উচ্চতর বিদ্যায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় আগ্রহ বাড়বে। পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতে আনন্দলাভ হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ... বিশদ
শরিয়ত আইন মতে পবিত্র কোরানে যা বন্দোবস্ত আছে, সেই আইনানুসারে একজন মুসলিম মেয়ে তার পিতা-মাতা, পুত্র বা স্বামীর পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে কতখানি অংশীদার দেখা যাক। যদি কোনও মহিলার সঠিক প্রাপ্য জানা থাকে, দুঃসময়ে একেবারে অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়তে হয় না। মোটামুটিভাবে নিজের অধিকার সম্পর্কে কিছুটা জানা থাকলে, অনেক মুসলিম মেয়ে শোষিত না হয়ে, উপকৃত হবে। উত্তরাধিকার আইনের বিশদ বিবরণ নয়, সংক্ষেপে মেয়েদের অধিকার সম্পর্কে সামান্য অবহিত করানোর উদ্দেশে এই প্রতিবেদন।
প্রথমত, পিতার সম্পত্তিতে কন্যা, পুত্রের অর্ধেক পাবে। তার কারণ বৈষম্য নয়। আপাত দৃষ্টিতে তা মনে হলেও ব্যাখ্যায় দেখানো হয় শিশুকন্যাটি বড় হলে বিবাহিত হয়, একটি পরিবারে নারী-পুরুষ দু’জনেই রোজগার করতেও পারে, পরে সন্তানও উপার্জনক্ষম হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে উপার্জনের দায়িত্ব থাকে পুরুষদের। ব্যয় নির্বাহের ভার কন্যাসন্তানের থাকে না। এককথায় পরিবার প্রতিপালনের অর্থনৈতিক দায়িত্ব বর্তায় না। কিন্তু তা সত্ত্বেও কন্যাসন্তানদের সম্পদের অংশীদার করা হয়। অন্যদিকে নারীদের মেহেরানা বা ম্যারেজ গিফ্ট এবং আত্মীয়স্বজনদের সম্পত্তি প্রাপ্তির মাধ্যমেও কিছুটা, ইসলামি মতাদর্শে নারীর একান্ত প্রয়োজনীয় সামাজিক ও মানবিক মর্যাদা দিয়েছে বলা যায়। তবে মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, পুত্র ও কন্যাসন্তানের বৈষম্য কি জরুরি ছিল। বিশ্লেষণে বোঝা যায় মেয়েরা বঞ্চিত নয়।
নারীদের সম্পত্তির অর্ধেক দেওয়ার নিয়ম আছে শরিয়তে চারটি ক্ষেত্রে। ওই পরিস্থিতিগুলোর অনেক ব্যাখ্যা আছে। সংশ্লিষ্ট পুরুষের অর্ধেক পায় নারী চারটি ক্ষেত্রে। অন্যান্য আত্মীয় উত্তরাধিকারী হয় না। এছাড়া, সর্বোপরি উত্তরাধিকার হিসেবে মেয়েরা কম পেলেও অর্থনৈতিক দায়মুক্ত থাকার কারণে, নারীদের মোট উদ্বৃত্ত সম্পদ অনেক সময় তাদের সমপর্যায়ের পুরুষের তুলনায় বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের সমাজে ইসলামি আইনের সুষম বা সঠিক প্রয়োগ হয় না। সেইজন্য নারীদের পক্ষে পরিস্থিতি অনেক ক্ষেত্রেই বেদনাদায়ক হয়ে যায় এবং সুবিচার পায় না। ধর্মশাস্ত্র কোরান-এ সুরা নিমা-য় ৭, ৮, ১১ ইত্যাদি আয়াতে উত্তরাধিকার আইনের মূলনীতি বর্ণিত হয়েছে। সেই অনুসারে শরিয়তে আইন রয়েছে। তবে একথা সত্যি সাধারণভাবে হিসেবটা বেশ জটিল মনে হতেই পারে।
ইসলামে শরিয়তে উত্তরাধিকার আইনে বারোজনের অধিকার স্বীকৃত। যাদের উত্তরাধিকার আছে সেই বারোজনের মধ্যে আটজনই নারী। মা, মেয়ে, স্ত্রী, সহোদরা, বোন, বৈমাত্রেয় বোন, বৈপিত্রেয় বোন, দাদি, নানি অর্থাৎ ঠাকুমা, দিদিমা। আপাত দৃষ্টিতে বৈষম্য আছে প্রকাশ পেলেও বিশ্লেষণে বোঝা যাবে মেয়েদের অধিকার কোথাও খর্ব হয়নি। অন্তত সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে, তারা বঞ্চিত নয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে পুরুষ একইরকম উত্তরাধিকার হওয়া সত্ত্বেও সম্পত্তিতে অধিকার থাকে না। আবার নারীকেই প্রাধান্য দেওয়ার বিধান রয়েছে। মেয়েরা কখন কোন পরিস্থিতিতে পুরুষের বেশি পায় সেই পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ এই পরিসরে অসম্ভব। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, কোনও মৃত মহিলার স্বামী, একজন কন্যা ও বাবার ভাই বর্তমান থাকলে, সম্পত্তি চার ভাগ হবে। স্বামী পাবে এক ভাগ, বাবার ভাই একভাগ এবং কন্যা দুই ভাগ পাবে। আবার ওই পরিস্থিতিতে কন্যারা দু’জন হলে সম্পত্তি বারো ভাগ করে, দুই কন্যা চার ভাগ করে আট ভাগ, মৃতার স্বামী তিন ভাগ এবং বাবার ভাই এক ভাগ পাবে। শরিয়ত আইনে সবিস্তারে দেখানো আছে, এই ধরনের বিশেষ বিশেষ নির্দিষ্ট পরিমাণ অংশের উত্তরাধিকারের কথা। কখনও কখনও সংশ্লিষ্ট নারী রক্তের সম্পর্কের হিসেবে নিকট না হয়েও শুধুমাত্র মেয়ে হওয়ার সুবাদে সম্পত্তি বেশি পায়।
দশরকম পরিস্থিতিতে দেখা যায় নারী-পুরুষ সমান। মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে ক্ষেত্রবিশেষে নারী-পুরুষ সমান উত্তরাধিকার পায়। ইসলামি রাষ্ট্রে অমুসলিমরা এই আইন মানতে বাধ্য নয়, মৃতের আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে শুধু পিতা, ঠাকুরদা এবং ঠাকুরমা বেঁচে থাকলে মৃতের সম্পত্তির ছয় ভাগের পাঁচ ভাগ পাবে পিতা। আর ঠাকুরমা পাবে এক অংশ, ঠাকুরদা অংশীদার হয় না। এই ধরনের ব্যাপারগুলো বেশ সবিস্তারে শরিয়তে উল্লেখ আছে। কোন পরিস্থিতিতে সম্পত্তির বণ্টন কীরূপ হবে। ঠাকুরদার বর্তমানে পিতার মৃত্যু হলে সন্তানেরা দাদুর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়। এমন মনে হলেও ব্যাপারটা ঠিক নয়। আসলে যে কোনও ব্যক্তি জীবিত থাকাকালীন অন্যেরা তার উত্তরাধিকারী হতে পারে না। যতক্ষণ না সেই ব্যক্তির সদিচ্ছায় উইল করা হচ্ছে।
শরিয়তি আইনের মূলনীতির অন্যতম হল মৃত ব্যক্তির সঙ্গে ওয়ারিশের অর্থাৎ বংশধরের নৈকট্য বা সম্পর্ক কতখানি। অন্যতম বিশেষত্ব হল নতুন প্রজন্ম বা বংশধর, প্রবীণদের তুলনায় বেশি পায়। সংশ্লিষ্টের সামাজিক দায়ভার ও আর্থিক প্রয়োজনীয়তাও বিশেষভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে ধরা হয়। সেই মতাদর্শ অনুযায়ী মেয়েদের কোনও ক্ষেত্রেই আর্থিকভাবে দুর্ভোগ স্বীকার করার কথা নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় মেয়েরাই শুধু নয়, অনেকেই শরিয়ত আইন বিশদভাবে জানে না এবং যারা জানে তারাও সুবিচার করে না। আইনের অপব্যাখ্যা অন্যান্য বিষয়ে যেমন হয়ে থাকে। সম্পদ বণ্টনের সময়েও মেয়েদের দুর্নীতির কবলে পড়তেই হয়। কিছুটা অবগত হলে নিজের অধিকারের লড়াই লড়তেও পারে, হয়তো সামগ্রিকভাবে বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় না।