কর্মপ্রার্থীদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। প্রেম-প্রণয়ে আগ্রহ বাড়বে। নিকটস্থানীয় কারও প্রতি আকর্ষণ বাড়বে। পুরোনো কোনও বন্ধুর ... বিশদ
সূচনার রাত
প্রতিবার এক ব্যতিক্রমী আয়োজন দিয়ে ল্যাকমে ফ্যাশন উইক-এর শুভ সূচনা হয়। ল্যাকমে এই রাতে একসঙ্গে ৩০জন ডিজাইনারকে এক ছাদের তলায় নিয়ে আসে। বলা যায়, জিও গার্ডেনে এই রাতে চাঁদের হাট বসেছিল। ফ্যাশন জগতের উঠতি থেকে নামী ডিজাইনাররা এই আসরে উন্মুক্ত করেন আগামী ফ্যাশনের নতুন ধারা। রাহুল মিশ্র, স্বপ্নিল সিন্ধে, নচিকেত ভারবে, কুণাল রাওয়াল, মাসাবা গুপ্তা, পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নিখিল থাম্পি সহ আরও অনেক ডিজাইনারের পোশাক পরে মঞ্চে হাটেন মডেলাররা। রাহুল মিশ্রের ডিজাইন করা লেহেঙ্গা-চোলি পরে ল্যাকমের শুরুর রাতে জলপরী হয়ে ওঠেন বলিউড অভিনেত্রী জাহ্নবী কাপুর। এদিকে কুণাল রাওয়ালের শো স্টপার হিসাবে র্যাম্পে দাপট দেখান বলিউড নায়ক ভিকি কৌশল।
নবীনের আড্ডা
ল্যাকমের শুরুর সকাল মানেই এক ঝাঁক নবীনের আড্ডা। আর এই আসরেই জন্ম নেয় ফ্যাশনের নতুন সৃষ্টি কথা। নামজাদা ফ্যাশন প্রতিষ্ঠান ‘আইএনআইএফডি’ ল্যাকমের আসরে পরিচয় করান কিছু নবীন ডিজাইনারের সঙ্গে। অখিল নাগপাল প্রদর্শন করেন টেনসাইল আর্কিটেকচারের টেনসাইল স্ট্রাকচার। রেয়ন এবং সিল্কের উপর তিনি তাঁর মোটিফগুলো তুলে ধরেন। অনন্যা মোদি জৈন পুরুষ এবং নারীর পোশাকে নিয়ে আসেন নানান রঙের বৈচিত্র্য। পাশ্চাত্য পোশাকের নানান ধারার সঙ্গেও তিনি পরিচয় করান। ল্যাকমের শুরুর সকালে ডিজাইনার চন্দ্রিমা অগ্নিহোত্রী জন্ম দেন তাঁর নতুন লেবেল ‘চন্দ্রিমা’-র। এই নবীনা ডিজাইনার ‘ওরাপস অফ মিলেংগ’ কালেকশনের মাধ্যমে তুলে ধরেন গুজরাতের কচ্ছ্ থেকে ইউরোপীয় শিল্পকলা। মান্নাত শেঠি-হারশনা কান্ধারি -র আয়োজনে ছিল এক ঝুরি মিষ্টি। এই দুই ডিজাইনারের এই আয়োজন ভারতের জনপ্রিয় মিষ্টি ‘কাজু কাতলি’ দ্বারা অনুপ্রাণিত। এই মঞ্চে দিক্ষা সাইনি, ইতিশ্রী সতপতি, মহিমা কাটারিয়া-সাকিনা মাতকাওয়ালা-র মত নবীন ডিজাইনাররা তাঁদের সৃষ্টি মেলে ধরেন।
রিকশ চিত্র
