বিশেষ নিবন্ধ

এবার অন্তত সফল হোক সিবিআই
তন্ময় মল্লিক

উই ওয়ান্ট জাস্টিস। ১০ আগস্ট থেকে উচ্চারিত হচ্ছে এই একটাই স্লোগান। ভয়াবহ নৃশংসতার বলি হয়েছেন বাংলার চিকিৎসক-কন্যা। তাই তার বিচার চাইছে গোটা দেশ। সকলেরই দাবি, বিচার চাই। আন্দোলন করছেন অনেকেই, কিন্তু লক্ষ্য তাদের ভিন্ন ভিন্ন। চিকিৎসকরা চাইছেন খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ ও নিরাপত্তা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন দোষীর ফাঁসি। কিন্তু বিরোধীরা? তারা নেমে পড়েছে ঘোলাজলে মাছ ধরতে। পরপর নির্বাচনে প্রত্যাখ্যাত বিরোধীরা বুঝেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভোটে হারানোর ক্ষমতা তাদের নেই। তাই একটা নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডকে নির্লজ্জের মতো রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগাতে উঠেপড়ে 
লেগেছে। তাদের কাছে তরুণী চিকিৎসকের খুনির শাস্তির চেয়েও বড় মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ। তাই তাদের স্লোগানও ভিন্ন, ‘দাবি এক দফা এক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ।’
৯ আগস্ট আর জি করে তরুণী চিকিৎসকের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সামনে আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিস। এই ঘটনায় আর কেউ যুক্ত কি না, তা বের করার জন্য আরও তদন্তের দরকার ছিল। তারজন্য দিন চারেক সময় চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার আগেই আদালতের নির্দেশে তদন্তভার গিয়েছে কেন্দ্রীয় এজেন্সির 
হাতে। ফলে জাস্টিস দেওয়ার যাবতীয় দায় এবং দায়িত্ব এখন সিবিআইয়ের।
সিবিআই তদন্তভার নেওয়ায় শুধু চিকিৎসক বা আন্দোলনকারীদের একটা বড় অংশই নয়, মৃত চিকিৎসকের মা, বাবাও কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন। তাঁরা মনে করেছিলেন, কেন্দ্রীয় এজেন্সি তদন্ত করলে শুধু সুবিচার নিশ্চিত হবে না, প্রক্রিয়াও দ্রুত হবে। কিন্তু দিন যত গড়াচ্ছে সিবিআইকে ঘিরে হতাশা ততই বাড়ছে। কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্ত এখনও পর্যন্ত ডাকাডাকি, হাঁকাহাঁকি ও পুলিসের খুঁত খোঁজার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। নতুন কোনও তথ্য তারা বের করতে পারেনি। বের করলেও জনসমক্ষে আসেনি।
সিবিআই তদন্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও আপত্তি ছিল না। তিনি সিবিআইকে দায়িত্ব দেওয়ার আগে ক’টা দিন দেখে নিতে চাইছিলেন। তাঁকে সেই সুযোগটা দিলে বিরোধীদেরই রাজনীতি করার পরিধিটা আরও প্রশস্ত হতো। মুখ্যমন্ত্রী নিজে তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইকে দিলে বিরোধীরা বলতে পারত, কলকাতা পুলিস ‘অপদার্থ’। পাশাপাশি রাজ্যের হাতে তদন্ত থাকলে আন্দোলনের ঝাঁঝ আরও তীব্র করতে পারত। তারা হয়তো ভেবেছিল, সিবিআই তদন্ত করলে বড় বড় মাথাদের ঘাড় ধরে জেলে ভরে দেবে। কিন্তু তেমনটা হল না। তবে তদন্তভার হাতে নেওয়ায় ‘জাস্টিস’ দেওয়ার দায় এখন সিবিআইয়েরই। 
