কলৌ জাগর্ত্তি গোপালঃ। কলিতে গোপাল জাগ্রত। কোন্‌ সুদূর দ্বাপর যুগে এসেছিলেন ভগবান্‌ নন্দদুলাল ব্রজের গোপাল রূপে। স্থূল দেহে ধূলার ব্রজে লীলা ক’রে গেলেন সেই হারিয়ে যাওয়া শত শত বৎসর আগে। অথচ শাস্ত্র বলছেন—এই কলিতে তিনি বিশেষ ভাবে জাগ্রত। অর্থাৎ কলির জীবের কাছে তিনি বিশেষ ভাবে জাগ্রত। অর্থাৎ কলির জীবের কাছে তিনি সহজলভ্য। শ্রীরামকৃষ্ণদেব বলছেন—“কলিতে জীবের অন্নগত প্রাণ।” অতএব সুকঠিন যোগসাধন, জ্ঞানসাধন বা কঠোর তপস্যা কোনটাই এ-যুগে সম্ভব নয়। তাই সহজ প্রাণের আকুতি দিয়ে যাকে ভালবাসতে পারা যায়—সে রূপটি হোল ভগবানের শিশু রূপ, গোপাল রূপ। আর ভগবান কৃষ্ণের মাধুর্য্যলীলাটি প্রকট হয়েছিল বৃন্দাবনের বালগোপালের মধ্যেই। তাই চিরশাশ্বত সনাতন ভগবানের গোপাল রূপটি বহু যুগের ওপার থেকে আজও মানুষের মনে একটি স্থায়ী আসন ক’রে নিয়েছে। সব অবতারেই বাল্যলীলা আছে কিন্তু কৃষ্ণচন্দ্রের বালসুন্দর ছবিটির মাঝেই যেন সব যুগের বাল্যলীলা একটি মাধুর্য্যের সূত্রে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। তাই ভক্তের ঘরে ঘরে আজও গোপালের বিগ্রহ যেন বিশেষভাবে আদরকাড়া রূপটি ধরে সেবাপূজা আদায় ক’রে নিচ্ছে। ঠাকুর সত্যানন্দ ছিলেন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার রায়বাহাদুর মহেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের পুত্র। সত্যানন্দের মাতার নাম ছিল কাশীশ্বরী দেবী। মহেন্দ্রনাথ ও কাশীশ্বরী দেবীর সত্যানন্দদেব ছাড়া আরও তিনটি পুত্র ও দু’টি কন্যা ছিল। সত্যানন্দ ছিলেন তাঁদের দ্বিতীয় সন্তান। সিদ্ধ ফকির বিলায়েৎ আলির নির্দেশমত ষোড়শবর্ষীয়া কাশীশ্বরী দেবী শ্মশান সাধনায় সিদ্ধ হ’য়ে লাভ করেছিলেন এই দেবশিশুকে। সত্যানন্দদেবের পিতামাতা নাম রেখেছিলেন সত্যব্রত। তাঁরই জন্মের কিছুদিন পূর্বেই তাঁদের গৃহে এসেছিলেন এই গোপাল বিগ্রহটি। শ্রীগোপালজী মহেন্দ্রনাথের গৃহে আসার পূর্বে ক্ষীরোদা নামে একটি কুমারী কন্যার পূজার ঠাকুর ছিলেন। কুমারী মেয়েটির অন্তরের ইচ্ছা ছিল সে বিবাহ করবে না, গোপালের সেবা করেই জীবন কাটাবে। কিন্তু সেটা হয়তো তার অভিভাবকের মেনে নেওয়া সম্ভব হ’তো না। তাই তার বিবাহ হবার আগেই গোপালজী তাকে তুলে নিলেন ইহলোক থেকে। অকালে তার দেহাবসান ঘটল। সে স্বাভাবিকভাবে গোপালের ইচ্ছায় সংসারের হাত থেকে মুক্তি পেল। শ্রীমহেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, ক্ষীরোদা এবং তার পরিবারের সকলকেই চিনতেন। তারাও মহেন্দ্রনাথের পরিবারের সকলকে দেবপরিবার জ্ঞানে অত্যন্ত শ্রদ্ধাভক্তি করতেন। তাই ক্ষীরোদার দেহান্তের পর তার পিতা শ্রীগোপালজীকে চোখের জলে শ্রীমহেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দিলেন। সেই থেকে গোপালজী সেই দেবপরিবারের একজন হয়ে গেলেন। এই দেবপরিবারের পূজার সিংহাসনে আরও অনেক দেবদেবী পূজা পেতেন। তার মধ্যে নারায়ণশিলা দধিবামন ও গোপালজীর আসনটি বিশেষ একটি স্থান ক’রে নিয়েছিল।