উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
সাধারণভাবে মানুষ তার শরীরকেই ‘আমি’ বলে মনে করে। অন্নের (খাদ্যের) দ্বারা পুষ্ট হয়েছে যে-কোশ সেই দেহ-ই অন্নময় কোশ। এটিকে আমরা নিজেদের অস্তিত্ব হিসেবে ভাবলেও ধ্যানের সময় বোঝা যায় যে আমরা শরীর থেকে পৃথক একটি সত্তা। যারা এ-রকম গভীর ধ্যানের স্তরে এখনও যেতে পারেননি এবং পুনর্জন্মে বিশ্বাস করেন, তারা বিচারের সাহায্যে বুঝতে পারবেন যে এই শরীরটাই তাদের মূল সত্তা নয়। এভাবে বিচার করতে হবে: এই শরীরের সৃষ্টি বা জন্ম .... বছর আগে হয়েছে, ভবিষ্যতে মোটামুটি .... বছর বাদে মৃত্যু হলে এটিকে শ্মশানে নিয়ে গিয়ে লোকেরা পুড়িয়ে ফেলবে।
এই শরীরে সৃষ্টি হবার আগেও আমি ছিলাম, এবং মৃত্যুর পর এ শরীরে অস্তিত্ব না থাকলেও আমার অস্তিত্ব থাকবে। সুতরাং আমার মূল সত্তা এই শরীরের অতিরিক্ত কিছু একটা। লোকেরা যেমন বিভিন্ন বাড়ীতে বাস করে, আমিও তেমনি বর্তমান জন্মে এই শরীর-রূপ বাড়ী বা ঘরের মধ্যে আছি।
এভাবে বিচারের সাহায্যে আমি বোধকে শরীর বা অন্নময় কোশ থেকে আলাদা করতে হয়। এরপর আছে প্রাণময় কোশ। প্রাণরূপে যে শক্তিটি শরীরের মধ্যে আছে সেটিকেই ‘আমি’ বলে মনে হয়। অনেকক্ষণ ধরে দম বন্ধ করে থাকলে একটু বাতাসের জন্যে যখন ব্যগ্র হয়ে উঠি তখন ‘প্রাণময় কোশে আবদ্ধ আমি’-কে অনুভব করা যায়। অনেকক্ষণ দৌড়িয়ে যখন হাঁপাতে থাকেন তখন এটিকে ভালো করে বোঝা যায়।এই প্রাণময় কোশ থেকে ‘আমি’-কে আলাদা করতে হয় বিচারের সাহায্যে: আমি শরীর নই; শরীরের মধ্যে একটি শক্তি রূপে আমি রয়েছি। এই শক্তিটি কেমন? প্রাণশক্তি রূপেই কি এর স্থিতি? তা হতে পারে না কারণ প্রাণ-শক্তি না থাকলেও (মৃত্যুর পর) আমার অস্তিত্ব থাকে।
এভাবে বিচারে সাহায্যে অন্নময় ও প্রাণময় কোশ থেকে ‘আমি’-বোধকেও আলাদা করলেও এটি মূলত বৌদ্ধিক ক্রিয়া (intellectual process)। ধ্যানের মাধ্যমে এটিকে বাস্তব রূপে অনুভব করা যায়।
এবারে মনোময় কোশের কথা। দেহ ও প্রাণ যে আমার আসল সত্তা নয়, এটি বুঝলেও সংশয় থেকে যায়— তবে কি মনই আমি? আমাদের চরিত্র, ব্যাক্তিত্ব, সবকিছু মনের ওপর নির্ভরশীল। এজন্যে অনেক সময় মনকেই ‘আমি’ বলে মনে হয়। প্রকৃতপক্ষে মনও আমাদের মূল সত্তা নয়, দেহ ও প্রাণের মতো এটিও একটি কোশ। দেহ ও প্রাণ থেকে আমি-কে পৃথক করা বিচারের সাহায্যে যত সহজ, মনোময় কোশ বা মন থেকে আমি-কে আলাদা করা তার চেয়ে কঠিন। এবং একাজে সাফাল্যের ওপরই নির্ভর করছে সাধকের উন্নতি। ধ্যানের সময় প্রথমে মনকে শান্ত করতে হয়। মনে কি কি চিন্তা উঠছে, লক্ষ্য করলেই মন শান্ত হয়ে যায়। যদি এটি প্রথমদিকে সম্ভব না হয় তবে মনের চিন্তা-গুলিকেই দেখতে থাকুন। এ-সময় আপনি চোখ বন্ধ করে নানান ঘটনা ও মানুষের ছবি দেখছেন। একটু ভালো করে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন, মনের এক অংশে এসব ঘটনা ও মানুষের ঢেউ উঠছে, আর অন্য অংশ যেন দ্রষ্টা হয়ে সেসব দেখছে। এই দ্রষ্টা অংশকে ধরতে পারলে মন নিজে-নিজেই শান্ত হয়ে যায়। এবার কি দেখছেন? অন্ধকার। “আমি অন্ধকার দেখছি”—এই চিন্তা করতে থাকুন, অথবা অন্ধকারকে দেখতে থাকুন। এবার “আমি দেখছি” আর “অন্ধকার” এই দুটি অংশকে পৃথক করে তুলুন, অথবা এই দুটি অংশ সম্বন্ধে আরও সচেতন হন।