এর আগে ঝালদার তপন কান্দু হত্যাকাণ্ড, বগটুই গণহত্যার তদন্ত করেছে সিবিআই। সবক্ষেত্রেই পুলিসের রাস্তাতেই হেঁটেছে তাদের তদন্ত। কোনও অন্যথা হয়নি। আর জি কর কাণ্ডে তার ব্যতিক্রম হবে কি না, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। জাস্টিস পাওয়ার জন্য শুধু আন্দোলনকারীরা নয়, গোটা দেশ মুখিয়ে রয়েছে। এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের খলনায়ক সঞ্জয় একা, নাকি পিছনে আরও কেউ, তা জানার জন্য মানুষ উদগ্রীব। কিন্তু এক্ষেত্রেও যদি নারদ ও সারদা কাণ্ডের মতো তদন্ত গড়ায়! টানা হয় ২০২৬ সালের ভোট পর্যন্ত। তাহলে অমিত শাহের এই দপ্তরটির দিকে আঙুল উঠবেই। আর তারজন্য তো তৈরিই আছে সিপিএমের ‘সেটিং’ তত্ত্ব। 
জয়েন্ট এন্ট্রাস বা নিটের মতো কঠিনতম পরীক্ষা দিয়ে যাঁরা চিকিৎসক হয়েছেন তাঁরা যে মেধাবী, তা বলাই বাহুল্য। একই সঙ্গে তাঁরা বিচক্ষণও। তাই তাঁরা প্রথম থেকেই রাজনৈতিক সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছেন। কোনও দলকে তাঁদের ঝান্ডা নিয়ে আন্দোলন মঞ্চের ধারেকাছে ঘেঁষতে দেননি। ফলে চিকিৎসকরাই হয়ে ওঠেন আন্দোলনের মুখ। দিনের পর দিন সংবাদপত্রে বা টিভির পর্দায় ছিল তাঁদেরই উপস্থিতি। সেটা দিনরাত টিভির ফুটেজ খেতে অভ্যস্ত রাজনীতির কারবারিদের সহ্য না হওয়ারই কথা। তাই তারা গণআন্দোলনের ছটা গায়ে মাখার জন্য ছটফট করছিল। কিন্তু সুযোগ পাচ্ছিল না। তাই ‘আন্দোলনকারীদের পাশে আছি’ এই জাতীয় বিবৃতি দিয়ে কোনও রকমে টিকে ছিল। কিন্তু কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া লোকজনের কি ‘ডায়েট’ ভালো লাগে?
কৌশলী সিপিএম সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করে পর্দার আড়াল থেকে আন্দোলনে অক্সিজেন জোগাচ্ছিল। তাতে আন্দোলনকারীদের একাংশের সঙ্গে সিপিএমের একটা অদৃশ্য যোগসূত্রও তৈরি হয়েছে। সেটা বঙ্গ বিজেপির পক্ষে কি মেনে নেওয়া সম্ভব? মোটেই না। কারণ বিজেপি জানে, বঙ্গে সিপিএমের শক্তিতেই তারা বলীয়ান। পারস্পরিক সম্পর্কটা ব্যস্তানুপাতিক। একজন উঠলে অন্যজন নামবে। তাই ঘোমটার আড়াল সরিয়ে নেমে ঩
পড়েছে মঞ্চ বেঁধে। বিজেপি নেমে পড়ায় সিপিএম কিছুটা ব্যাকফুটে। অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, আন্দোলন হাইজ্যাক করায় ওস্তাদ বঙ্গ বিজেপি। আন্দোলনে রসদ জোগায় বামেরা। তার ফসল ঘরে তোলে গেরুয়া শিবির।
তবে, তরুণী চিকিৎসকের এই নির্মম মৃত্যু থেকে বিজেপি কতটা ফায়দা তুলতে পারবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। চিকিৎসকদের এই আন্দোলনকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মৃত তরুণী চিকিৎসকের বাড়ি যাওয়ায় এবং অপরাধীর ফাঁসির দাবি তোলায় সেই চেষ্টা মাঠে মারা গিয়েছে। অপরাধীর ফাঁসির দাবিতে শাসক দল রাজ্যজুড়ে নিয়েছে একের পর এক কর্মসূচি। তাতে আর জি কর কাণ্ডে জাস্টিসের দাবি হয়েছে সর্বজনীন। এই মুহূর্তে এটা কোনও গোষ্ঠীর বা দলের নয়, সারা বাংলার দাবি। গোটা দেশের দাবি। তাই বঙ্গ বিজেপি খুব একটা সুবিধে করতে পারবে না।
তাছাড়া বিজেপির গায়ে লেপ্টে আছে বিলকিস বানো কাণ্ডের কালো দাগ। মোদিজির গুজরাতে তাঁর পরিবারের আট সদস্যকে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় ১১জনকে সাজা দিয়েছিল আদালত। কিন্তু ২০২২ সালে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের দিন সাজাপ্রাপ্তদের ছেড়ে দিয়েছিল বিজেপি সরকার। তবে, শেষরক্ষা হয়নি। সুপ্রিম কোর্ট তাদের কলার 
