বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিশেষ নিবন্ধ

নির্মলার বাজেট এবারও কি হতাশ করবে?
পি চিদম্বরম

অর্থনীতির অন্য শুভাকাঙ্ক্ষীদের মতো, আমিও বার্ষিক কেন্দ্রীয় বাজেটের প্রাক্কালে সবসময় পড়াশোনার পাশাপাশি মতামত দিই এবং লেখালিখিও করি। তবে, বেশিরভাগ বাজেটের দিনেই সংসদ ভবন ছেড়ে আসতে হয় একরাশ হতাশা নিয়েই।
অতঃপর, আমি ফিরে যাই সাধারণ মানুষের কাছে। কথাবার্তা হয় বিধায়ক, অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, কৃষক, মহিলা, যুবক-যুবতী এবং সর্বোপরি দলীয় কর্মী ও বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিদের সঙ্গে। শেষোক্ত ব্যক্তিরা আমাকে একেবারে তৃণমূল স্তরের খবরাখবর দেয়। বিশেষ করে প্রতিক্রিয়া উঠে আসে হাটে-বাজারের স্থানীয় মানুষের আড্ডা থেকে।  গত একদশ যাবৎ, কার্যত প্রতিবছরই খেয়াল করছি যে বাজেটের ‘ঘোষণাগুলি’ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। সেসব গুরুত্ব হারাচ্ছে সাধারণ মানুষের আড্ডাতেও।   

ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জ 
বাজেট নিয়ে সাধারণের মধ্যে এই হতাশার প্রধান কারণ হল, বাজেট যাঁরা তৈরি করছেন তাঁদের সঙ্গে মাটির-বাস্তবের কোনও যোগাযোগ নেই। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বাস্তব মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন তাঁরা। ২০২৪-২৫ সালের কথা ধরা যাক। এই সময়কালের জন্যই বাজেট পেশ হতে চলেছে আগামীকাল মঙ্গলবার (২৩ জুলাই)। অর্থনৈতিক পরিস্থিতির একটি বাস্তব মূল্যায়নে এটাই প্রকাশিত হবে যে:
•  যুব সমাজ, সমস্ত পরিবার ও সামাজিক ক্ষেত্রে শান্তির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের নাম বেকারত্ব। পদ রয়েছে কয়েক হাজার। তার মধ্যে শূন্যপদ মাত্র কয়েক ডজন। কিন্তু তার জন্যই আবেদন জমা পড়ছে লক্ষ লক্ষ প্রার্থীর। একটি লিখিত পরীক্ষা এবং ইন্টারভিউ দিতে হাজিরও হচ্ছেন তাঁদের সকলে। এই আবহেই ঘটে যাচ্ছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো ভয়াবহ ঘটনা। চলছে ঘুষের লেনেদন। বেগতিক বুঝে অনেক ক্ষেত্রে চাকরির পরীক্ষা বা ইন্টারভিউ শেষ মুহূর্তে বাতিলও হচ্ছে। এমন ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগের মধ্যেই পড়তে হয় এই বেকার বাহিনীকে। এগুলিই হল একটি বিস্ফোরক বেকার পরিস্থিতির প্রত্যক্ষ পরিণতি। বিশেষজ্ঞ সংস্থা সিএমআইই’র মতে, বেকারত্বের সর্বভারতীয় হার এখন ৯.২ শতাংশ।  কিছু কাজের সুযোগ নাকি বেড়েছে কৃষি ক্ষেত্রে (সত্যিকার অর্থে যেটা ছদ্মবেকারত্ব), নির্মাণ শিল্পে (যদিও তা অনিয়মিত) এবং গিগ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে (মানে মুক্ত অর্থনীতিসুলভ স্বল্পদিনের পার্টটাইম টাইপের কাজে, যেসব কাজের কোনও গ্যারান্টি নেই)। 
অল্পবয়সি ছেলেমেয়েরা সেই ধরনের স্থায়ী চাকরি চান যাতে কাজের মেয়াদ এবং ন্যায্য মজুরির নিশ্চয়তা নিরাপত্তা রয়েছে। এমন কাঙ্ক্ষিত কাজ বা চাকরি অবশ্য সরকার এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলিতেই পাওয়া সম্ভব। ২০২৪ সালের শুরুতে, এই ধরনের ১০ লক্ষ শূন্যপদ ছিল। নরেন্দ্র মোদির কেন্দ্রীয় সরকার ওই শূন্যপদগুলি পূরণ করতে চায়, তার কোনও প্রমাণ মেলেনি। চনমনে ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টর এবং ফিনান্সিয়াল সার্ভিস, আইটি বা তথ্য-প্রযুক্তি, শিপিং, অসমারিক বিমান পরিবহণ, হসপিটালিটি, হেলথকেয়ার বা স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা এবং রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের মতো ‘হাই-ভ্যালু’ সার্ভিস সেক্টরে এই ধরনের কাজ বা চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করা যেতেই পারে। ম্যানুফ্যাকচারিং আউটপুট জিডিপির মাত্র ১৫ শতাংশেই থমকে রয়েছে। কারণ ভারতীয় শিল্পপতি বা বণিকদের তরফে এই ক্ষেত্রে পুঁজি বিনিয়োগে চরম অনীহা দেখা গিয়েছে। ম্যানুফ্যাকচারিং এবং ‘হাই-ভ্যালু’ সার্ভিস সেক্টরে দ্রুত সম্প্রসারণের জন্য জরুরি হল আর্থিক নীতি নতুনভাবে ঠিক করা। ওইসঙ্গে আরও দরকার, বিদেশি বিনিয়োগ এবং বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধির পক্ষে উপযোগী সাহসী পদক্ষেপ। 
• অন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জের নাম মূল্যবৃদ্ধি বা মুদ্রাস্ফীতি। সরকারের পরিমাপ অনুযায়ী, পাইকারি মূল্যস্ফীতি ৩.৪ শতাংশের মতো চড়া। একই সময়ে কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স বা সিপিআই মূল্যস্ফীতি ৫.১ শতাংশ এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৯.৪ শতাংশ হয়েছে।  যেহেতু ভারতের সব জায়গায় পণ্য ও পরিষেবা অবাধে পাঠানো যায় না, তাই হার স্থান বিশেষে নানারকম। দাম এরাজ্যে একরকম তো অন্য রাজ্যে আর-এক রকম। এমনকী, একই রাজ্যের ভিতরেও নানা শহর বা অঞ্চলেও দামের তফাত লক্ষণীয়। যেসব জেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো সেখানকার সঙ্গে এবং অনুন্নত প্রান্তিক জেলাগুলিতে জিনিসপত্র ও পরিষেবার দামের হেরফের ঘটে। সম্ভবত জনসংখ্যার শীর্ষ ২০-৩০ শতাংশকে বাদ দিলে দেশের বাকি প্রতিটি পরিবারই মুদ্রাস্ফীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে ক্ষুব্ধ এবং বেশিরভাগই খেপে রয়েছে। 
বাজেট ভাষণ ও বরাদ্দের ভিতরে বেকারত্ব এবং মূল্যবৃদ্ধি মোকাবিলার জন্য যতটুকু বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ দেখতে পাবেন, তাতে আপনার সন্তুষ্টির মাত্রা অনুযায়ী আপনি বড় জোর ৫০ নম্বর দিতে পারেন। 

