উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
এর পরে ঋষিরা ভক্তিযোগের কথা উল্লেখ করলেন না! কিন্তু উল্লেখ্য না করেও এমন শব্দ প্রয়োগ করলেন যার দ্বারা অভিযোগ আপনিই ধ্বনিত হল।
কী হল? এখন শ্লোকের দিকে দৃষ্টি রাখলেই সেটি বোঝা যাবে।
ঋষিরা বলছেন, এতসব শাস্ত্রের মধ্যে তুমি বুদ্ধির দ্বারা যাকে সার বলে মনে করেছ; সেইটি বলো—‘‘ব্রূহি যৎ সারং সমুদ্ধৃত্য মনীষরা।’’
এখন আবার প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি ওই কর্মকাণ্ড, জ্ঞানকাণ্ডের সার বলব? ঋষিরা সরাসরি না বলছেন না, কিন্তু ঘুরিয়ে তাঁরা সাধনের ফল নির্দেশ করলেন। এবার সূতমুনিকে ফল দেখে বুঝতে হবে তাঁরা কি চাইছেন। ফলটি কি? ফলটি হল, ভূতজগতের মঙ্গল যাতে হয় তাই বলো ‘‘ভূতানাং ভদ্রায় ব্রূহি।’’
প্রথমে ছুটে এলেন কর্মকাণ্ডীরা। তাঁদের মধ্যে একদল যাঁরা ঐহিক ফলে বিশ্বাসী তাঁরা জাগতিক সুখের ফল দেখালেন। আর পারত্রিক ফলে বিশ্বাসীরা দেখালেন স্বর্গাদি-সুখের ফল। এঁদের ওরে বলা হল যে, এগুলি তো নিত্যফল নয়, তাতে জীবজগতের ঐকান্তিক মঙ্গল হয় না, আবার তো ফিরে আসতে হয়। এখন জ্ঞানী ছুটে এলেন। বললেন—আমাদের ফল মুক্তি। এতে জীবের ঐকান্তিক মঙ্গল। আর ফিরে আসার কোনও প্রশ্ন নেই। মুনিরা তাঁদের উত্তর দেবার জন্য আর একটি বাক্য ব্যবহার করলেন। বললেন, যাতে আত্মা প্রসন্ন হয়,—‘‘যেনাত্মা সুপ্রসীদতি’’। এখন আত্মা বলতে কি বলতে চেয়েছেন এঁরা? অমরকোষে ‘আত্মা’ শব্দের অনেক অর্থ আছে, যথা—যত্ন, ধৃতি, বুদ্ধি, স্বভাব, ব্রহ্ম ও দেহ—‘‘আত্মা যত্নো ধৃতিবুদ্ধিঃ স্বভাবো ব্রহ্ম বর্ষ্ম চ।’’
আত্মা অর্থ দেহকে ধরে কর্মকাণ্ডীরা দেহের সুখ বিধানে ব্যস্ত হলেন। আর জ্ঞানকাণ্ডী ‘ব্রহ্ম’ ধরে জ্ঞানের বিচার করে অজ্ঞান নাশ করছেন। প্রাপ্তি কিছু নেই। কেউ আত্মা অর্থে বুদ্ধি বা জীবাত্মা বলেন। কর্মজ্ঞানী ও জ্ঞানকাণ্ডীর হচ্ছে খাঁচায় রং করা। খাঁচার ভেতর যে আত্মা-পাখিটা বসে আছে, তার খাদ্য না দিলে সে তো শুকিয়ে মরবে। তার খাদ্য দিতে হবে। আত্মার খাদ্য হরিগুণকীর্তন—‘‘হরিগুণকীর্তনং হি আত্মানো ঘাসঃ।’’ তা হলে আত্মাকে সুপ্রসন্ন করতে হলে, হরিনামের দানা দিতে হবে।
এর দ্বারা ঋষিরা বোঝাতে চাইলেন, আত্মার সুপ্রসন্নতার জন্য কর্ম ও জ্ঞানের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন ভক্তির। তাই তাঁরা ভক্তির অঙ্গ যে হরিগুণকীর্তন—সেইটিই সূতমুনির কাছ থেকে শুনতে চাইছেন। ভক্তমহিমায় ভগবানের মহিমাই কীর্তিত হয়।
ভাগবত গ্রন্থটি ভক্ত ও ভগবানের মহিমা খ্যাপক। সুতরাং ঋষিদের প্রকারান্তরে ভাগবত শোনার ইচ্ছাই ব্যাঞ্জিত হল। এইটিই ঋষিদের দ্বিতীয় প্রশ্ন ‘‘যেনাত্মা সুপ্র-সীদতি।’’