বিদ্যার জন্য স্থান পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণামূলক কাজে সাফল্য আসবে। কর্মপ্রার্থীরা কোনও শুভ সংবাদ পেতে ... বিশদ
তামিলনাড়ু
কলকাতা থেকে বিমানে বা হাওড়া থেকে ট্রেনে চেপে প্রথম গন্তব্য চেন্নাই। রাজ্যের রাজধানী শহর থেকে তামিলনাড়ু ভ্রমণ শুরু করুন। শহরের মুখ্য দ্রষ্টব্যগুলি অটো বা গাড়ি নিয়ে দিনে-দিনেই দেখে নেওয়া যায়। প্রধান আকর্ষণ মেরিনা বিচ। দেশের দীর্ঘতম সৈকত। বিচের গায়ে রয়েছে লাইট হাউস, বিবেকানন্দ মিউজিয়াম আর আন্না পার্ক। শহরের মধ্যে রয়েছে কপালেশ্বর শিবমন্দির। এছাড়াও দেখবেন সেন্ট জর্জ ফোর্ট মিউজিয়াম, ভাল্লুভার কোট্টাম, সেন্ট থমাস ব্যাসিলিকা। শহরের বাইরে রয়েছে গোল্ডেন বিচ পার্ক। তামিলনাড়ু পর্যটনের সিটি ট্যুরের বাসেও শহর ঘোরা যায়।
চেন্নাই থেকে পরের গন্তব্য ৫৫ কিলোমিটার দূরের মামাল্লাপুরম। সাগরতীরের এই প্রাচীন জনপদে দেখুন পল্লব রাজাদের কীর্তি শোর টেম্পল, পঞ্চরথ মন্দিরগুচ্ছ, অর্জুন গুহা। এগুলি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। এখানকার দ্রষ্টব্যগুলি অটো নিয়ে দেখে নিন। উঠতে পারেন লাইট হাউসের মাথায়। কাঞ্চিপুরম মন্দির নগরী মামাল্লাপুরম থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে। মামাল্লাপুরম থেকে গাড়ি নিয়ে সেখানে পৌঁছে দেখে নিন বিষ্ণুকাঞ্চি, শিবকাঞ্চি, উলাগানন্দ পেরুমল, কামাক্ষীআম্মা মন্দিরগুলি। প্রতিটি মন্দিরের শিল্পকর্ম দেখার মতো। মামাল্লাপুরমে একরাত কাটিয়ে কাঞ্চিপুরম দেখে এবার চলুন পুদুচেরি। পুদুচেরি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। মামাল্লাপুরম থেকে বাসে যাওয়া যায় ৯৮ কিলোমিটার দূরের পুদুচেরিতে। ঋষি অরবিন্দের স্মৃতিধন্য অরবিন্দ আশ্রম পুদুচেরির মুখ্য দ্রষ্টব্য। আশ্রমের বিরাট কর্মকাণ্ড। একদা ফরাসিদের উপনিবেশ ছিল এই শহরে। এখনও শহরে ফরাসি স্থাপত্য চোখে পড়ে। সাগরতীরটাও সুন্দর করে সাজানো। এখানে দেখবেন অরোভিল, বিনয়াগার মন্দির, চুনাম্বার ব্যাকওয়াটার, সেক্রেড হার্ট চার্চ। এইসবই একদিনে দেখে নেওয়া যায় গাড়ি ভাড়া করে।
এবার গন্তব্য তাঞ্জাভুর। ঐতিহাসিক শহর তাঞ্জাভুর। পুদুচেরি থেকে বাস আসছে এখানে। দূরত্ব ১৮০ কিলোমিটার। শহরের প্রধান দ্রষ্টব্য বিশ্ব ঐতিহ্যের তকমাপ্রাপ্ত বৃহদীশ্বর শিবমন্দির। বিশাল চৌহদ্দির মধ্যে আকাশছোঁয়া দৃষ্টিনন্দন মন্দিরটি চোল রাজাদের সৃষ্টি। মন্দিরের গায়ে নিপুণ শিল্পকর্ম। বিশাল শিবলিঙ্গটি কষ্টিপাথরের তৈরি। শহরের আর এক দ্রষ্টব্য নায়েক রাজপ্রাসাদ। প্রাসাদের মধ্যে মিউজিয়াম, দরবার হল দেখে নিন। প্রাসাদের লাগোয়া আরেকটি মহল সারজামাডিও দর্শনীয়। শহর ঘুরতে অটো পাবেন।
