উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, যাঁরা আত্মারাম, ব্রহ্ম-মনন-শীল, তাঁরা তো সকল প্রকার বিধি নিষেধের অতীত; তাঁদের চাইবার কিংবা পাবার তো কিছু নেই; সুতরাং তাঁদের শাস্ত্রপাঠ করার কিংবা শোনাবার প্রবৃত্তি হয় না। তবুও শুকদেব কেন ভাগবত অধ্যয়ন করলেন এবং অপরকে তা শোনালেন? উত্তরে বলা হয়েছে, ইত্থম্ভূত গুণো হরিঃ—ভগবানের এমনই আকর্ষণ যে, নিবৃত্তি-নিষ্ঠ আত্মারামেরা পর্যন্ত ভগবানে অহৈতুকী ভক্তি করে থাকেন, ভগবল্লীলা শ্রবণে লালসা-যুক্ত হয়ে পড়েন।
ব্যাসদেব এক ফন্দি আঁটলেন। তিনি কাঠুরিয়াদের ডেকে বললেন—তোরা তো কাঠ আনবার জন্য বহু দূরে দূরে পাহাড়ে জঙ্গলে যাস। তোরা একটা কাজ করবি? কাঠুরিয়া বললে—নিশ্চয়ই করব। ব্যাসদেব বললেন, আমি একটা গান তোদের শিখিয়ে দেব; তোরা যখন পাহাড়ে জঙ্গলে কাঠ আনিতে যাবি, তখন উচ্চৈঃস্বরে এই গানটি গাইবি। এই গান শুনে যদি কেউ এসে তোদের জিজ্ঞাসা করে—এ গান তোমরা কোথায় শিখলে? তখন তোরা আমার নাম করবি না; শুধু বলবি—তুমি তাকে দেখবে? তখন সে যদি রাজি হয়, তবে তাকে আমার কাছে নিয়ে আসবি। ব্যাসদেব তখন ভাগবত থেকে শ্রীকৃষ্ণের কিশোর বয়সের একটি রূপ-বর্ণনা-সূচক শ্লোক গান করে কাঠুরিয়াদের শেখালেন:
অতি সুন্দর ময়ূরপুচ্ছ যাঁর শিরোভূষণ, নটশ্রেষ্ঠের মতো সুন্দর যাঁর শরীর, যাঁর কানে কর্ণিকা ফুলের কুণ্ডল শোভা পাচ্ছে, যিনি পীতবসন পরিধান করেছেন, গলায় বৈজয়ন্তীমালা ধারণ করে তিনি অধর সুধায় বংশীধ্বনি করছেন। গোপবালকেরা তাঁর মহিমা কীর্তন করছেন এবং তিনি নিজ পদাঙ্ক চিহ্নে পরিশোভিত বৃন্দাবনে প্রবেশ করলেন।
দূর থাকে এই পরম মনোহর গীতধ্বনি শুকদেবের কানে যেতেই ধীরে ধীরে তিনি সমাধি থেকে ব্যুত্থিত হলেন। এই প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত থেকে একটু উদ্ধৃতি দিচ্ছি। “শুকদেব সমাধিস্থ ছিলেন। নির্বিকল্প সমাধি—জড় সমাধি। ঠাকুর নারদকে পাঠালেন—পরীক্ষিতকে ভাগবত শোনাতে। নারদ দেখলেন, জড়ের ন্যায় শুকদেব বাহ্যশূন্য—বসে আছেন। তখন বীণার সঙ্গে হরির রূপ চারশ্লোকে বর্ণনা করতে লাগলেন। প্রথম শ্লোক বলতে বলতে শুকদেবের রোমাঞ্চ হল। ক্রমে অশ্রু; অন্তরে, হৃদয় মধ্যে, চিন্ময়রূপ দর্শন করতে লাগলেন। জড় সমাধির পর আবার রূপ দর্শনও হলো।”
কাঠুরিয়াদের গানেই ফিরি। কৃষ্ণ বিষয়ক গান শুনতেই শুকদেব সমাধি থেকে ব্যুত্থিত মুগ্ধ হলেন; ভাবলেন—কারা এই গান গাইছে? কাঠুরিয়াদের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলেন—এ গান তোমরা কোথায় শিখলে? কাঠুরিয়া বললে—তুমি তার কাছে যাবে? শুকদেব রাজি হতেই কাঠুরিয়ারা তাঁকে ব্যাসদেবের কাছে নিয়ে এলেন। শুকদেব জিজ্ঞাসা করলেন—বাবা, এই গানের বিষয় কে? ব্যাসদেব বললেন—তিনি হলেন পরব্রহ্মেই এক পরম মাধুর্যমণ্ডিত মূর্তি; ইনি হলেন লীলাময় ব্রহ্ম, ভগবান শব্দ বাচ্য। যিনি জ্ঞানীদের ব্রহ্ম, তিনিই যোগীদের পরমাত্মা এবং তিনি ভক্তদের ভগবান।