বাংলাদেশের সাদিয়া রেজওয়ানা রূপা ল্যাকমের মঞ্চে নিয়ে আসেন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ‘রিকশ চিত্র’। তাঁর এই আয়োজনের নাম ছিল ‘রিকশ রংবাহারি’। এই প্রথম বাংলাদেশের কোনও ডিজাইনার ল্যাকমের মঞ্চে পা রাখলেন। বলাকা সিল্ক (লিনেন সিল্ক এবং পিওর সিল্ক-এর মিশ্রণ)-এর উপর সাদিয়া রঙবাহারী গাছ-পালা, লতাপাতা, ফুল, পাখি সহ অনেক কিছু তুলে ধরেন। তাঁর আয়োজনে ছিল স্কার্ট-ফুল স্লিভ শার্ট, প্যান্ট-লং টপ, শর্ট ওয়ান পিস সহ পাশ্চাত্য পোশাকের নানান বাহার। বাংলাদেশের রিকশ শিল্পীরা প্রায় কর্মহীন হয়ে যেতে বসেছে। আর ঢাকার পথে রিকশকে ব্যান করার কথা প্রায়শই উঠে আসছে। সেই তাগিদ থেকে সাদিয়া রিকশ চিত্রকে পোশাকের মাধ্যমে সংরক্ষণ করেন এবং সমগ্র বিশ্বের কাছে তুলে ধরেন। তরুণী এই উঠতি ডিজাইনারের সমগ্র পরিকল্পনা থাকলেও রিকশ চিত্র পোশাকের উপর তুলে ধরেন রিকশ শিল্পী হানিফ পাপ্পু।
কুমারী কন্ডাম
শৌণক-অনু-রাজীব এই ত্রয়ী ‘কুমারী কন্ডাম’-এর মাধ্যমে ভারতের প্রায় দু’হাজার বছরের পুরানো এক ইতিহাসকে তুলে ধরেন। ল্যাকমের ফ্যাশনের আঙিনায় এই তিন ডিজাইনার তুলে ধরেন সেই ইতিহাসের কথা। তাঁরা তাঁদের এই সৃষ্টির মাধ্যমে দুই রাজ্য বাংলা এবং তামিলনাড়ুর সনাতনী শিল্পকে একসূত্রে গাঁথেন। ‘কুমারী কন্ডাম’ শীর্ষক এই কালেকশনে তামিলনাড়ুর কাঞ্জিভরম এবং বাংলার মসলিন-জামদানি-র সংমিশ্রণে জন্ম নেয় ফ্যাশনের এক নতুন ধারা। এই শো-এর শো স্টপার ছিলেন দক্ষিণ তথা বলিউড অভিনেতা সিদ্ধার্থ।
কুরুশের কারিকুরি
ডিজাইনার মনদীপ নাগি ল্যাকমের আসরে ফিরিয়ে আনেন কুরুশ শিল্পকলাকে। উত্তরপ্রদেশের সাহারাণপুরের দু’শ জন মহিলাশিল্পী ৫ হাজার মিটার কুরুশের লেস এবং ৫০ হাজার কুরুশের ফুল তৈরি করেন। তবে এই সৃষ্টির পিছনে ছিল মনদীপের পছন্দের রঙের সম্ভার। এই ডিজাইনার প্যাস্টেল, রঙিন জঙ্গল, কোরাল পিঙ্ক, নীল, টীম, লাইম, ছাই রঙকে বেছেন নেন তাঁর কালার প্যালেটে। নরম অরগ্যান্ডি, চান্দেরি এবং কোটা সিল্কের উপর মনদীপ কুরুশের ফুল এবং লেসের নানান বাহার তুলে ধরেন। ডিজাইনার শ্রীয়া সোম-এর আয়োজনেও ছিল কুরুশের বাহার। সাদা পার্টি গাউনের উপর কুরুষের জ্যাকেট, নেটের ফ্রকের উপর কুরুশের এমব্রয়ডারি, সার্টিনের লেহেঙ্গার উপর কুরুষের চোলি সহ অনেক কিছু তুলে ধরেন তিনি তাঁর আয়োজনের মাধ্যমে।
চলো যাই
