উচ্চতর বিদ্যায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় আগ্রহ বাড়বে। পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতে আনন্দলাভ হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ... বিশদ
যতক্ষণ না আমরা ক্ষমাগুণের অধিকারী হতে পারছি ততক্ষণ আমরা হৃদয়ের পবিত্রতা অর্জন করতে পারব না—যা আমাদের ভগবদ্দর্শন করাবে। সুতরাং সাধকের পক্ষে ক্ষমাগুণের অভ্যাস একান্ত প্রয়োজন। শৈলোপদেশে আমরা লক্ষ্য করেছি যে খ্রীস্ট বার বার এটিকে অভ্যাস করতে বলছেন। তিনি শিষ্যদের শিখিয়েছেন কী ভাবে দয়া, বন্ধুত্বস্থাপন ও ক্ষমা করতে হবে। ক্ষমার উপদেশ শৈলোপদেশ ছাড়া বাইবেলের অন্যান্য স্থানেও আছে। সে সব জায়গায় খ্রীস্ট উপদেশের সঙ্গে নিজের জীবনের উদাহরণ দিয়াছেন। যখন পীটার তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন: “প্রভু, আমার ভাই আমার বিরুদ্ধে অন্যায় করলে কতবার আমি তাকে ক্ষমা করব? সাত বার কি?” খ্রীস্ট উত্তর দিলেন: “আমি তোমাকে সাতবার বলি না, বলি সাতাত্তর বার।”
খ্রীস্ট নিজের জীবনে অপরের দ্বারা উৎপীড়িত হওয়া সত্ত্বেও কখনও তাদের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করেননি। তিনি তাদের আর্শীবাদ করতেন: “যাও, আর পাপ কোরো না।” “তোমার সব পাপ ক্ষমা করা হল।” ক্রুশবিদ্ধ অবস্থায় প্রার্থনা করার সময় তিনি স্বর্গীয় পিতার কাছে মানুষের এই অজ্ঞানজনিত কর্মকে ক্ষমা করতে মিনতি জানালেন, “কারণ তারা জানে না যে তারা কি করছে”।
পৃথিবীর মহান আচার্যের আধ্যাত্মিক জীবনে ক্ষমা অভ্যাসের ওপর জোর দিয়েছেন। বুদ্ধ বলেছেন: “কোন মানুষ যদি নির্বোধের মতো আমার ক্ষতি করে তবে প্রতিদানে আমি তাকে আমার বিদ্বেষহীন ভালবাসা পাঠিয়ে দেব। সে আমার যত ক্ষতি করবে আমি তত শুভেচ্ছা পাঠাব। হৃদয় থেকে অপকারেচ্ছা মুছে ফেল; এমন কি শত্রুর প্রতিও বিদ্বেষভাব রেখো না। সকলকে প্রেমালিঙ্গনে আবদ্ধ কর।” এসব আচার্যেরা জানেন যে আমাদের যদি ক্ষমাগুণ না থাকে এবং মনে যদি ক্রোধ ও বিদ্বেষ থাকে তবে তা যেমন আমাদের যন্ত্রণার কারণ অপরেরও তেমনি। সেজন্য তাঁরা মৈত্রী-করুণা প্রভৃতি বিপরীত ভাবনার উপদেশ দেন যাতে আমরা বিশ্বের সঙ্গে সমভাবে শান্তি উপভোগ করি।
আমাদের অধিকাংশ ব্যক্তির পক্ষে এ ক্ষমা অভ্যাস এত কঠিন মনে হয় কেন? কারণ যখন কেউ আমাদের প্রতি বিদ্বেষভাবাপন্ন হয় তখন ঐ তরঙ্গে আহত হয়ে আমাদের মনে প্রতিক্রিয়া ওঠে। কোথায় বেশী আঘাত লাগে? অহংকারে। ক্ষমা মস্ত বড় গুণ। কারণ আমরা যদি মানুষের দোষ ক্ষমা করতে পারি তাহলে আমরা অহংকারের গন্ডি— যা ভগবৎদর্শনের অন্তরায়— অতিক্রম করব। তোমরা যখন উপবাস করবে তখন ভন্ডদের মতো বিষণ্ণবদন হয়ো না। কারণ তারা মুখ মলিন করে সবাইকে দেখায় যে তারা উপবাসী। আমি সত্যই বলছি তারা তাদের পুরস্কার পাবে।
এতে তোমাদের লোকচক্ষে উপবাসীর মতো দেখাবে না; কিন্তু স্বর্গস্থ পিতা যিনি গোপনে সব দেখেন তিনি সর্বসমক্ষে তোমাকে পুরস্কৃত করবেন।
হিন্দুদের একটা প্রচলিত প্রবাদ আছেঃ “মুখহলসা ভেতরবুঁদে, কান-তুলসে, দীঘলঘোম্টা নারী, পানাপুকুরের শীতল জল বড় মন্দকারী।”
স্বামী প্রভানন্দের স্বামী চেতনানন্দের অনূদিত ‘বেদান্তের আলোকে খ্রিস্টের শৈলোপদেশ’ থেকে