তাঞ্জাভুর থেকে চলুন তিরুচিরাপল্লি। দূরত্ব পঞ্চান্ন কিলোমিটার। বাস যাচ্ছে। তিরুচিরাপল্লি প্রাচীন জনপদ। শহরের গা দিয়ে বয়ে চলেছে কাবেরী নদী। শহরের মাঝে টিলার উপর রয়েছে রকফোর্ট। সিঁড়ি ভেঙে দুর্গে ওঠা যায়। দুর্গের মাথায় রয়েছে উচিপিলাইয়ার গণেশ মন্দির। এরপর দেখুন শহরের মধ্যে অবস্থিত ক্রাইস্ট চার্চ। শহরের বাইরে ১৬ কিলোমিটার দূরে শ্রীরঙ্গমে দেখবেন ২১টি গোপুরম সমৃদ্ধ শ্রীরঙ্গনাথস্বামী মন্দির। এই মন্দিরের পাথরে খোদাই শিল্প অসাধারণ। মন্দিরের দেবতা বিষ্ণু। মূর্তিটি শায়িত। মন্দিরের চত্বরে কয়েকটি মহল রয়েছে। এই অঞ্চলেই আরেকটি মন্দির জম্বুকেশ্বর শিবমন্দিরটিও দেখে নিন।
তিরুচিরাপল্লি ঘুরে দেখতে একটা দিন লাগবে।
এরপর গন্তব্য মাদুরাই। শহরের মধ্যে দিয়ে বইছে ভাইগাই নদী। মাদুরাই জমজমাট বাণিজ্যিক শহর। প্রধান দ্রষ্টব্য মীনাক্ষী দেবীর মন্দির। পাণ্ড্য রাজারা এই মন্দিরের নির্মাতা। নিখুঁত কারুকার্য করা এই মন্দিরের গোপুরমগুলি বিস্ময়ের উদ্রেক ঘটায়। গর্ভগৃহে মীনাক্ষীদেবীর মূর্তি। ইনি দেবী দুর্গার অন্যরূপ। মন্দির দেখে চলুন শহরের অন্য দ্রষ্টব্য থিরুমালাই নায়েক প্রাসাদে। সন্ধেবেলা এখানে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো হয়। প্রাসাদটির গঠনশৈলীতে স্তম্ভের ব্যবহার লক্ষণীয়। তিরুচিরাপল্লি থেকে বাসে মাদুরাই আসা যায়। দূরত্ব ১৪০ কিলোমিটার। মাদুরাই থেকে হাওড়া ফেরার ট্রেন পাবেন। মাদুরাই থেকে চেন্নাই ৫০০ কিলোমিটার। তামিলনাড়ুর এই সার্কিটে বেড়াতে ১২-১৩ দিন লাগবে। সেরা সময় অক্টোবর থেকে মার্চ।
গুজরাত
গুজরাত ভ্রমণ শুরু করুন আমেদাবাদ থেকে। ভারতের পশ্চিমপ্রান্তের সমৃদ্ধ এই রাজ্যে বেড়ানোর সেরা সময় অক্টোবর থেকে মার্চ মাস। গুজরাতের রাজধানী গান্ধীনগর আমেদাবাদ থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে। হাওড়া থেকে ট্রেনে আমেদাবাদ যাওয়া যায়। এই পথে বিমান যাচ্ছে নিয়মিত। আমেদাবাদে একটা দিন থেকে অটো বা গাড়ি নিয়ে ঘুরে দেখুন ক্যালিকো বস্ত্রশিল্প মিউজিয়াম, কাংকারিয়া হ্রদ, জুম্মা মসজিদ, হাতি সিং জৈন মন্দির, সিদ্ধি সৈয়দ জালি মসজিদ প্রভৃতি। শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে সবরমতি নদীর তীরে রয়েছে সবরমতি গান্ধী আশ্রম। গান্ধীনগরে গিয়ে দেখুন অক্ষরধাম স্বামীনারায়ণ মন্দির আর জৈন মন্দির। আমেদাবাদ থেকে যেতে পাবেন মধেরার সূর্যমন্দির (১০০ কিমি) দেখতে।