গরমের ছুটি মানেই মন করে ওঠে বেরু বেরু। প্রতিবারের মত এবারও ‘যাযাবার’ নিয়ে এসেছিল সফরকালীন স্টাইলিশ পোশাক। এই লেবেলের দুই ডিজাইনার কণিকা সচদেব এবং নীলাঞ্জন ঘোষ ল্যাকমের মঞ্চে হাজির করেন ‘ম্যায় অ্যামেলিয়া’ কালেকশন। সাহসী, অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়, শক্তিশালী নারী দ্বারা অনুপ্রাণিত তাঁদের এই আয়োজন। অ্যাসিমেট্রিক স্কার্টের সঙ্গে এক বোতামওয়ালা জ্যাকেট, বেল্টওয়ালা মিডি, ক্রপড জ্যাকেট, প্যান্ট, কোট ফ্রক এবং নানান বাহারের জ্যাকেট ছিল কণিকা-নীলাঞ্জনের আয়োজনে। তাঁরা মোটিফ হিসাবে ব্যবহার করেন নানান ধরনের পাতা, পোলকা ডট, এবং শব্দের আঁকিবুঁকি। কটন স্লাব, সিল্ক অরগেঞ্জা, কটন স্লাব জার্সি এবং সিল্ক চান্দেরির ব্যবহার ছিল তাঁদের প্রদর্শনে। এদিকে ডিজাইনার শাহীন মান্নান হাজির করেন সফরকালীন পোশাকের জার্মান ধারা। তাঁর ডিজাইনে ধরা পড়ে হ্যান্ড এমব্রয়ডারি এবং চেনের রকমারি। শাহীনের আয়োজনে মেয়েদের ফ্যাশনে নজর কাড়ার মত ছিল নেট লেয়ার স্কার্টের উপর কালো সুতোর এমব্রয়ডারি করা ডাবল-ব্রেস্টেড জ্যাকেট, ওয়াইড ল্যাপেল্ড কোট, ডেনিম শর্ট, ডেনিম স্কার্ট, নেভি প্যান্ট। আর পুরুষ ফ্যাশনপ্রেমীদের জন্য তিনি নিয়ে এসেছিলেন ডেনিম শর্টস, বাইকার জ্যাকেট, লাল বোম্বার জ্যাকেটের সঙ্গে মানানসই বারমুডা, কালো ওভার্টলি অরনেট স্যুটের সঙ্গে সাদা শার্ট। এই শো-তে সফরকালীন পোশাকে মঞ্চ মাতান সোহা আলি খান।
জলপরী
রিসর্ট এবং সুইমওয়্যার ডিজাইনার শিভান-নরেশ ল্যাকমের ২০ বছর পুর্তির এই আসরে নিয়ে আসেন তাঁদের জনপ্রিয় ‘সিওল সিরিজ’-এর ‘হুতুতি সামার’ কালেকশন। দক্ষিণ কোরিয়ার শহরতলির অপার সৌন্দর্য ধরা পড়ে তাঁদের এই আয়োজনে। এই দেশের ইতিহাস, শিল্প, সংস্কৃতি, স্থাপত্য, বাগিচা সব কিছু ফুটে ওঠে শিভান-নরেশ-এর বিচ ওয়ারে। বিচ পার্টির সাহসী পোশাকও ছিল তাঁদের সম্ভারে। রঙের ক্ষেত্রে তাঁরা বেছে নেন ম্যান্ডারিয়ান অরেঞ্জ, কোরিয়ান ক্যাভিয়ার, গোল্ডেন জিয়াম, রোজি হিবিসকাস, আইভরি, গাঢ় রুবি, ওমিজা বেরি সহ আরও নানান উজ্জ্বল রং। এই দুই ডিজাইনারের ডিজাইন করা ভেলভেটের শ্যাওলা রঙের লেহেঙ্গা পরে র্যাম্প আলো করেন ডায়না পেন্টি। ডিজাইনার প্রীতি জৈন নানুটিয়ার ডিজাইন করা পোশাক পরে মৎস্যকন্যা হয়েই র্যাম্পে হাঁটেন মডেলরা। ‘বিচ থিম’-এ মডেলরা কুরুশের শর্ট স্কার্ট, বিকিনি, সিকোয়েন্স কাজ করা শর্ট স্কার্ট -টপ, ফেব্রিক করা নেটের জ্যাকেট, গাউন পরে র্যাম্পে ঝড় তোলেন। এই আয়োজনের ‘পুল মডেল’ ছিলেন ঈশা গুপ্তা।
