উচ্চতর বিদ্যায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় আগ্রহ বাড়বে। পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতে আনন্দলাভ হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ... বিশদ
ভারতের অর্থনীতি ও আইন ব্যবস্থার দিকে তাকিয়ে ‘শ্রম’ বলতে আমরা জানি অর্থনৈতিক বাজার ব্যবস্থায় পরিশ্রমের বিনিময়ে যেখানে টাকা অর্জিত হয় অর্থাৎ শ্রমের বিনিময়ে মূল্য পাওয়া যায় বা নির্ধারিত হয় তাকেই শ্রম বলি। তাহলে বাড়িতে বাইরে যে মহিলা শারীরিক শ্রম দিয়ে ও বুদ্ধি দ্বারা যে অর্থ উপার্জনে সক্ষম তারাই শ্রমজীবী মহিলা। গ্রামীণ এবং শহর জীবনেও হাজার হাজার মহিলা শুধু পরিবারের জন্য নয় পরিবারের স্বার্থ রক্ষার জন্য এবং সামাজিক ব্যবস্থাকে ঠিক রাখার জন্য আন্তরিকতার সঙ্গে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কঠিন পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে জীবনপাত করছেন তাদের নিয়মনীতি অনুযায়ী ‘শ্রমজীবি’ তক্মা দেওয়া যাবে না। কারণ এদের শ্রমের বিনিময় মূল্য ধার্য হয় না। অর্থনীতিতে তারা নাকি শ্রম জাতীয় গোত্রের মধ্যে পরে না। এরা মর্যাদাহীন হয়েই আবহমানকালে রয়ে গেলে অর্থনৈতিক সংজ্ঞায় ও আইন ব্যবস্থার বিচারে। গ্রামীণজীবনের চলমান সমীক্ষা করে দেখা হলে এই সমীক্ষার ব্যাখ্যায় বোঝা যাবে যে গ্রামীণ মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র সমাজের মহিলারা কঠোর শ্রমের দ্বারা নানাভাবে খাদ্য জোগাড় করে। জ্বালানি সংগ্রহ থেকে পানীয় জল জোগাড় বা গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি পালনে গ্রামীণ মহিলাদের অনবদ্য ভূমিকা বিষ্ময় জাগায়। ঘাস কাটা থেকে বিচালির জোগাড় বা ফেলে দেওয়া সব্জি ও আনাজের খোসা সংগ্রহ করে ছাগল গোরু চরিয়ে তারা দুধের জোগান দেয়।
দেশি মুরগির ডিমের জোগান ও মাংসের জোগানও এই গ্রামীন মহিলারাই দেয়। আবার ছাগলের মাংস, যা গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে, তার জোগান দেওয়ার পিছনেও এদের ভূমিকাই বেশি। গ্রামে শ্রমের কাজ বেশিরভাগ পুরুষের নামেই যায়। কিন্তু গ্রামের মহিলারা পুরুষের পাশে থেকে সমানভাবে শ্রম ব্যায় করে। অথচ তাদের কথা কেউ বলেই না।
গ্রাম থেকে যে ছানা শহরে যায় তার জোগানও এই গ্রামের মহিলাদের বাড়িতে পালিত গবাদি পশু থেকেই পাওয়া যায়। অথচ সরকারি সাহায্য এদের কাছে কতটুকুই বা পৌঁছয়? আর এদের শ্রমের কোনও নভিভুক্ত দলিলও পাওয়া যায় না। আমাদের অর্থনীতির বইতে এদের কথা লেখা থাকে না। গ্রাম জীবনে বিশাল কৃষি ও অন্যান্য উৎপাদন ক্ষেত্রে গ্রামীণ এই মহিলাদের সহযোগিতা ছাড়া পুরুষ সমাজের পক্ষে একা কোনওদিনই কিছু করা সম্ভব হতো না।
কুটির শিল্পের দিকে তাকালে দেখা যাবে এই কাজে ‘শ্রমজীবী’ মহিলারাই এগিয়ে থাকেন বেশি সংখ্যায়। কিন্তু অর্থনীতির বিচারে ও আইনের চোখে গ্রামীণ মহিলাদের শ্রমশক্তিকে দেশের জাতীয় আয়ের হিসাবের বাইরেই রাখা হয়েছে। বলা চলে আইন প্রণয়নকারীরা এদেরকে আইনি, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুরক্ষা দিতে অক্ষম। সার্বিক উন্নয়নে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই মহিলারা বিবেচিতই হয় না।
কর্মরতা চাকরিজীবীদের সব সুবিধা ও অর্থনৈতিক দিক থেকে সুরক্ষা প্রদান করা হলেও অসংগঠিত শিল্পে নিয়োজিত মহিলাদের জন্য শুধুই বঞ্চনা আর শোষণ। সঠিক পাওনা থেকেও তারা বঞ্চিত। ফলে আজও মুক্তির কোনও দিশা এদের দেখানো যায়নি।
গ্রামজীবনেও এসব মহিলাদের পরোক্ষভাবে সহযোগিতার কোনও দাম দেওয়া যায়নি আজও।
ভারতের মেয়েদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান কোনও জায়গায় তার জন্য ১৯৭০ সালে একটি স্ট্যাটাস কমিটি গঠিত হয়। সেখানে দেখানো হয়েছিল যে জাতীয় কর্মসূচির মধ্যে মহিলাদের রেখে যদি অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন ঘটানো না যায় তাহলে দেশের বিরাট সংখ্যক মেয়ে সাংবিধানিক সুযোগ ও আইনী অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। ষষ্ঠ পরিকল্পনায় সার্বিক উন্নয়নের কথা বলা হলেও তার কার্যকরী ভূমিকা দেখা যায়নি। সপ্তম ও অষ্টম পরিকল্পনা থেকে মেয়েদের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সংগঠিত করার কথা ভাবা হলেও গ্রামীণ দরিদ্র মহিলাদের কথা আজও ভাবা হয়নি।