আমেদাবাদ থেকে ট্রেন যাচ্ছে প্রভাসতীর্থ সোমনাথ। রাত্রিকালীন বাসও আছে। দূরত্ব ৪৬০ কিলোমিটার। আরবসাগরের ধারে প্রাচীন এই শৈবতীর্থ পর্যটকদের ভিড়ে সরগরম থাকে। সোমনাথের প্রধান দ্রষ্টব্য দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ সোমনাথ মহাদেব মন্দির। মন্দিরের আরতি ও লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো অবশ্যই দেখবেন। লাগোয়া সাগর সৈকত। সূর্যাস্তের দৃশ্য এখান থেকে অনবদ্য লাগে। সোমনাথে অন্যান্য দ্রষ্টব্যগুলি অটো নিয়ে আধবেলায় দেখে নেওয়া যায়। সোমনাথ মন্দিরের সামনেই রয়েছে রানি অহল্যাবাইয়ের তৈরি আদি সোমনাথ মন্দির। একে একে দেখে নিন ত্রিবেণী সঙ্গম, সারদা মঠ, কামনাথ মহাদেব মন্দির, হিংলাজ মাতা গুহামন্দির। কিছুটা দূরে হিরণ নদীর ধারে গোলোকধাম। এখানে কয়েকটি মন্দির রয়েছে। যেমন গীতামন্দির, বলদেবজি মন্দির, শ্রীকৃষ্ণের দেহত্যাগের স্থান শ্রীকৃষ্ণ চরণপাদুকা প্রভৃতি। ভেরাবলের কাছে রয়েছে ভালকাতীর্থ, সাগরতীরে ভিদভঞ্জন মহাদেব মন্দির। ভেরাবল বিখ্যাত মত্স্যবন্দর। সোমনাথে একটা দিন থাকতে হবে।
সোমনাথ থেকে পরবর্তী গন্তব্য পোরবন্দর। আরব সাগরের তীরে এটিও বন্দর শহর। তবে এর খ্যাতি মহাত্মা গান্ধীর জন্মস্থান হিসেবে। সোমনাথ থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরের এই শহরে বাস আসছে। পোরবন্দর বেড়াতে ঘণ্টাচারেক সময় যথেষ্ট। ঘুরতে অটো বা গাড়ি ভাড়া করতে হবে। মহাত্মা গান্ধীর জন্মস্থানটির নাম কীর্তি মন্দির। এই বসতবাড়িটিকে নিয়ে গড়ে উঠেছে অসাধারণ সংগ্রহশালা। ভেতরে রয়েছে গান্ধীজির পরিবারের ঘর, জন্মস্থান। এই বাড়িটি থেকে কয়েক পা হাঁটলেই পৌঁছবেন গান্ধী-পত্নী কস্তুরবা গান্ধীর বাড়িতে। শহরের আর একটি দ্রষ্টব্য সুদামা মন্দির। এর গায়েই পুরনো সৌধ সারতানজিনো চোরো। এর গায়ে কারুকার্য করা। এছাড়াও দেখুন চৌপট্টি সৈকত, হরিমন্দির, ভারত মন্দির। এখানে এক রাত কাটাতে হবে। পোরবন্দরে রাত কাটিয়ে পরের দিন চলুন আরব সাগর তীরের তীর্থভূমি দ্বারকা। দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার। বাস যাচ্ছে এই রুটে। সাগরতীরে গোমতী নদীর সঙ্গমের ধারে রয়েছে বিখ্যাত দ্বারকাধীশ কৃষ্ণমন্দির। মন্দিরটি শিল্পমণ্ডিত। পাশেই সারদা মঠ। দ্বারকার ইসকন মন্দির, সানসেট পয়েন্ট, গায়ত্রী মন্দির, গীতামন্দিরও দেখে নিন। দূরের দ্রষ্টব্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাগেশ্বর মহাদেব মন্দির, রুক্মিণী মন্দির, গোপিতালাও ও বেটদ্বারকা দ্বীপ। বেটদ্বারকা লঞ্চে যাবার পথে ওখা বন্দরটিও দেখা হয়ে যাবে। দ্বারকা ঘুরতে পুরো একটা দিন লাগবে। দ্বারকা থেকে চাপুন হাওড়া ফেরার ট্রেনে। দ্বারকা থেকে ট্রেনে আমেদাবাদ এসেও হাওড়া ফেরার ট্রেন পাবেন। এই ট্যুরে ঘুরতে সময় লাগবে ১২ দিন। ছবি: সুবীর কাঞ্জিলাল