বিশেষ নিবন্ধ

সেবি: মাধবীর পদত্যাগ ও নতুন তদন্ত জরুরি
পি চিদম্বরম

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়ার (সেবি) উদ্ঘাটিত কাহিনির প্রতি বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক দুনিয়ার দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছে।  শার্লক হোমস বলেছিলেন, ‘আপনি যদি পৌরাণিকতা, অতিনাটকীয়তা এবং হইচই বাদ দেন তবে আপনার কাছে পড়ে থাকবে কেবল কিছু নিখাদ বাস্তব (কোল্ড ফ্যাক্টস)।’ কাহিনিতে পৌরাণিকতা এটাই যে একটি সরকার সবসময় সাধারণ মানুষের স্বার্থে কথা বলে এবং কাজ করে। অন্যদিকে, অতিনাটকীয়তা এটাই যে, এই কাহিনি ছোট বিনিয়োগকারীর বিরুদ্ধে বৃহৎ ব্যবসাকে দাঁড় করিয়ে দেয় এবং দিনের শেষে ভয়াবহতাকে অবশ্যই এড়াতে হবে আমাদের। আর এ নিয়ে হইচইয়ের কারণ হল, অনেক লোক বিচিত্র কণ্ঠে কথা বলে এবং তার থেকে মোদ্দা প্রাপ্তি হয় কেবলই গোলমাল।
পৌরাণিকতা, অতিনাটকীয়তা এবং হইচই বাদ দিলেই আপনি সত্যের সন্ধান পাবেন। কেন্দ্রীয় প্রশ্ন এটাই যে, একটি ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর বিনিয়োগের উৎস কী? ওই গ্রুপটা কোনও প্রকার অন্যায় কাজ করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং তাদের দাবি হল, ওই গ্রুপের যাবতীয় অর্থবিত্ত বৈধ উপায়েই সংগৃহীত। যাঁদের সন্দেহ রয়েছে, তাঁরা অভিযোগ করেছেন যে, ওই টাকা ‘ওভার-ইনভয়েসিং’ এবং ‘রাউন্ড ট্রিপিং’-য়ের মাধ্যমে পাওয়া, অতএব ওই টাকা অবৈধ। বিষয়টির তদন্ত করে সেবি রিপোর্ট করেছে যে, তারা প্রাথমিকভাবে কোনও ‘দোষ’ পায়নি। কিন্তু যাঁদের সন্দেহ রয়েছে তাঁরা এতে সন্তুষ্ট নন। এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি সাপ্রের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটিকে তদন্ত করে একটি রিপোর্ট দিতে বলেছে।
কমিটি কী পেল
বিচারপতি সাপ্রে কমিটি কী খুঁজে পেয়েছে এবং যা খুঁজে পায়নি, তা গুরুত্বপূর্ণ। কমিটি দেখেছে যে ১২ জন বিদেশি পোর্টফোলিও ইনভেস্টর (এফপিআই) সহ মোট ১৩ জন বিদেশি বিনিয়োগকারী রয়েছেন। প্রতিটি এফপিআই-য়ের ‘বেনিফিসিয়াল ওনার’ কে তা প্রকাশ করা হয়েছে, কিন্তু চূড়ান্ত সুবিধাভোগীটি (‘বেনিফিসিয়াল ওনার’) কে—অর্থাৎ এই ব্যবস্থার শেষ স্বাভাবিক ব্যক্তিটির (দ্য লাস্ট ন্যাচারাল পার্সন ইন দ্য চেইন) সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। কিন্তু এই গোপনীয়তা কেন? তাহলে কি এটাই ধরে নিতে হবে যে, ‘লাস্ট ন্যাচারাল পার্সন’-এর কথা প্রকাশ করার প্রয়োজনীয়তা ২০২১৮ সালে শেষ হয়ে গিয়েছিল! তা সত্ত্বেও, সেবি দাবি করেছে যে, ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ১৩টি বিদেশি সংস্থার মালিকানার বিষয়ে তারা তদন্ত করেছে কিন্তু কোনও উত্তর খুঁজে পায়নি। কমিটি যে মন্তব্য করেছে সেটি বেশ তির্যক, ‘‘এই ধরনের তথ্য ব্যতীত সেবি নিজেকেই সন্তুষ্ট করতে অক্ষম। তাই যে-সন্দেহ তাকে ধরানো হয়েছে তাতে ক্ষান্ত দেওয়া যেতে পারে। সিকিউরিটিজ মার্কেটের নিয়ন্ত্রক একদিকে অন্যায়ের সন্দেহ করছে, আবার অন্যদিকে সহায়ক নিয়মের বিভিন্ন শর্তাবলির মধ্যে খুঁজে পাচ্ছে সম্মতি। সুতরাং, ‘মুরগি আগে না ডিম আগে’ গোছের একটা পরিস্থিতি প্রকাশ করছে এই সংক্রান্ত রেকর্ড।’’
প্রাসঙ্গিক প্রশ্নে যদি বিনিয়োগকারীরা বা তাদের সুবিধাভোগী মালিকরা (বেনিফিসিয়াল ওনার্স) বিনিয়োগ গ্রহণকারী সংস্থাগুলির (ইনভেস্টি কোম্পানিজ) সঙ্গে ‘সম্পর্কিত পক্ষ (রিলেটেড পার্টিজ)’ হয়, কমিটি দেখতে পায় যে ‘সম্পর্কিত পক্ষ’ এবং ‘সম্পর্কিত পক্ষের লেনদেনের (রিলেটেড পার্টি ট্রানজাকশন)’ শর্তাদি ২০২১ সালের নভেম্বরে উল্লেখযোগ্যভাবে সংশোধন করা হয়েছে। তবে সেই সংশোধনে কার্যকর ধরা হয়েছে ভবিষ্যৎ প্রভাবও (উইথ প্রসপেক্টিভ এফেক্ট)—কিছুটা ২০২২-এর এপ্রিল ১ থেকে এবং কিছুটা ২০২৩-এর ১ এপ্রিল থেকে! কমিটি এই ব্যাপারেও যে মন্তব্য করেছে তা সমান কঠোর, ‘সম্ভাব্যভাবে সুস্পষ্ট শর্তাবলি তৈরি করার পথ নেওয়ার পরে, সংশ্লিষ্ট পক্ষের লেনদেন পরিচালনাকারী বিধানগুলির (গভর্নিং রিলেটেড পার্টি ট্রানজাকশনস) অন্তর্নিহিত নীতিগুলি পরীক্ষা করার সম্ভাব্যতা (দ্য ফিজিবিলিটি অফ টেস্টিং দ্য প্রিন্সিপলস) নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’    
কমিটির চূড়ান্ত মন্তব্য হল, ‘... এর থেকে এটাই মনে হচ্ছে যে এফপিআই-গুলির মালিকানা কাঠামো নিয়ে সেবি’র লেজিসলেটিভ পলিসি বা আইনি নীতি একদিকে সরে গিয়েছে, যখন সেবিরই তরফে প্রয়োগ পদ্ধতি (এনফোর্সমেন্ট) চলে যাচ্ছে উল্টোদিকে।’
সেবি চালিয়ে যাচ্ছে 
তা সত্ত্বেও, সেবি ২৪টি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে তার তদন্ত জারি রেখেছে। কমিটির রিপোর্ট পেশ করার পর সুপ্রিম কোর্ট সওয়াল-জবাব শুনেছে, এবং গত ৩ জানুয়ারি এক আদেশের মাধ্যমে মান্যতাও দিয়েছে সেবি’র পদক্ষেপগুলিকে। ওইসঙ্গে আদালতের নির্দেশ, সেবি’কে তাদের তদন্ত শেষ করতে হবে তিনমাসের মধ্যে। কিন্তু তারপর সাতমাস কেটে গিয়েছে। 
কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট
সবাই ভেবেছিল যে শর্ট-সেলার এবং হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের অভিযোগগুলি গত জানুয়ারিতেই চিরবিশ্রামে চলে গিয়েছে। কিন্তু সেবি’র চেয়ারপার্সন মাধবী পুরী বুচ এবং তাঁর স্বামী ধবল বুচের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতেই শর্ট-সেলারদের ইস্যুটি এমাসে ফের খবরের শিরোনাম দখল করেছে। মাধবী পুরী বুচ ২০১৭ সালের এপ্রিলে সেবি’র হোল টাইম মেম্বার হিসেবে নিযুক্ত হন। তাঁর সেই মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পরে একটি সময়ের ব্যবধান গিয়েছে। অতঃপর, ২০২২ সালের ১ মার্চ তাঁকেই বসানো হয় সেবি’র চেয়ারপার্সন পদে। ২০১৮ এবং ২০২১-২৪ সালে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় মাধবী ছিলেন সেবি’তে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীর জায়গায় (ডিসিশন মেকিং পজিশন)।  
মাধবী পুরী বুচের বিরুদ্ধে ‘কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট’-এর অভিযোগ আনা হয়েছে। (উল্লেখ্য, ‘কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট’ হল সেই পরিস্থিতি, যখন একজন পদাধিকারীর পদস্থ কাজকর্ম বা সিদ্ধান্তসমূহ থেকে ব্যক্তিগত লাভালাভ অর্জিত হয়) এটাই প্রতীয়মান হয় যে—সেবি’র তদন্ত এবং বিচারপতি সাপ্রে কমিটির পর্যালোচনা হয়েছে যে বিষয় সম্পর্কে, তাতে মাধবী পুরী বুচ এবং তাঁর স্বামীর অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত ছিল। মাধবী পুরী বুচ তাঁর বিনিয়োগের কথা স্বীকার করে এই ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, ওই সমস্ত তখনই করা হয়েছিল যখন তিনি এবং তাঁর স্বামী ছিলেন ব্যক্তিগত নাগরিক (প্রাইভেট সিটিজেন)। সেবি’তে তাঁর নিয়োগ গ্রহণের পরই তাঁদের বিনিয়োগকৃত অর্থ তাঁরা ভাঙিয়ে (‘রিডিম’) করে নেন এবং সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলিও তারপর নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছে। 
মাধবী পুরী বুচের পক্ষ থেকে অন্যায় করা (রংডুয়িং) হয়েছে কিংবা বাস্তবেই তাঁদের ‘কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট’ ছিল কি না, সমস্যা কিন্তু সেটা নয়। সমস্যা সেটাও নয়, সরকার ব্যবসায়িক গোষ্ঠীকে রক্ষা করার জন্য মাধবী পুরী বুচকে রক্ষা করছে কি না। সমস্যাটি বরং একেবারে সোজাসাপ্টা, মাধবী পুরী বুচ কি তাঁর অতীত যোগাযোগ এবং ক্রিয়াকলাপ (পাস্ট কানেকশনস অ্যান্ড অ্যকাশনস) খোলসা করেছেন? সম্ভাব্য ‘কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট’-এর বিষয়টি কি তিনি—সেবি, সরকার, বিচারপতি সাপ্রে কমিটি এবং সুপ্রিম কোর্টের কাছে পরিষ্কার করে জানিয়েছেন? দৃশ্যত না। এমনকী, তদন্ত প্রক্রিয়া থেকেও নিজেকে সরিয়ে নেননি মাধবী। 
মাধবী পুরী বুচের সপক্ষে সমস্ত তথ্য অনুমান করেও বলেত হয় যে, অন্তত একটি গুরুতর এবং জবাবদিহিতার উপযোগী ভুল তিনি করেছেন। ব্যাপারটা তাঁর তরফে একবার প্রকাশ করে দেওয়া উচিত ছিল। আর উচিত ছিল, সংশ্লিষ্ট মামলাটি থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখা। তাঁর অংশগ্রহণ তদন্তকে কলঙ্কিত করেছে। তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে, এবং এই অভিযোগের তদন্ত করতে হবে নতুনভাবে।
• লেখক সাংসদ ও ভারতের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী। মতামত ব্যক্তিগত
25d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

বহু প্রচেষ্টার পর আটকে থাকা কাজের জটিলতা মুক্তি। কৃষিজ পণ্যের ব্যবসায় বিশেষ উন্নতি। আয় বাড়বে।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৫ টাকা৮৪.৮৯ টাকা
পাউন্ড১০৭.৭৯ টাকা১১১.৩৩ টাকা
ইউরো৯০.৯৫ টাকা৯৪.১৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা