উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
তুলসীদাস, রামপ্রসাদ—এঁরা সব ইষ্ট-লাভ করেছিলেন; রামপ্রসাদের কত বৈরাগ্য, কেমন প্রেম—মাকালীকে ঠিক ঠিক মায়ের মতো ভেবে গালি দিচ্ছে, আবদার কচ্ছে। লোকে মানুষের কাছেই আবদার-জুলুম করে, কিন্তু তিনি মানুষ নন—অশরীরী, তবুও তাঁর কাছে আবদার-জুলুম কচ্ছে। কতখানি ভক্তি-বিশ্বাস হলে এমন করে। ইষ্টকে আপন হতে আপন ভাবতে হয়; তিনি আত্মা—আত্মীয়ের চেয়ে বড়, আরো কত আপন।
কালী মহারাজ (স্বামী অভেদানন্দ) স্বামীজীর আদেশে বিলেতে গেল। যখন স্বামীজী লেকচার দিতে বললে, তখন ভয় পেয়ে বললে—‘‘আমি পারবো না; কি করে বলবো?’’ স্বামীজী বললে—‘‘আমি যাঁর মুখ দেখে বলেছিলাম, তুমিও তাঁর মুখ দেখে বল।’’ তখন আর ভয় রইল না—খুব ভাল বললে।
সত্যভামার মহিষী হবার ইচ্ছা হয়, রুক্মিণীর মনে মনে হিংসা। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তা জানতে পারলেন। একদিন তিনি সভ্যভামার সঙ্গে বসে আছেন, এমন সময় দেখলেন হনুমান আসছেন। তখন সত্যভামাকে বললেন—‘‘তুমি শীঘ্র সীতারূপ ধর, আর আমি রামরূপ ধরি—হনুমান অন্যরূপ দেখবে না।’’ সত্যভামা সীতারূপ ধরতে পারলেন না। এমন সময় স্বয়ং লক্ষ্মী রুক্মিণী এসে সীতারূপ ধরলেন। হনুমান রামরূপ ছাড়া অন্যরূপ দেখতে ভালবাসতেন না। বলতেন—
শ্রীনাথে জানকীনাথে অভেদঃ পরমাত্মনি।
তথাপি মম সর্বস্বঃ রামঃ কমললোচনঃ ।।
গুরু-বাক্য ছাড়তে নেই। লোকে যাই বলুক না কেন, কখনও সংশয় করবে না। স্বচক্ষে না দেখে কোন কথা বিশ্বাস করা ঠিক নয়, আর কারো উপর সংশয় করা ভুল। সাধু-মহাপুরুষরা সকলেই বলেছেন—‘গুরুর হুকুম নিষ্ঠার সহিত পালন করলে কল্যাণ হবে। গুরুবাক্যে নিষ্ঠা হলে তবে ইষ্টে নিষ্ঠা হয়। যার গুরুতে নিষ্ঠা নেই, তার ইষ্টে কোনকালই নিষ্ঠা হবার আশা নেই, আর তাই কল্যাণেরও আশা নেই। এ জগতে একমাত্র গুরুই ভরসা।’ ‘গুরু-বাক্য মূলাধার, গুরু পদ ভরসা।’
গুরুর ছবি পূজা করা যেতে পারে, তাতে শিষ্যের কল্যাণই হয়। সময় মত পূজা না করলে অকল্যাণ হয়। অসময়ে পূজো করার চেয়ে না করাই ভাল। আমার তো খুব ইচ্ছা পূজো করি, কিন্তু শরীর সুস্থ নয়, পারি না। তোর এটা মনে রাখা উচিত যে, ঠাকুর এখনও জল পর্যন্ত খাননি। এত বেলায় কি পূজো হয় রে? তুই ভোগ দিবি, তবে ঠাকুর খাবেন। তোর যেমন ক্ষুধা পায়, তাঁরও তেমনি পায়। প্রত্যক্ষ তিনি রয়েছেন—অন্নগ্রহণ করেন দেখেছি। তাঁকে কষ্ট দিলে ভুগতে হবে। উপলক্ষ্য না মানলে ভগবানও সন্তুষ্ট হন না; দেখ না দ্রৌপদীকে শ্রীকৃষ্ণ সখী বলে কতই ভালবাসতেন। তাঁরই বিপদের সময়—সেই বস্ত্র-হরণের সময় কতই তিনি অনাথ-নাথ, দীন-বন্ধু, বিপদ-বারণ, লজ্জা-নিবারণ ব’লে ডাকলেন, তিনি এলেন না। কিন্তু যেই দ্রৌপদী পাণ্ডব-নাথ, পাণ্ডব-সখা ব’লে ডাকলেন, তখনই তিনি এলেন।
স্বামী অদ্ভুতানন্দের—সৎকথা (স্বামী সিদ্ধানন্দ সংগৃহীত) থেকে