ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
ক্রমবিকাশ—স্থান-কাল-পাত্র-ভেদে সামান্য কিছু পরিবর্তিত হলেও শিক্ষার মূল তত্ত্বটি প্রায় অবিকৃতভাবে বৈদিকযুগ থেকে আজ অবধি প্রকট হয়ে আছে। এভাবে সকল শিক্ষা ব্যবস্থাকে সমসূত্রে গেঁথে রেখে জাতির জীবন-জমিতে প্রাণরস সঞ্চার করে চলেছে এ তত্ত্ব। অন্যভাবে বলা চলে, শিক্ষা হচ্ছে একটি উপায়, যার সাহায্যে সমাজ তার ভাবধারা, ঐতিহ্য ও অর্জিত অভিজ্ঞতা পরবর্তী বংশধরগণকে অর্পণ করে। রক্ষণশীলতা একটি জৈবিক ধর্ম। রক্ষণশীল সমাজ তার নিজ সত্তা অক্ষত ও ঐতিহ্য অটুট রাখার জন্য এবং ভবিষ্যৎ সমাজকে অভীপ্সিত লক্ষ্যে পরিচালনার জন্য নবীনদের প্রয়োজন মত শিক্ষা দিয়ে প্রস্তুত করে। যুগযুগান্ত ধরে মানব জাতির অর্জিত অমূল্য সম্পদ বহন করে চলেছে শিক্ষানদী; আর শিক্ষানদী-বাহিত জাতির প্রাণশক্তি আহরণ করে মানুষ ব্যষ্টিজীবনে হয়েছে প্রতিষ্ঠিত, এনেছে অভ্যুদয়, পেয়েছে যোগ্যতার অধিকার, দিয়েছে মুক্তির সন্ধান। অপরদিকে সমষ্টি জীবনে লাভ করেছে পুষ্টি ও সমৃদ্ধি। ভারতবর্ষে শিক্ষানদী তার নিজস্ব ধারায় বয়ে চলেছে। তার অমৃতরসে পুষ্ট হয়ে মহাকাল যে সাফল্য নগরীর পত্তন করেছে, তার প্রধান সড়ক দিয়ে পরিক্রমা করলে দেখা যাবে ভারতীয় শিক্ষা সম্পদের প্রধান বৈশিষ্ট্য কি, বিশ্বের জ্ঞান সমুদ্রে ভারতীয় জ্ঞান গঙ্গার অবদান কতটুকু, এবং বিশ্ব দরবারে ভারত-ভারতীর স্থানই বা কোথায়? সুপ্রাচীন কালে ভারতের সমাজ ছিল চারবর্ণে বিভক্ত। ‘বৃ’ ধাতুর অর্থ বেছে নেওয়া, বরণ করা, যা বরণ করে নেওয়া হয় তাই বর্ণ। জীবিকা অর্জনের জন্য যে বৃত্তি বেছে নিত, তা দিয়ে বর্ণ নির্দ্ধারিত হত। সমাজের বিভিন্ন প্রয়োজন ও ব্যক্তির যোগ্যতা অনুযায়ী মানুষ তার বৃত্তি বেছে নিত। এভাবে সৃষ্টি হয় ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র এই চার বর্ণ। ব্যক্তিগতক্ষেত্রে ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস-এই চার আশ্রমে বিভক্ত ছিল মানুষের জীবন। ব্রহ্মচর্য আশ্রম হল জীবন প্রস্তুতি বা শিক্ষার কাল, গার্হস্থ্য হল গৃহীরূপে সমাজের সেবা করার কাল। বাণ প্রস্থ, কর্মজীবনের শেষ প্রান্তে সামাজিক বন্ধন শিথিল করে বিদায় নেবার প্রস্তুতি, সর্বশেষে সকল বন্ধন মুক্ত হয়ে মুক্তি লাভের জন্য প্রচেষ্টা হল সন্ন্যাস।
স্বামী লোকেশ্বরানন্দ সম্পাদিত ‘ভারত-সংস্কৃতির রূপরেখা’ থেকে