কর্মপ্রার্থীদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। প্রেম-প্রণয়ে আগ্রহ বাড়বে। নিকটস্থানীয় কারও প্রতি আকর্ষণ বাড়বে। পুরোনো কোনও বন্ধুর ... বিশদ
বাংলায় এই প্রথম মহিলা পুরোহিতের গল্প নিয়ে কোনও ছবি হল। পরিচালক অরিত্র মুখোপাধ্যায় জানালেন, ‘ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র শবরী। সে সংস্কৃত জানে এবং সঠিক মন্ত্র উচ্চারণ করতে পারে। তা সত্ত্বেও তাকে দিয়ে পুজো করাতে সমাজের আপত্তি। এই ছবি এরকম অনেক ট্যাবুর বিরুদ্ধে। বৈদিকযুগে কিন্তু মহিলারা পৌরোহিত্য করতেন। স্ত্রীরজ কারণে মাসে মেয়েরা চার-পাঁচটা দিন অশুচি হয়ে যায়, তাই তাঁরা পুজো করতে পারবেন না। কিন্তু কেন? এরকম পুরনো ভাবধারার বিরুদ্ধে এই ছবি।’
ছবির চরিত্রদের সাজপোশাক সম্পর্কে বলতে গিয়ে কসটিউম ডিজাইনার তথা স্টাইলিস্ট অনুপম জানান, ‘শবরীর চরিত্রে ঋতাভরীকে ফুটিয়ে তুলতে প্রচুর চিন্তাভাবনা করে কাজটা করেছি। ছবিতে ঋতাভরীর চরিত্রের অনেক শেডস আছে। সেজন্য তাঁকে বিভিন্ন রকমের সাজপোশাকে দেখা যাবে। যেহেতু শবরী অর্থাৎ ঋতাভরী একজন সাধারণ পরিবারের মেয়ে, উচ্চশিক্ষিতা, কলেজে পড়ান তাই তাঁকে শাড়ি, ব্লাউজে দেখা যাবে। তাঁর পোশাকে রুচির ছাপ আছে। প্যাস্টেল শেড থেকে শুরু করে ওয়ার্ম কালার তাঁর পোশাকে রয়েছে। বেশিরভাগ সময়ে ব্যবহার করা হ্যান্ডলুম শাড়ি পরানো হয়েছে তাঁকে। এছাড়াও মলমল, ধনেখালি শাড়িতে তাঁকে দেখা যাবে। হ্যান্ডলুম শাড়ির জমিতে বুটি অথবা উইভ রয়েছে। শাড়ির সঙ্গে সলিড কালারের রুবিয়ার ব্লাউজ আবার কখনও পেজলি কলমকারি প্রিন্টেড ব্লাউজে শবরী ধরা দেবেন। একজন সাধারণ বাড়ির মেয়ে যে ধরনের সাধারণ জামাকাপড় পরেন ঠিক সেরকম। বিয়ের আগে কলেজে যাওয়ার সময় সিলভার লুকের কসটিউম জুয়েলারির কানে ছোট দুটো স্টাড, ডান হাতে একটা-দুটো চুড়ি, বাঁ হাতে লেদার ব্যান্ডের স্লিক ঘড়ি, পায়ে ফ্ল্যাটস, সঙ্গে জুট বা কাপড়ের নানা ধরনের ব্যাগ ঋতাভরী ব্যবহার করেছেন। তাঁকে কপালে ছোট বিন্দি, মাঝে সিঁথি করে বিনুনিতে দেখা যাবে।
ছবির জন্য প্রিয়গোপাল বিষয়ী শাড়ি স্পনসর করেছে। সোনার গয়না স্পনসর করেছে সেনকো গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ডস। স্টাইলিস্ট অনুপম যেভাবে ছবিতে শবরীর বিয়ের দৃশ্যে কিছু সাবেকি গয়না ডিজাইন করে দিয়েছে সেনকো গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ডস সেই মতো কাস্টমাইজড করে দিয়েছে। সেইসঙ্গে ছবির কাহিনীকার তথা চিত্রনাট্যকার জিনিয়া সেন এবং স্টাইলিস্ট অনুপম দু’জনে মিলে নিজের বন্ধুবান্ধব ও তাদের মায়ের এবং আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে একশো আশিটি শাড়ি সংগ্রহ করেছেন। যার মধ্যে থেকে অনেক শাড়ি ঋতাভরী ছবিতে পরেছেন বলে শোনা গেল অনুপমের কাছ থেকে। গায়ে হলুদ দৃশ্যে শবরীকে হলুদ শাড়িতে দেখা যাবে। বিয়ের দৃশ্যে ঋতাভরীকে প্রিয়গোপাল বিষয়ী থেকে নেওয়া লাল জমিতে ছোট সোনালী বুটি ও বর্ডারের কাতান বেনারসি শাড়ির সঙ্গে হাতে ফ্রিল দেওয়া লাল ব্লাউজে দেখা যাবে। সঙ্গে লাল টোন অন টোন ওড়না। কপালে লবঙ্গ চন্দন, খোঁপায় লাল ও সোনালী জরি ফিতে কুচি করে লাগানো, পায়ে আলতা ও রুপোর চওড়া তোড়া রয়েছে। সোনার গয়নার ক্ষেত্রে মাথায় প্রজাপতি টিকলি, গলায় রুবি, পান্না সমেত ঠোকাইয়ের চোকার, গোগো হার, কানে কান, নাকে নথ, হাতে শাঁখা, পলা, ঝুড়ো চুড়ি, বালা শবরীকে পরানো হয়েছে। তবে সারা ছবিতে তাঁকে ধানের শীষ ও শঙ্খ ডিজাইনের সরু শাঁখাতে দেখা যাবে। সঙ্গে লাল পলা, সোনার গয়না। বিয়ের দৃশ্যে ঋতাভরীকে সাদা মুকুট পরানো হয়েছে। বউভাতের পরের দিন তাঁকে লাল ঢাকাই শাড়ি ও ব্লাউজে দেখা যাবে। তবে বিয়ের পর বাড়িতে তাঁকে তাঁতের শাড়ি ও রুবিয়া ব্লাউজে দেখা যাবে।
