নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: পুজো করতে গিয়ে শাড়িতে আগুন লেগে যাওয়া, বয়স্ক বাবা-মায়ের কারও চোট পাওয়া, হঠাৎ বুকে ব্যথা, অতিরিক্ত খাওয়াদাওয়ার পর বমি বা অসুস্থ বোধ করা— পুজোর দিনগুলিতে এমন ধরনের বিপদ যাতে ভুলেও না হয়, এখন থেকেই এমন কামনা করছেন সাধারণ মানুষ।
‘সপ্তমী থেকে দশমী, ক্যালেন্ডারে ১০ থেকে ১২ অক্টোবর। ঈশ্বর করুন যেন কারও বিপদ আপদ না হয়। তাহলে অশেষ ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হবে সাধারণ মানুষকে। এমন হলে কোথায় যাব আমরা? প্রাইভেটে গেলে হয়তো দেখা যাবে বহু চিকিৎসক বেড়াতে গিয়েছেন, নয়তো ছুটিতে। আর সরকারি জায়গায় তো জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতি ডেকে বসে আছেন। ওই সময় পরিবারের কারও বড় বিপদআপদ হলে কী হবে? আন্দোলনরত অল্পবয়সি ভাইবোনদের বহু দাবির প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েও বলছি, মানুষের ভোগান্তির কথাগুলিও তোমরা ভেবে দেখো। পুজোয় আনন্দের দিনে যাঁদের পরিবারে বয়স্করা আছেন, অসুস্থ রোগী আছেন, সমস্যায় পড়লে তাঁরা কোথায় যাবেন? আক্ষেপ করে বলছিলেন সিনিয়র আইটি পেশাদার তমোজিৎ রায়। সমাজের যে অংশের মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন পেয়ে এসেছেন আন্দোলনকারীরা, তমোজিৎবাবুরা তারই প্রতিনিধি। তাঁরাও এখন বুঝছেন, পুজোয় হাসপাতালে কর্মবিরতি হলে কতটা বিপদে পড়তে পারেন সাধারণ মানুষ।
আর এক পেশাদার সুবর্ণ সাহা বলেন, সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে সিনিয়র চিকিৎসকরা তো আছেন। তাও বলব, উৎসবের আনন্দের দিনগুলির মধ্যে কারও যদিও বিপদ ঘটে, তাহলে কী অবস্থা হতে পারে, সেটা ভুক্তভোগীরাই জানেন। আমার অনুরোধ, জুনিয়র ডাক্তাররা অবিলম্বে ইমার্জেন্সি চালু করুন। সমাজকর্মী অচিন্ত্য লাহা বলেন, চিকিৎসা পরিষেবা ইমার্জেন্সি সার্ভিস। আর বিপদের ধনী-দরিদ্র হয় না। মানুষের জন্য ছোটাছুটি করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, পুজোয় কারও মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি হলে কত বড় বিপদ হতে পারে। জুনিয়র ডাক্তারদের অনুরোধ করব, উৎসবের দিনগুলিতে মানুষের পাশে থাকুন। ইমার্জেন্সি পরিষেবা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করবেন না। অভিনেতা বনি সেনগুপ্ত বলেন, ‘আন্দোলন চলুক। কিন্তু মানুষও যেন পরিষেবা পান। তাঁদের কি দোষ? তাঁরা কেন পরিষেবা পাবেন না?’
এই পরিস্থিতিতে অনড় জুনিয়র চিকিৎসকরা মুর্মূষু রোগীদের সঙ্গে কতটা ন্যায়বিচার করছেন, সেই প্রশ্ন উঠছে। অনেকে পাল্টা যুক্তি ইতিমধ্যেই পেশ করে জানিয়েছেন, সরকারি হাসপাতালে তো সিনিয়র চিকিৎসকরা আছেন। তাঁরা বিপদ সামলে নেবেন। প্রশ্ন হল, কতজন আছেন? প্রয়োজনের তুলনায় কতজন? জুনিয়ররা ইমার্জেন্সি সার্ভিস না করায় মঙ্গলবার দুপুরে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের কর্তাদের কাছে ছুটে যান ইমার্জেন্সিতে কর্মরত মেডিক্যাল অফিসাররা। সাফ সাফ জানান, পরিস্থিতি এমন চললে তাঁদের পক্ষে ইমার্জেন্সিতে কাজ করা কঠিন হবে। এই পরিস্থিতিতে ইমার্জেন্সিতে লোকবল বাড়াতে আজ বৃহস্পতিবার থেকে ক্লিনিক্যাল নয়, এমন বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসকদের ইমার্জেন্সি ডিউটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর জি কর।