এক টুকরো মরুভূমি
‘ভেরেনদাহ’ লেবেলের ডিজাইনার অঞ্জলি প্যাটেল মেহেতা ল্যাকমের মঞ্চে সৃষ্টি করেন এক টুকরো মরুভূমি। তিনি তাঁর ‘জয়সলমীর’ কালেকশনের মাধ্যমে এই শহরের টুকরো টুকরো গল্পকথা তুলে ধরেন। অঞ্জলির ডিজাইন করা কাপ্তান, জ্যাকেট, ম্যাক্সি, শাড়িতে ধরা পড়ে জয়সলমীরের হাভেলি, খেজুর গাছ, উট সহ আরও নানান মোটিফ। ডিজাইনার পুনিত বালানার কালেকশনের নাম ছিল ‘দ্য রানি বাগ’। রাজা-রানির লুককে তিনি তাঁর ডিজাইনারের মাধ্যমে আধুনিকীকরণ করেছেন। নবাগতা বলিউড সুন্দরী তারা সুতারিয়া হাল্কা পিচ রঙের লেহেঙ্গা-চোলিতে রাজকন্যার বেশে র্যাম্পে উষ্ণতা ছড়ান।
গরম মশালা
ল্যাকমের আসরের অন্যতম সেরা আকর্ষণ ডিজাইনার গৌরাঙ্গ শাহ-র আয়োজন। এবার তিনি এই মঞ্চে নিয়ে আসেন তাঁর ‘গরম মশালা’ কালেকশন। সাদা-কালোয় রঙিন ছিল গৌরাঙ্গের এই আয়োজন। ৪০টি চোখ জুড়ানো শাড়ি পরিবেশন করেন তিনি। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারীর সনাতনী শিল্পকলাকে এক সুতোয় গাঁথেন গৌরাঙ্গ। সারা দেশের সব রাজ্যের শিল্পকলাকে এক ছাদের তলায় নিয়ে এসে এক ব্যতিক্রমী আয়োজন পরিবেশন করেন তিনি। তাঁর এই আয়োজন আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে টাবুর উপস্থিতিতে।
চিকনের বাহার
ডিজাইনার সামা, মীরা এবং মুজাফফর আলি-র নতুন কালেকশন হল ‘বাহারান’। তাঁদের এই আয়োজনে ধরা পড়ে অলিভ, পিঙ্ক, আইভরি, কালো, সাদা, সাদা-কালো কম্বিনেশনের চিকনকারির নানান বাহার। চিকনকারিকে আধুনিকভাবে নিয়ে আসেন সামা, মীরা এবং মুজাফফর। ‘বাহারান’-এর মাধ্যমে তাঁরা পরিবেশন করেন চিকনকারির সাবেকি পোশাকের পাশাপাশি পাশ্চাত্য পোশাকও। জনপ্রিয় এই ডিজাইনারদের ডিজাইন করা পোশাক পরে র্যাম্পে স্নিগ্ধতা ছড়ান দিয়া মির্জা।
সমাপনী রাত
ল্যাকমে প্রত্যাশা মতো উপহার দিল ঝলমলে এক সমাপনী রাত। এই রাতকে এবার আরও উজ্জ্বল করে তোলেন করিনা কাপুর খান। ডিজাইনার অমিত আগরওয়ালের ডিজাইন করা উজ্জ্বল সবুজ অফ-সোল্ডার গাউন পরে ল্যাকমের শেষ আয়োজনে এক রাশ আবেদন ছড়িয়ে দেন তিনি। করিনা এই রাতে আরও মোহময়ী হয়ে উঠেছিলেন ল্যাকমের থ্রি-ডি মেকআপে।