উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
সসীমের দ্বারাই অসীমকে, অনিত্যের দ্বারা নিত্যকে এবং বিশ্ব-জগতের দ্বারা বিশ্বাতীতকে প্রচার করতে হবে। পায়ে সরু কাঁটা ফুটলে আরেকটি কাঁটা দিয়ে সেটিকে তুলে পরে দু’টি কাঁটাকেই ফেলে দিতে হয়। সেইরকম বিদ্যা-মায়ার সাহায্যে অবিদ্যা-মায়াকে দূর করতে হয়। বিদ্যা-মায়া হ’ল আপেক্ষিক জ্ঞান আর অবিদ্যা-মায়া আপেক্ষিক অজ্ঞান। অবিদ্যা-মায়া আত্মার দৃষ্টিকে অন্ধ ক’রে রাখে। কিন্তু বিদ্যা-অবিদ্যা এই দু’টিই মায়া। ব্রহ্মজ্ঞান পেতে গেলে বিদ্যা ও অবিদ্যা এই দু’টিই বিসর্জন দিয়ে সব দ্বন্দ্ব থেকে মুক্ত হতে হয়। ভুবন-মোহিনী মায়াকে যদি একবার চিনে ফেলতে পারো তবে মায়া তোমাদের ছেড়ে দূরে পালাবে। যেমন চোরকে একবার দেখে ফেললে সে ছুটে পালায়। ভূতে পাওয়া লোক যদি একবার বুঝতে পারে যে তাকে ভূতে পেয়েছে, তবে ভূত সঙ্গে সঙ্গে তার ঘাড় থেকে নেমে যায়। মায়ায় মুগ্ধ জীব তার ভ্রম বুঝতে পারলেই মায়া-মুক্ত হয়ে যায়।
কোন বন্ধন না থাকলেও কিছু লোক নিজে থেকেই বন্ধনের সৃষ্টি ক’রে মায়ায় বদ্ধ হয়ে থাকতে ভালবাসে। মুক্ত হয়ে বাঁচতে চায় না। যাকে পরিবার পালন করতে হয় না, আত্মীয়দের দেখাশোনা করতে হয় না, তারা সাধারণতঃ বেড়াল, বাঁদর, কুকুর বা পাখী পুষে সঙ্গী করে আর দুধের স্বাদ ঘোলে মেটায়। মানুষের ওপর মায়ার মোহিনীশক্তি এরকমই।
খুব জ্বরের ঘোরে আর তেষ্টায় রুগী ভাবে পৃথিবীতে যতো জল আছে সমস্তই পান করতে পারলে তবে তার তেষ্টা মিটবে। কিন্তু জ্বর ছেড়ে গিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে দেখা যায় এক পেয়ালা জলই তার পক্ষে যথেষ্ট। অল্প একটু জল খেলেই তার তেষ্টা মিটে যায়। সেইরকম মায়ার দাপটে মানুষ তার নিজের ক্ষুদ্রতা ভুলে মনে করে সে ঈশ্বরের সবকিছু জেনে ফেলতে সক্ষম হবে। কিন্তু মায়া সরে গেলে দেখা যায় দিব্যজ্যোতির একটি-দু’টি রশ্মিই মানুষকে অনন্ত আনন্দের বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। একবার এক ঘোর তার্কিককে পরমহংসদেব বলেন,—“তুমি যদি যুক্তিতর্ক দিয়ে ঈশ্বরকে জানতে চাও তবে কেশবের কাছে যাও, আর এক কথায় ঈশ্বরকে জানতে হ’লে আমার কাছে এসো।”
একবার একজন প্রকৃত সত্যান্বেষী ভক্ত ঠাকুরকে বলেন,—‘খুব সংক্ষেপে আমায় আত্মজ্ঞান লাভের উপায় ব’লে দিন।’ তার উত্তরে ঠাকুর তাকে বলেন, “ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা”।
স্বামী অভেদানন্দের ‘শ্রীরামকৃষ্ণদেবের আধ্যাত্মিক বাণী’ থেকে