উচ্চতর বিদ্যায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় আগ্রহ বাড়বে। পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতে আনন্দলাভ হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ... বিশদ
প্রকৃতির রূপ, বরফের পাহাড়ের সৌন্দর্য্য, বহু দেশবিদেশ ঘুরে দেখেছি। এখন আমার প্রকৃতির রূপ দেখার মোহ থেকে বেশী আকর্ষণ মায়ের পূতপদরেণু মাখা স্থানগুলো দেখ্বার। তাই এবার কনখলে পূজো দেখে আশ্রমবাসী সকলের ভালবাসা ও সাধু-সন্ন্যাসীদের আশীর্বাদ নিয়ে লক্ষ্মীপূজোর পর দেরাদুন রওনা হলাম। সেবা ও জনবলের অভাবে সবচাইতে পুরোনো মাতৃস্মৃতি বিজরিত দেরাদুন আশ্রম, মায়ের লৌকিক দেহত্যাগের পুণ্যভূমি খাঁ খাঁ করছে। সেই শয়নমন্দির মেরামত হচ্ছে। কনখলে যে অনুভূতি আমি লাভ করি, ওখানে তা হয় না। কাজের লোকজনের বড়ো অভাব। কর্তৃপক্ষের আদর যত্নের ত্রুটি নেই। আমার ছেলের বৌর কাকা কাকীমা আমাদের সাথে গিয়েছিলেন। ১৭/১০/৯২ তাং মায়ের মর্মর মূর্তির সামনে নির্বাণদা বৌমার দীক্ষাপ্রার্থী কাকাকে দীক্ষা দিলেন।
দু’তিন দিন দেরাদুন থেকে আমরা নির্বাণদার সাথে আলমোড়া রওনা হলাম। দিদির বইতে পড়েছি শ্রীশ্রীমায়ের কৈলাস থেকে ফেরার পথে ভাইজি(শ্রীযুক্ত জ্যোতিষ চন্দ্র রায়)আলমোড়াতে দেহত্যাগ করেন। নির্বাণদার ঐ সমাধি মন্দিরের উপর দারুণ আকর্ষণ। ভাইজির মতো ভক্ত, সিদ্ধপুরুষ দুর্লভ। সরকারের নামীদামী অফিসার ছিলেন। কিন্তু মাতৃগত প্রাণ জ্যোতিষ সংসারের বৈভব, পদমর্যাদা, জাগতিক সুখ সব তুচ্ছ করে মায়ের শ্রীচরণে নিজেকে নিবেদিত করে দিলেন। নিবেদিত পুষ্পের সৌরভে তিনি এখন আলমোড়ের আনন্দময়ী আশ্রমের পাতালদেবীতে চিরসমাহিত। মা আনন্দময়ী তাঁর প্রিয় সন্তানকে জাগতিক মুক্তি লাভ করিয়ে অধ্যাত্ম জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ দান করেন। তৈলধারাবৎ ধ্যান ধারণা মায়ের উপর ন্যস্ত ছিল। তাই সর্ব দেবদেবীময়ী মা আনন্দময়ী তাঁর আনন্দরাজ্যে এ সন্তানকে অভিষেক করে নেন। নির্বাণদার প্রথম জীবনের মাতৃসঙ্গ এই আলমোড়ায়। মা তাঁকে সব্জী কাটার থেকে সবকিছু এখানে শিখিয়েছিলেন। তিনি মায়ের কথা সুমধুর ভাষায় শুনিয়ে আমাদের তৃপ্তি দিতেন। ওখানকার সেক্রেটারী যোগানন্দ ব্রহ্মচারীজীর ব্যবহারও আকর্ষণীয়। পূজোর সময় কনখলে আমার জ্বর ও ব্রংকাইটিস্ হয়েছিল। এজন্য শরীর ভীষণ দুর্বল ছিল। কিন্তু মাতৃকৃপায় একরাত্রিতে সচল হয়ে গেলাম। আমাদের নিয়ে ১/১০/৯২ তাং নির্বাণদা ও যোগানন্দভাই মায়ের পূত চরণ সিক্ত পীঠস্থান ধবলচীনা পাহাড় দর্শন করতে নিয়ে গেলেন।
ধবলচীনা আলমোড়া থেকে ৪০/৫০ কিলোমিটার দূরে। শুনেছি ছয় হাজার ফুটের উপর পাহাড়ের উচ্চতা। হিসাব নিকাশ আমি জানি না। যে অভিজ্ঞতা হলো লিখছি। নীচ থেকে পাহাড়ে হেঁটে উঠতে হবে। ডাণ্ডিকাণ্ডি এসব বহু চিন্তা হয়েছে। কার্য্যতঃ কোনো প্রয়োজন হলো না। আলমোড়ার একটি ছেলে ‘যোশী’ দেরাদুন থেকে আমাদের সাথে ধবলচীনা যায়। দীর্ঘ সুন্দর পাহাড়ী পথ। বনবনানী, ইউকিলিপটাস, চীর, দেবদারু গাছের সমারোহে শান্ত শ্যামলতা মাখানো নিভৃত নীরব পরিবেশের মধ্য দিয়ে আমরা চল্ছি। মাতৃ কৃপার টুকরো টুকরো কাহিনী আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে এই যাত্রা সুমধুর। দেরাদুন থেকে রওনা হবার সময় এক ভক্ত আমায় আন্তরিকতার সঙ্গে বলেছিলেন, “তুমি পাহাড়ের নীচ থেকে প্রণাম করে ফিরো। নচেৎ উপরে ওঠার কষ্ট ও ঠাণ্ডায় মরে যাবে।”