অন্য দুটি চ্যালেঞ্জ
বাকি ৫০ নম্বর বরাদ্দ করা যেতে পারে শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং জনগণের জন্য অন্যসকল অগ্রাধিকারের নিরিখে। আমাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার মান যতদিন নিম্ন থাকবে ভারত ততদিন ‘উন্নত’ দেশের পংক্তিতে পৌঁছবে না।  শিক্ষার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল স্কুলশিক্ষার চিত্রটি। স্কুলশিক্ষার নিঃসন্দেহে বিস্তৃতি ঘটেছে, কিন্তু তা অতিশয় নিম্নমানের। বাস্তব এটাই যে, একটি শিশু গড়ে সাত-আট বছর স্কুলে কাটায়। তব সত্ত্বেও প্রায় অর্ধেক শিশু কোনও একটি ভাষায় তার পাঠ্য অতিসাধারণ বিষয়ও ঠিকমতো পড়ার ও লেখার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে না। সাধারণ পাটিগণিতের অঙ্কেও তাদের একেবারে ল্যাজেগোবরে অবস্থা। স্কিলড জব বা যে চাকরিতে বিশেষ দক্ষতা জরুরি, সেইসব কাজের জন্য এরা মোটেই উপযুক্ত নয়। কয়েক হাজার স্কুল রয়েছে যেখানে শিক্ষকের সংখ্যা মাত্রই এক! স্কুলগুলিতে পড়ার ঘর, শৌচাগার এবং শিক্ষা-উপকরণের ঘাটতি মারাত্মক। এরপর লাইব্রেরি এবং ল্যাবরেটরির পরিস্থিতি নিয়ে ভাববার অবকাশ কোথায়? এই মৌলিক সমস্যাগুলির সমাধানের ব্যবস্থা কেন্দ্রকেই করতে হবে। এজন্য সর্বতোভাবে সাহায্য করতে হবে রাজ্যগুলিকে। বিতর্কিত জাতীয় শিক্ষানীতি কিংবা কেলেঙ্কারি-জর্জরিত এনটিএ/নিট-এর ধুয়ো তুলে মানবসম্পদ এবং অমূল্য সময় নষ্ট করা অনুচিত।
স্বাস্থ্য পরিষেবা ভালো কিন্তু মোটেই পর্যাপ্ত নয়। যদি পরিমাণের কথা বলেন, তো বলব যে পাবলিক হেলথকেয়ার পরিমাণগতভাবে বাড়ছে কিন্তু তার গুণমান একেবারেই তেমন নয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের ন্যাশনাল হেলথ এক্সপেনডিচার অ্যাকাউন্টস বা এনএইচএই অনুসারে, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ব্যয় হয় প্রায় ৪৭ শতাংশ। আকারে এবং গুণমানে উভয় ক্ষেত্রেই শ্রীবৃদ্ধি ঘটছে বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার। তবে তা বেশিরভাগ মানুষের সাধ্যের বাইরে। সার্বিক চিত্র এটাই যে—ডাক্তার, নার্স, মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান এবং রোগনির্ণয়ের যন্ত্রপাতি প্রভৃতির যে ঘাটতি রয়েছে তা মারাত্মক। স্বাস্থ্য পরিষেবায় কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যয় কমেছে দুই দিক থেকেই। জিডিপির অনুপাত ধরলে তা কমে হয়েছে ০.২৮ শতাংশ। অন্যদিকে, মোট ব্যয়ের অনুপাতে নেমে গিয়েছে ১.৯ শতাংশে (সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডয়া, ১৫ জুলাই, ২০২৪)। সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে সাধারণ মানুষ মোটেই খুশি নয়।