ধরে ফের জেলে ঢুকিয়েছে। এহেন বিজেপি নারী সুরক্ষা নিয়ে জ্ঞান দেবে আর বাংলার মানুষ তা বিশ্বাস করবে, এমনটা ভাবা জাস্ট মূর্খামি। তাই বিজেপি চাইলেও ঘোলা জলে মাছ ধরতে পারবে না। তাদের জল ঘাঁটাই সার হবে।
আর জি করের ঘটনায় লজ্জায় হেঁট হয়েছে বাংলার মাথা। চিকিৎসকদের আন্দোলনে বিপুল সমর্থন রয়েছে সাধারণ মানুষেরও। কর্মবিরতির জেরে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রায় বিপর্যস্ত। প্রচণ্ড দুর্ভোগ হচ্ছে গরিব মানুষের। তবুও মানুষ আছে তাঁদের পাশেই। তবে, এই পরিস্থিতি তো দীর্ঘদিন চলতে পারে না। তাই সরকার ও আদালত সকলেই চাইছে, আন্দোলন চলুক, কিন্তু জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে যোগ দিন। 
দেশের সর্বোচ্চ আদালত বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মামলাটি গ্রহণ করেছে। আদালতের নির্দেশে আর জি করের নিরাপত্তায় এখন কেন্দ্রীয় বাহিনী। সরকারও জুনিয়র ডাক্তারদের অধিকাংশ দাবি মেনে নিয়েছে। অধ্যক্ষ, সুপার সহ বেশ কয়েকটি পদে পরিবর্তনও করা হয়েছে। পুলিসের অফিসারদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে ব্যবস্থা। উদ্দেশ্য, রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা দ্রুত স্বাভাবিক করা। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের দোরে দোরে ঘুরে হয়রান হওয়া গরিব মানুষগুলোকে জাস্টিস দেওয়া।
তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। বিচার চলছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে। এক্ষেত্রে জাস্টিস পাওয়া নিয়ে আন্দোলনকারীদের সংশয় থাকার কথা নয়। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির আবেদনে সাড়া দিয়ে এইমসের চিকিৎসকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু বাংলার চিকিৎসকদের একাংশ এখনও আন্দোলনে অনড়। কারণ পিছন থেকে আড়কাঠি নাড়ছে রাজনীতির কারবারিরা। তারা জানে, কর্মবিরতি উঠে গেলেই সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তাতে বাংলাকে ‘বাংলাদেশ’ বানানোর খোয়াব চুরমার হবে অচিরেই।
ন্যায়বিচারের দাবিতে চিকিৎসকরা যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন তা গণআন্দোলনে পরিণত হতে সময় নেয়নি। জাস্টিসের দাবিতে রাত জেগেছে রাজ্য। মাইলের পর মাইল হাঁটার পরেও ক্লান্তি করেছে ক্ষমা। এমন শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলন আগে দেখেনি বাংলা। দাবি একটাই, জাস্টিস। সেই জাস্টিস দেওয়ার গুরুদায়িত্ব এখন সিবিআইয়ের কাঁধে। বহু তদন্তেই নাকানি চোবানি খেয়েছে সিবিআই, হয়েছে ব্যর্থ। তাতে কেউ উল্লসিত হয়েছে, কেউ পড়েছে মুষড়ে। কিন্তু এই একটিবার গোটা বাংলা চাইছে, সফল 
হোক সিবিআই। শূলে চড়াক দোষীদের। তাই 
কোনও অজুহাত নয়, কোনও বাহানা নয়। জাস্টিস চাই। কারণ সন্তান হারানোর যন্ত্রণার পাথর বুকে চেপে অভাগা অভয়ার মা-বাবাও যে রয়েছেন সেই জাস্টিসেরই অপেক্ষায়!
20d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

বহু প্রচেষ্টার পর আটকে থাকা কাজের জটিলতা মুক্তি। কৃষিজ পণ্যের ব্যবসায় বিশেষ উন্নতি। আয় বাড়বে।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৫ টাকা৮৪.৮৯ টাকা
পাউন্ড১০৭.৭৯ টাকা১১১.৩৩ টাকা
ইউরো৯০.৯৫ টাকা৯৪.১৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা