উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
কমিউনিটি ট্রান্সমিশন কী?
অতিমারী নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনেই ছড়িয়ে পড়ে। করোনা সংক্রমণও একই পদ্ধতিতেই ছড়িয়েছে। প্রথম অবস্থায় বিদেশ থেকে সংক্রামিত কিছু মানুষ দেশে এসেছিলেন। তারপর তাঁদের সংস্পর্শে আসা মানুষজনের (প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি কনট্যাক্টস) মধ্যে সেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। তাঁরা আবার অন্যদের সংক্রামিত করতে থাকেন। এইভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার শৃঙ্খল তৈরি হয়। অতিমারীর শুরুর দিকে, চিকিৎসকরা রোগীকে প্রশ্ন করে বুঝতে পারেন, কীভাবে রোগী সংক্রামিত হয়েছেন। অর্থাৎ নতুন করে অসুস্থ হওয়া ব্যক্তি অন্য কোনও সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলেন কি না জানা যায়। সেক্ষেত্রে চিকিৎসা পদ্ধতি স্থির করা ও চিকিৎসা পরিষেবার কাঠামো প্রস্তুত করতে সুবিধা হয়।
অতিমারী তৈরি করতে পারে এমন মানুষগুলিকে খুঁজে বের করতে পারার (কনট্যাক্ট ট্রেসিং) বহু সুফল রয়েছে। প্রথমত, সংক্রমণের শৃঙ্খল দ্রুত ভেঙে ফেলা সম্ভব হয়। দ্বিতীয়ত, অসুস্থতা ও প্রাণহানি রোধ করা যায়। মুশকিল হল, যখন রোগীরা কীভাবে সংক্রামিত হলেন, তাই বুঝে ওঠা যায় না অর্থাৎ ‘ট্রেস’ করা যায় না, বুঝতে হয় সম্ভবত গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছে।
এবার দেশের পরিস্থিতির দিকে তাকানো যাক। প্রশ্ন হল, এদেশে যদি কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়, সেক্ষেত্রে কী কী পরিবর্তন করা দরকার। প্রথমদিকে যখন কোনও এলাকায় বেশ কিছু সংক্রমণ ধরা পড়ছিল, এলাকাটিকে কন্টেইনমেন্ট জোন হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছিল। একটি ক্ষেত্র ধরে ধরে ‘রেড জোন’, ‘অরেঞ্জ জোন’, ‘গ্রিন জোন’ এইভাবে ঘোষণা করা হচ্ছিল। সেইসব এলাকায় মানুষের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করা হল। রেড জোনে পরীক্ষা বেশি হল। বাড়ি বাড়ি অসুস্থ রোগীর খোঁজ নেওয়া হল। সংক্রামিতদের যথাসম্ভব বাকিদের থেকে আলাদা করে চিকিৎসাও দেওয়া হল। এখন এদেশে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হলে, এই ব্যবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হবে।
আপাতত দেখা যাচ্ছে, বেশ কিছু জায়গাতে বেশি বেশি সংক্রমণের খবর আসছে। এই সমস্ত ক্ষেত্রে গোষ্ঠী সংক্রমণ এড়াতে নির্দিষ্ট পাড়া বা আবাসনে এমন হলে ওই পাড়া বা আবাসনকে ‘ক্লাস্টার’ হিসেবে ধরতে হবে। বুঝতে হবে সেখানে ক্লাস্টার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে। সেক্ষেত্রে ওই আবাসনে বা পাড়ায় বাইরের কোনও লোক আর ঢুকতে পারবেন না এবং আবাসিকরাও এলাকার বাইরে বেরতে পারবেন না! আবাসনের বাকি বাসিন্দাদের যথাসম্ভব করোনা পরীক্ষা করা হবে ও দরকারমতো কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এই হিসেবে কোন কোন এলাকায় বেশি বেশি সংক্রমণ হওয়ার খবর আসছে, তা জেনে সেই এলাকাগুলিকে ‘হটস্পট’ হিসেবে ধরে নিয়ে সেখানে অবাধ চলাফেরায় রাশ টানতে হবে।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে এই ধরনের নিয়ম লাগু করার পরেও নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের দায়িত্ব রয়েছে সচেতন হওয়ার। নোভেল করোনা ধনী, দরিদ্র, ধর্ম, লিঙ্গ, শিক্ষিত, অশিক্ষিত ভেদ করছে না। এখনও না বুঝলে গোষ্ঠী সংক্রমণ সমস্ত জায়গায় হতে শুরু করবে এবং ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
সংক্রমণ আটকাতে কী কী নিয়ম?
এপ্রিলেই কি গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু?
এপ্রিল মাসে ইন্ডিয়ান জার্নাল অব মেডিক্যাল রিসার্চ-এ আইসিএমআর একটি সমীক্ষা প্রকাশ করে। দেশের ২০টি জেলা ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলজুড়ে করা ওই সমীক্ষায় ৪০ শতাংশ রোগীদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি! উঠেছিল প্রশ্ন, তাহলে কি দেশে তখনই গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছিল? চিত্র যাই হোক না কেন, কেন্দ্রীয় সরকার বা আইসিএমআর দেশে করোনার গোষ্ঠী সংক্রমণ নিয়ে এখনও সরকারি ঘোষণা করেনি। তবে সম্প্রতি কেরালার পর এ রাজ্যেও সরকারিভাবে ঘোষণা হচ্ছে, কিছু কিছু এলাকায় গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে, ১৮ জুলাই আইএমএ’র হসপিটাল বোর্ড চেয়ারম্যান ডাঃ ভি কে মোঙ্গা জানান, দেশে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছে। যদিও একদিনের মধ্যেই ভোল পাল্টে আইএমএ সেই খবর অস্বীকার করে। তবে এখন যা পরিস্থিতি, সরকারিভাবে গোষ্ঠী সংক্রমণ ঘোষিত হোক বা না হোক, সংক্রমণ রুখতে নিয়ম কানুন মানতে হবে অক্ষরে অক্ষরে।
সাধারণ নিয়ম
১. বাইরে বেরলে অন্য ব্যক্তির সঙ্গে ৬ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন। অচেনা ব্যক্তি বাড়িতে এলে বা বাড়িতে অসুস্থ ব্যক্তি থাকলে দূরত্ব বজায় রাখুন। তাঁর সামনে মাস্ক পরে থাকুন। তাঁরও মাস্ক পরেই অন্যের ঘরে ঢোকা উচিত। হাতে স্যানিটাইজার নিন বারবার। ২. বাইরে বেরলেই আগে নাক ও মুখ ঢেকে মাস্ক পরুন। সাধারণ মাস্কেই কাজ হবে। মাস্ক না থাকলে কোনও কাপড় অথবা রুমাল দিয়ে নাক ও মুখ ঢেকে রাখুন। ৩. বারবার সাবান জল দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া অভ্যেস করুন। হাত ধোয়ার সঠিক পদ্ধতি শিখে নিন। বাইরে থেকে ফিরে, মুখের মাস্কে হাত দেওয়ার পর, হাঁচি বা কাশির পর, প্রত্যেকবার রান্নার আগে ও খাওয়ার আগে, প্রতিবার নাকে-মুখে-চোখে হাত দেওয়ার আগে, শৌচাগার ব্যবহারের পরে সঠিকভাবে হাত ধুয়ে নিন। সঙ্গে সর্বক্ষণ অন্তত ৭০ শতাংশ অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার রাখুন। সাবান জল না পেলে স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। ৪. হাঁচি বা কাশির সময় রুমাল বা কোনও কাপড় বা ভাঁজ করা কনুই দিয়ে মুখ ঢাকতেই হবে। ৫. বাড়ি বা কর্মস্থলে টেবিল, দরজার হাতল, সুইচ ইত্যাদি জায়গায় আমরা বারবার হাত রাখি। এই জায়গাগুলি মাঝেমধ্যেই সাধারণ সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট দিয়ে মুছে নিন। শৌচাগার, বেসিন, সিঙ্ক নিয়মিত পরিষ্কার করুন। নোংরা জায়গা আগে সাবানজল দিয়ে ধুয়ে তারপর জীবাণুনাশক ব্যবহার করুন। ৬. বড় জমায়েত কখনই করা চলবে না। বাজারে শারীরিক দূরত্ব রক্ষা করার চেষ্টা করুন। সবসময় নাকমুখ ঢাকা মাস্ক ব্যবহার করুন। কেউ না পরে থাকলে তাঁকেও পরে থাকতে বলুন। ৭. নিজের, পরিবারের এবং প্রতিবেশীদের জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট জাতীয় বা অন্য কোনও নতুন উপসর্গ আবির্ভাবের দিকে নজর রাখুন। তৎক্ষণাত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ৮. বয়স্ক ও বিভিন্ন কো-মর্বিডিটি থাকা মানুষের ওপর নজর রাখা অত্যন্ত জরুরি। কারণ তাঁদের সংক্রামিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি এবং সংক্রামিত হলে গুরুতর রোগে পড়ার আশঙ্কাও বেশি। তাই তাঁদের যতটা সম্ভব পৃথকভাবে রাখতে হবে। এই ধরনের ব্যক্তির কাছে যেতে হলে মুখে মাস্ক ব্যবহার করুন। হাত ধুয়ে নিন নয়তো স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। ৯. বয়স্ক মানুষদের মানসিকভাবে পাশে থাকুন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলুন।
করোনার জন্য হোম আইসোলেশনে থাকলে নিয়ম
১. সরকারি নিয়ম অনুসারে হোম আইসোলেশন বা গৃহ পৃথকবাসে চিকিৎসা পাবেন শুধুমাত্র উপসর্গহীন বা খুব সামান্য উপসর্গের কোভিড রোগীরা। তাঁদের জন্য উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসাটুকুই প্রয়োজন হয়। তাই সাধারণভাবে বাড়িতে যে সব ওষুধ থাকে, এর বাইরে নতুন করে কিছু মজুত রাখার কোনও প্রয়োজন নেই। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল। সঙ্গে সঠিক পরিমাণে খাওয়াদাওয়া ও জল পান করলেই অনেকে সেরে ওঠেন। ২. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধের দোকান থেকে একটিও অপ্রয়োজনীয় ওষুধ কিনবেন না। ৩. সোশ্যাল মিডিয়ার লেখার ওপর ভিত্তি করে নিজের অথবা প্রিয়জনের চিকিৎসা করলে বিপদ হতে পারে। ৪. মৃদু উপসর্গযুক্ত রোগীরা বাড়িতে থাকলে, তাঁদের প্রতি প্রতিবেশীদের বৈরী মনোভাব প্রকাশ করা যাবে না। আচরণবিধি মেনে সামাজিকভাবে তাঁকে সাহায্য করতে হবে। ৫. গৃহ পৃথকবাসের সময় নিয়মিত চিকিৎসক বা সরকার নির্দেশিত হাসপাতালের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। জোর কাশি হলে বা শ্বাসকষ্ট বাড়লে অথবা নতুন উপসর্গ লক্ষ করলে তৎক্ষণাত চিকিৎসক বা হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তাঁরাই বলে দেবেন কী করণীয়। ৬. সঙ্কটকালীন হেল্পলাইন নম্বর জোগাড় করে রাখুন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ও রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের ওয়েবসাইটে হোম আইসোলেশন এবং হোম কোয়ারেন্টাইনের সম্পূর্ণ নিয়মাবলী সহজে পাবেন।