এছাড়া পৌরোহিত্য করার সময় তাঁকে নানা লুকে দেখা যাবে। বিয়ের পৌরোহিত্য করার সময় তাঁকে সাদা ও সোনালী কম্বিনেশনের করিয়াল বেনারসি শাড়ির সঙ্গে র-সিল্কের টেক্সচারড লাল ব্লাউজ ও লাল বেনারসির দোপাট্টা, মাথায় মিডিল পাটিং করা সিঁথিতে সিঁদুর, খোঁপায় জুঁই ফুল, হাতে শাঁখাপলা, বালা, কানে দুল, গলার লক্ষ্যতারার হারে দেখা যাবে। আবার বাড়ির পুজোয় লাল বর্ডার দেওয়া বেজ রংয়ের শাড়ির সঙ্গে লাল ব্লাউজ এবং সোনার গয়নায় তিনি ধরা দেবেন। সরস্বতী পুজোর সময় হ্যান্ডলুমের টোন অন টোন রানি অরেঞ্জ কালারের শাড়ির সঙ্গে পেজলি প্রিন্টেড অফ হোয়াইট কালারের ব্লাউজে তাঁকে দেখা যাবে। আবার শ্রাদ্ধে পৌরোহিত্য করার সময় সাদা সোনালী কেরালা কটন শাড়ির সঙ্গে ম্যাচিং ব্লাউজ পরেছেন। তাঁর পোশাকের কালার প্যালেট লাল, সবুজ, হলুদ, গোলাপী, ধুসর, বেজ, কালো ইত্যাদি।
সোহম মজুমদার ওরফে বিক্রমাদিত্যকে তাঁর ব্যবসার কাজে টেরিকট প্যান্টের সঙ্গে প্যাস্টেল কালারের চেকস শার্টে দেখা যাবে। আবার অন্য দৃশ্যে জিন্সের সঙ্গে খাদির পাঞ্জাবি পরেছেন। ঘরের দৃশ্যে ঢিলে পায়জামার সঙ্গে স্যান্ডো গেঞ্জি আবার কখনও ট্র্যাক প্যান্টের সঙ্গে টিশার্ট ব্যবহার করেছেন। বিক্রমাদিত্য সম্ভ্রান্ত, উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান হলেও পোশাকে তাঁর রুচির ছাপ কম। বিয়ের দৃশ্যে কাস্টোমাইজড করা খয়েরি সুতোর হ্যান্ড এমব্রয়ডারি করা বেজ রঙের পাঞ্জাবির সঙ্গে একই রঙের জলচুরি করা ধুতি পরেছেন। সঙ্গে হাতে অনেক সোনার আংটি, গলায় হার এবং পায়ে কোলাপুরি চটিতে দেখা যাবে। সোহমের পোশাকের কালার প্যালেট পাউডার ব্লু, বেজ, গ্রে ইত্যাদি। বাড়ির দৃশ্যে পায়ে ফ্ল্যাটস চপ্পল এবং অন্যান্য সময়ে বেশিরভাগ ছবিতে তিনি ওপেন টোস শ্যু ব্যবহার করেছেন।
মানসী সিন্হা অর্থাৎ গুরুদাসী একজন জ্যোতিষ। তাঁকে বাড়িতে ধনেখালি শাড়িতে দেখা গেলেও প্র্যাকটিসের সময় গেরুয়া শাড়ি, ব্লাউজ, চাদরে দেখা যাবে। গলায় রুদ্রাক্ষ, মোতির মালা, হাতে রকমারি স্টোলের গয়না, শিকড়, মাদুলি রয়েছে। অন্যদিকে অমরাবতী ওরফে সোমা চক্রবর্তী একজন পঞ্চায়েত প্রধান। তাঁর পরনে জুট সিল্ক কলমকারী, মধুবনী, কাঁথাস্টিচ ইত্যাদি শাড়ির সঙ্গে সলিড কালারের ব্লাউজ এবং বাইরে বেরনোর সময় কাঁধে লেদারের ব্যাগ রয়েছে। এছাড়া পুরোহিতমশাই অর্থাৎ শুভাশিস মুখোপাধ্যায়কে টোন অন টোন খাদির সবুজ বর্ডারের কমলা রঙের ধুতি, চাদর ও সাদা কুর্তায় দেখা যাবে। তবে তরজার দৃশ্যে খাঁটি তসরের জোরে দেখা যাবে। গলায় রুদ্রাক্ষ, ক্রিস্টালের মালা, কপালে লাল তিলক, চোখে চশমা। এছাড়াও চন্দ্রাদিত্য অর্থাৎ সর্বদমন ঘোষকে খাদির ধুতি, পাঞ্জাবি এবং শার্ট-প্যান্টে দেখা যাবে। অন্যান্য শিল্পী তাঁদের চরিত্র অনুযায়ী সাজপোশাক করেছেন। ছবির অন্য শিল্পীরা হলেন অম্বরীশ ভট্টাচার্য, অভিরূপ সেন প্রমুখ।
কাহিনী ও চিত্রনাট্য জিনিয়া সেন। সংলাপ সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্যামেরায় আলোক মাইতি। সম্পাদনা মলয় লাহা। সুর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। গান গেয়েছেন লগ্নজিতা, উজ্জয়িনী, সোমলতা আচার্য চৌধুরী, সুরঙ্গনা।