কষিয়ে থাপ্পড় 
অন্যান্য লোকের অগ্রাধিকারগুলি হল—থমকে থাকা মজুরি, ক্রমবর্ধমান পারিবারিক ঋণ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবহার কমে যাওয়া, ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের (এমএসপি) আইনি গ্যারান্টি, শিক্ষাঋণের বোঝা এবং অগ্নিপথ প্রকল্প। এই চ্যালেঞ্জগুলির সমাধান এটাই যে, ন্যূনতম মজুরি দৈনিক ৪০০ টাকা করতে হবে, দিতে হবে এমএসপির জন্য লিগাল গ্যারান্টি, মকুব করে দিতে হবে শিক্ষাঋণ এবং তুলে দিতে হবে সেনা বাহিনীতে জওয়ান নিয়োগের অগ্নিপথ নামক প্রকল্পটি।
উপর্যুক্ত বিষয়গুলি নিয়ে সরকারের চরম অবহেলা ও মশকরার পরিণামে এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির আসন জয়ের ক্ষেত্রে বিরাট বিপর্যয় ঘটে গিয়েছে। যদিও তাতে বিজেপিকে অনুতপ্ত বলে মনে হয়নি। কেননা, সরকার তার ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিস্ট, ট্রিকল-ডাউন, ক্যাপিটাল বায়াসড অ্যান্ড প্রোটেকশনিস্ট’ মডেল থেকে দেশকে বের করে আনার ব্যাপারে জনসাধারণের সামনে না-দিয়েছে বিবৃতি, না-ইচ্ছা প্রকাশ করেছে অন্যভাবেও।  এমাসে অনুষ্ঠিত ১৩টি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনেও ভোটাররা বিজেপিকে আরও কষিয়ে একটা থাপ্পড় দিয়েছে। এই ভোটে বিরোধীদের মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’ জিতেছে দশটি আসনে। ‘ইন্ডিয়া’ জোটের দলগুলির ভোট শেয়ারের যে বৃদ্ধি ঘটেছে সেটিও রীতিমতো নাটকীয় (দ্য হিন্দু, ১৭ জুলাই, ২০২৪)। আসন্ন কেন্দ্রীয় বাজেট কি দেওয়াল লিখন অনুযায়ী সাড়া দেবে? পাঠক, আশা ছাড়বেন না। 
 লেখক সাংসদ ও ভারতের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী। মতামত ব্যক্তিগত
6Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

হস্তশিল্পীদের কর্মোন্নতি ও নতুন কর্মের সুযোগ লাভের সম্ভাবনা। পেশাদার ডাক্তার, আইনজীবী ও অধ্যাপকদের পক্ষে দিনটি...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৭৮ টাকা৮৭.৫২ টাকা
পাউন্ড১০৩.৬৮ টাকা১০৭.৩৮ টাকা
ইউরো৮৭.৬০ টাকা৯০.৯৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা