উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
আগে ঈশ্বরকে জানো, তারপর ধন-সম্পদ অর্জনের চেষ্টা। উলটো করতে যেও না। আগে আধ্যাত্মিক ভাব অর্জন ক’রে নিয়ে তারপর সংসারে প্রবেশ করো তবে মনের শান্তি হারাতে হবে না। বালক যেমন খুঁটিকে দু’হাতে ধরে গায়ের জোরে তার চারপাশে ঘুরপাক খায়, পড়ে যাবার ভয় থাকে না, তোমরাও সেইরকম ঈশ্বরের পাদপদ্মকে দৃঢ়ভাবে ধরে সংসার করে যাও। তাহলেই সমস্ত বিপদ-আপদ থেকে মুক্ত হবে। সংসারের দুর্ভাবনা দুশ্চিন্তায় মনকে কখনো চঞ্চল হতে দিয়ো না। প্রয়োজনীয় সব কাজ যথানিয়মে করে যাও আর মনকে ঈশ্বরের পাদপদ্মে স্থির রাখো। অসতী নারী যেমন বাড়ির সব কাজ বেশ যত্নের সঙ্গে করে গেলেও তার মনটি উপপতির চিন্তায় মগ্ন থাকে; সংসারী, তুমিও সেইরকম সংসারের সব কাজ নিষ্ঠা সহকারে সম্পন্ন করো, কিন্তু মন সর্বদা প্রভুর ধ্যানে নিযুক্ত রাখো। এক চাষা সারা দুপুর ধরে খেটে-খুটে তার আখ ক্ষেতে জল দিচ্ছিল। কাজের শেষে দেখল, এক ফোঁটা জলও মাঠে ঢোকেনি; বড় বড় ইঁদুর-গর্ত দিয়ে জল বেরিয়ে গেছে। সংসারী ভক্তরাও ঈশ্বরের পূজা করে মনের মধ্যে অনেক গোপন বাসনা রেখে যেমন যশ, ইন্দ্রিয়সুখ, আরাম। নিত্য পূজা-প্রার্থনা করলেও বাসনার ইঁদুর-গর্ত দিয়ে ভক্তি বেরিয়ে যায়। শেষজীবনে দেখা যায় তারা গোড়ায় যেমন ছিল আজও সেইরকম আছে—একবিন্দুও উন্নতি করতে পারেনি। যে ভাবের ঘরে চুরি করে সে কোন কাজে সিদ্ধিলাভ করতে পারে না। কেমন ক’রে তুমি ঈশ্বর দর্শন করবে যদি না তোমার মনপ্রাণ ঢেলে তাঁকে চাও? যা ভাবো, তাই বলা উচিত। কথায় ও কাজে মিল থাকা চাই। মুখে বলছো ঈশ্বরই তোমার সব অথচ মনে করছো সংসারই তোমার সব। এতেকোনো লাভ হয় না।
জলে নৌকা থাকা ভাল, কিন্তু নৌকায় যেন জল ঢুকে না পড়ে। যে আধ্যাত্মিক উন্নতি করতে চায় সে সংসারে থাকতে পারে, কিন্তু তার মনের মধ্যে সংসার যেন না ঢুকে পড়ে। কলসীর তলায় যদি একটি ছোট গর্তও থাকে তবে কলসীর সব জল বেরিয়ে যায়। সেইরকম নবীন সন্ন্যাসীর মনে যদি বিন্দুমাত্রও সংসারে অনুরাগ থাকে তবে তার সব চেষ্টাই বিফল হয়। দুধের কড়ার নীচে জ্বলন্ত উনুন থাকলে দুধ টগ্বগ্ ক’রে ফুটতে থাকে। তলা থেকে উনুনটি সরিয়ে নিলেই দুধ স্থির হয়ে যায়। সেইরকম নবীন সন্ন্যাসী প্রথমদিকে উৎসাহে টগবগ করে, পরে তা থিতিয়ে যায়। দুধ আর জল একসঙ্গে রাখলে মিশে যাবেই, তখন তাদের আলাদা করা সম্ভব নয়। সেইরকম নবীন সন্ন্যাসীরা যদি সবরকম সংসারীদের সঙ্গে বাছবিচার না ক’রে মেলামেশা করে তবে শুধু যে তার আদর্শ টলবে তাই নয়, আগে তার মধ্যে যে বিশ্বাস, ভালবাসা, উদ্দীপনা ছিল সেসবও ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাবে। ঘোলকে মন্থন করলে তার থেকে মাখন ভেসে ওঠে। সেই মাখন তুলে নিয়ে আলাদা পাত্রে পরিষ্কার জলে রাখতে হয়। কিন্তু যদি সেই মাখনকে বাকী ঘোলের মধ্যেই ভাসিয়ে রাখা যায়, তবে তার মিষ্টত্ব ও ঘন ভাব অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। সেইরকম সাধক যদি খানিকটা আধ্যাত্মিক উন্নতির পর আবার ঘোর বিষয়ীদের সংস্রবে আসে তবে সংসারের মলিনতা লাগবে, কিন্তু দূরে থাকলে পবিত্র থাকবে।