বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
জীবনবিজ্ঞান বইয়ের চার নম্বর অধ্যায় জীববিদ্যা ও মানবকল্যাণ। মানুষের কল্যাণ বলতে ঠিক কী বলা হচ্ছে আর সেখানে জীববিদ্যা-গবেষণার ভূমিকা কী, জানতে হলে ভ্যাকসিনের ভূমিকা একটু জানা দরকার।
যেমন, ভ্যাকসিন কাকে বলে? ভ্যাকসিনের কাজ কী? কীভাবে ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়? কোন ধরনের রোগে ভ্যাকসিন ব্যবহার হয় ইত্যাদি।
আলোচনায় যাবার আগে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের গল্পটা একটু বলি।
এই পৃথিবীতে একটি ক্ষুদ্র ব্যাকটিরিয়া থেকে মানুষ, সকলেরই প্রতিমুহূর্তে রোগগ্রস্ত হওয়ার ভয় রয়েছে। নজরে পড়ছে না এমন শত্রুরা সব গিজগিজ করছে আমাদের চারপাশে। তবুও যে আমরা টিকে আছি, কারণ, আমাদের শরীরের ভেতরে ও বাইরে কাজ করে চলেছে ইমিউনিটি বা অনাক্রম্যতা। এটা দুভাবে কাজ করে। এক সহজ স্বাভাবিকভাবে, যেমন আমাদের চামড়া বা ত্বক, বর্মের মতো আমাদের বাঁচায়। এছাড়া মুখের লালা, চোখের জল, হাতের তালু, ত্বকের নানা গ্রন্থির রস, অ্যাসিড উৎসেচক, বাইরের শত্রুদের শরীরে বসা মাত্রই খতম করে দিচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন কাইটিন প্রোটিন, যা দিয়ে আমাদের নখ চুল তৈরি, সেটাই তো আরশোলার শরীরটাকেও মুড়ে রেখেছে, এটা ওদেরও বর্ম। এহেন বর্ম নাকি আরশোলার পেটের খাদ্যনালীটার ভেতরেও আছে।
তবে, এই সহজাত স্বাভাবিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মানুষের জন্য যথেষ্ট নয়। সংক্রমণের প্রকৃতি আর বাহকের বৈচিত্র্য রোগকে দিন দিন বিপজ্জনক করে তুলেছে। সেখানে সহজাত অনাক্রম্যতার সঙ্গে কাজ করছে অর্জিত অনাক্রম্যতা। এখানে স্মলপক্স রোগের ব্যাপারটি আলোচনায় আসে। এই রোগে, মানুষ মারা যেত অথবা গায়ে ও মুখের চামড়ায় খোবলানো দাগ নিয়ে সারাজীবন কাটাতে হতো। তুর্কিদেশের লোকেরা আবার কারও পক্স হলে তার গুটি থেকে রস নিয়ে নিজেদের দেহে ঢুকিয়ে নিত। এতে নাকি তাদের পক্স হতো না। ব্যাপারটার রহস্যভেদ করলেন বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড জেনার। গোরুর বাঁট থেকে সংক্রামিত কাউপক্সের গুটির রস নিলেন এক গোয়ালিনীর হাত থেকে, আর আট বছরের বালক জেমস ফিপস’র শরীরে ইঞ্জেকশন করে চালিয়ে তাকে ‘ইমিউন’ করে দিলেন। সেটা প্রমাণ হল, দুবছর পরে, ১৭৯৬-এ যখন তাকে স্মলপক্সের ভাইরাস ইনজেকট করা হল, আর দেখা গেল তার স্মলপক্স হয়নি। ব্যাপারটা দাঁড়াল এই যে, যে ভাইরাস এই পক্স ঘটাচ্ছে, তাকে সহজে মারা মুশকিল। কাজেই, হয় তাকে বা তার তুতো, যেমন স্মলপক্সের তুতো কাউপক্স’র ভাইরাসকে যদি সুস্থ মানুষের দেহে মিশিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে তার আর পক্স হবে না। সে বেঁচে যাবে। এই হল ভ্যাকসিনেশন। যার কল্যাণে পৃথিবী আজ স্মলপক্স মুক্ত।
এখন, ব্যাপারটা হল, তাহলে কি আমাদের প্রতিটা রোগের একটা করে তুতো খুঁজে বের করতে হবে। তুতো না পাওয়া গেলে ভ্যাকসিন তৈরি হবে না? একেবারেই নয়। কারণ এর ঠিক পরেই জলাতঙ্কের ভাইরাস নিয়ে কাজ করতে গিয়ে একটি অসাধ্য-সাধন করলেন বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর। জলাতঙ্ক রোগীর দেহ থেকে ‘ফ্লুইড’ নিয়ে ভেড়ার ঘিলুতে তাকে চালিয়ে দিলেন। তার জলাতঙ্ক হল। তার থেকে ‘ফ্লুইড’ নিয়ে আবার অন্য ভেড়ায় দিলেন। এভাবে দেখলেন ‘ফ্লুইড’-এর জলাতঙ্ক ঘটানোর ক্ষমতা একসময় হারিয়ে গেল। সেই ফ্লুইড তিনি রাখলেন জমিয়ে। এইবার, ন’বছরের জোসেফ মেস্টারকে কুকুরে কামড়ালে, তাকে ওই জমিয়ে রাখা ফ্লুইড ইঞ্জেকশন দিলেন। ছেলেটির শরীরে জলাতঙ্কের চিহ্নও দেখা গেল না। মেস্টার বেঁচে গেল। পাস্তুর বাঁচিয়ে দিলেন।
আশ্চর্য এই যে, জলাতঙ্ক ঘটে ‘রেবিস’ ভাইরাসের জন্য। পাস্তুর ১৮৮৫ তে এই কাণ্ডটি যখন ঘটালেন তিনি ভাইরাসের অস্তিত্বটুকুও জানতেন না।
তাহলে এই আলোচনা আমাদের জানায় যে ইমিউনিটি দুইরকম। সহজাত এবং অর্জিত। সহজাতটা জীব জন্মের সময় নিয়েই আসে আর অর্জিতটা তাকে পরিবেশ থেকে পেতে হয়। ভ্যাকসিন এই অর্জিত অনাক্রম্যতার একটি দিক। দেহে জীবাণু পাঠিয়ে এই অনাক্রম্যতা গড়ে তোলা যায়। এখানে উদাহরণ দিয়ে জেনে রাখো টিকা কতরকম হয়। কী কী ভাবে তাদের তৈরি করা হয়, সেটাও জেনে নিতে পারলে ভালো হয়।
পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য কিছু প্রশ্ন আলোচনা
এক নম্বরের প্রশ্নের জন্য
বিভিন্ন রোগের জীবাণুর (ভাইরাস, ব্যাকটিরিয়া, ছত্রাক ইত্যাদি) নাম, টিকার আবিষ্কারকের নাম, কোষ নির্ভর অনাক্রম্যতার জন্য কার্যকর কোষের নামসহ এককথায় উত্তর হয় এমন অনেক প্রশ্ন এখানে আসতে পারে। সেগুলি দেখে নেওয়া যেতে পারে। যেমন ধরো, হেপাটাইটিস রোগের কারণ কী? স্মলপক্স রোগের টিকা কে আবিষ্কার করেন? ইত্যাদি।
দুই নম্বরের প্রশ্নের জন্য
অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি কাকে বলে? ম্যালেরিয়া রোগের বাহক কে? ম্যালেরিয়া রোগের কারণ কী? MMR, BCG পুরো কথাগুলি কী? সহজাত ও অর্জিত অনাক্রম্যতার তফাৎ কী, এই ধরনের প্রশ্ন উল্লেখযোগ্য। এগুলি এমন প্রশ্ন যার উত্তরে তোমাদের একটি বা দুটি বাক্য লিখতে হতে পারে।
পার্থক্য নির্ণয়সূচক প্রশ্ন
T ও B লিম্ফোসাইট-এর পার্থক্য, সহজাত ও অর্জিত অনাক্রম্যতার পার্থক্য, কোষনির্ভর ও রসনির্ভর অনাক্রম্যতার পার্থক্য দেখে নিতে হবে।
বড় প্রশ্নের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডির গঠনচিত্র উল্লেখ্য। ছবি এঁকে ধারণা স্পষ্ট করে নিতে পারলে এর থেকে বর্ণনামূলক প্রশ্ন এলেও তা সহজে লেখা সম্ভব। এছাড়া HIV/AIDS থেকে রোগের কারণ, রোগের প্রকাশ, সংক্রমণ পদ্ধতি, সাবধানতা থেকে নানা প্রশ্ন আসতে পারে। টিকাকরণের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও এই অংশে ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন আসতে পারে। গণটিকাকরণ কর্মসুচিতে ‘পালস পোলিও’ টিকাকরণের সাফল্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ফলে সেখান থেকে প্রশ্ন আসতে পারে।
টিকা ও টিকাকরণ যেহেতু বিজ্ঞানে অতি চর্চিত বিষয়, এবং এখনও এর গবেষণা দ্রুত হারে এগিয়ে চলেছে, তাই এর থেকে আধুনিক বিজ্ঞানের কাজ সম্বন্ধে জানা সহজ। এই অধ্যায়ে সেই জানার সুযোগ আমাদের সামনে আছে।