্ডে সমাজমাধ্যমের সমালোচনা সহ্য করেন, ঠান্ডা মাথায় পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়ান, প্রশাসন সামলান, প্রাধান্য দেন দলকেও। এবং দিনের শেষে শেষ হাসি তাঁরই। আর তা শুধু মানুষের জন্য। কারণ, যে দুর্গাপুজোর সঙ্গে লক্ষ লক্ষ মানুষের রুজি-রুটি জড়িয়ে, তাকে তিনি ভোলেন না। সমাজমাধ্যমে কাঁটাছেঁড়া আর চরিত্রহনন শালীনতার সব সীমা ছাড়িয়ে গেলেও তিনি মনে রাখেন বন্যাদুর্গত মানুষদের। বলেন, ‘ডিভিসির জন্য দক্ষিণবঙ্গে, নেপালের কোশী নদীর জলে উত্তরবঙ্গে বন্যা হয়েছে। আমরা পর্যাপ্ত ত্রাণ পাঠাচ্ছি। মানুষের মুখে হাসি না থাকলে তো দেবীর মুখেও হাসি থাকে না।’ পুজো অনুদান প্রসঙ্গে বার্তা দেন, ‘অনেকে বলে, ওই টাকা দিয়ে কী হবে? কিন্তু ৮৫ হাজার টাকা অনেক পুজোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এটা অনুদান নয়। উৎসাহ।’
মহালয়ার ভোরে রেডিওতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠ মুড তৈরি করে দেয় উৎসবের। এবার এই উৎসব নিয়ে নানাবিধ কটাক্ষ এবং প্রচার চললেও আম জনতা যে পুজোর আনন্দে ভাসতে প্রস্তুত, তার প্রমাণ দিয়েছে মঙ্গলবারের শহরও। ছন্দ পেয়েছে কলকাতা। বিদেশ থেকেও এসে পড়েছেন বহু মানুষ। এই পুজোর টানে। তাঁরা হাঁটছেন শহরে। প্যান্ডেলেদ। উৎসবেও।