রাজ্য জুড়ে দফায় দফায় ভোট। উক্ত জেলাগুলিতে প্রচণ্ড উত্তেজনা। বিক্ষিপ্ত হিংসা। গণতন্ত্র বাঁচাও কিংবা গণতন্ত্র লুটের ধান্দাবাজি। চারদিকে ফ্ল্যাগ প্রচার হইহই শব্দ। এর মাঝে এক শ্রেণী ছিল নিষ্ক্রিয়। আর পাঁচটা সাধারণ দিনের মতোই এলানো সময় এদের। কী একনায়কতন্ত্র! কী গণতন্ত্র! এসব কিছুতে কী যায় আসে ওদের! ভারত একটা স্বাধীন দেশ। সে স্বাধীনতার ব্যাখ্যা কীরকম কোনও দিন প্রশ্ন ওঠেনি ওদের মনে? হয়তো ওঠে। তবে তা আপেক্ষিক। একটা ক্ষুদ্র পরিসর সে পরিসরের মধ্যে কিছু মানুষ ও তাদের ভালো মন্দ। এই একান্ত ব্যক্তিগত জায়গা জুড়ে বেঁচে থাকা অত্যন্ত শান্তির নিশ্চয়। কে জানে ভারী কেতাবি শব্দগুলো এখনও কেন ওদের মনের মধ্যে ঝড় তোলে না! রাস্তার মিছিলের উত্তেজনা বন্ধ দরজার ওপাশ থেকেই ফিরে যায়। পার্টির ছেলেদের দিয়ে যাওয়া ভোটার স্লিপ বা নিজের ভোটার কার্ড দুটোই ওদের কাছে গুরুত্বহীন। ভোটতলায় যাওয়ার নির্দেশ নেই। স্বাধীনতার এতগুলো বছর পার হয়ে গেছে অথচ স্বাধীন দেশের নাগরিকদের কেউ কেউ বছরের পর বছর ভোট দেন না। এটার মধ্যে কোনও মহত্ত্ব ও কর্তব্য খুঁজে বের করতে পারেন না তারা। কী হবে ভোট দিয়ে? দেউলিয়া গ্রামের মতিয়ারাকে বোঝানো হয়েছিল, এটা তোমার গণতান্ত্রিক অধিকার। সে কথার তোয়াক্কা না করেই তার পাল্টা উত্তর সেসব ফালতু কথা। অগণিত মুসলিম মেয়ে ভোট দিতে যায় না। ভোট দেওয়াটাকে তারা কাজের কাজ মনে করেন না। অবশ্য এর পিছনে চলে আসছে দীর্ঘদিনের পুরুষতন্ত্রের প্রভাব। ভোট কেন্দ্রগুলিতে পুরুষের ভিড়। সেখানে তাদের পাশে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেবে!
যেখানে মেয়েরা ভোট পাওয়ার জন্য লড়ছে সেখানেই এক শ্রেণীর মুসলিম নারী ভোট দিতে যান না। প্রায় প্রতি মুসলিম গ্রামে দু’-চারটি পরিবার পাওয়া যাবে তাদের পরিবারে মহিলারা ভোট দেন না। অথচ তাদের যুক্তি অকাট্য, এক দু’জন ভোট না দিলে কী হয়? ভোট কাকে দিচ্ছে কে দিচ্ছে জানতে পারবে? তাদের পরম্পরা তাদের পরিবারের মেয়েরা ভোট দিতে গেলে সম্মান নষ্ট হবে। আব্রু নষ্ট হবে। এভাবেই বছরের পর বছর তেনারা ভোট দেন না। স্বামী পরিবারের কথা চিন্তা করে। নিজের গণতান্ত্রিক চিন্তার থেকে পারিবারিক শান্তিকে প্রাধান্য দিয়ে জীবন কাটান বহু মুসলিম পরিবারের মহিলা।
সৈয়দ সেরিনা