উচ্চতর বিদ্যায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় আগ্রহ বাড়বে। পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতে আনন্দলাভ হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ... বিশদ
এখন, প্রথম প্রশ্ন হ’ল, ধর্ম-শব্দটি অ-কারান্ত; কিন্তু ওম্-শব্দটি ম্-কারান্ত কেন? ‘ওম্’ হওয়াই তো উচিত ছিল।
এর উত্তর এই যে, ব্যাকরণের একটি সূত্র রয়েছে—‘অবতেষ্টিলোপশ্চ’ অর্থাৎ অব্ ধাতুর বেলায় বিশেষ নিয়ম এই যে, তার উত্তর মন্-প্রত্যয় করলে, মন্-এর ‘অন্’ অংশ লোপ পাবে, থাকবে শুধু ‘ম্’।
দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, ‘ও’ এল কোথা থেকে?
এর উত্তর: পাণিনির ঈষৎ দীর্ঘ ও দুরুচ্চার্য সূত্র, ‘জ্বরত্বর...’ ইত্যাদির দ্বারা’ ‘অব্-’এর ‘অ’ ও ‘ব’ এই উভয় স্থানেই ‘ঊ’ হবে, সুতরাং ‘অব্+মন্’ দাঁড়াল ‘ঊ+ঊ+ম্’। সন্ধি ক’রে হ’ল ‘ঊম্’। ‘সার্বধাতুকার্ধধাতুকয়োঃ’—সূত্রানুসারে ঊ-কারের গুণ ‘ও’ হওয়ায় ‘ঊম্’ রূপান্তরিত হ’ল ‘ওম্’-এ।
‘ওঁ নমশ্চণ্ডিকায়ৈ’ এই মন্ত্রের ব্যাখ্যায় শ্রীশ্রীচণ্ডীর বিদগ্ধ টীকাকার শান্তনু চক্রবর্তীও ওম্-এর এই ব্যুৎপত্তি দেখিয়েছেন। অধিকন্তু তিনি বলেছেন, পাণিনির ‘কৃন্মেজন্তঃ’ সূত্র অনুসারেই ‘ওম্’ একটি অব্যয়। এ বিষয়ে তিনি ভট্টোজী দীক্ষিত বা উজ্জল দত্তকে অনুসরণ করেননি।
ব্যাকরণ-সূত্রের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে এসে বাঁচা গেল মনে হলেও, ‘ওম্’ যে ‘অব্’ ধাতু থেকে এসেছে এবং এর ধাতুগত অর্থ যে রক্ষাকর্তা ঈশ্বর, এই সারটুকু পাওয়ার জন্য বৈয়াকরণদের কাছে আমাদের ঋণ স্বীকার করতেই হবে।
কেউ কেউ আরও সহজে ‘ওম্’ পদটি সিদ্ধ করেন। তাঁদের মতে ‘অ’ ‘উ’ ‘ম’ দ্বন্ধসমাসবদ্ধ হ’লে ‘ওম্’ হয়। এইভাবে পদটি সিদ্ধ করার উপযোগিতাও যথেষ্ট রয়েছে, কারণ বৈদিক যুগ থেকেই অকার, উকার ও মকারকে ওঙ্কারের তিনটি মাত্রা, পাদ, বা অবয়র রূপে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সেই সুদূর অতীত থেকে আজ পর্যন্ত অকার উকার ও মকারের নানাভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অনেকগুলি ব্যাখ্যারই একটি সারসংক্ষেপ প্রসিদ্ধ শিবমহিম্নঃস্তোত্রের ২৭-সংখ্যক শ্লোকটিতে পাওয়া যায়—
ত্রয়ীং, তিস্রো বৃত্তীস্ত্রিভুবনমথো ত্রীনপি সুরান্
অকারাদ্যৈর্বর্ণৈস্ত্রিভিরভিদধত্তীর্ণবিকৃতি।
তুরীয়ংতে ধাম ধ্বনিভিরবরূদ্ধানমপূভিঃ
সমস্তং ব্যস্তং ত্বাং শরণদ গূণাত্যোমিতি পদ্ম।।
আক্ষরিক অনুবাদ করলে শ্রুতিকটু হবে, তাৎপর্যও সম্ভবতঃ সুপরিস্ফুট হবে না, তাই শ্লোকটির ভাবানুবাদ দেওয়া হচ্ছে।
হে শরণদাতা শিব! ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ ও সামবেদ তোমারই মূর্তি। জাগ্রৎ, স্বপ্ন ও সুষুপ্তি তোমারই অবস্থারত্রয়। পৃথিবী, অন্তরীক্ষ ও স্বর্লোক ও তুমি। সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়কারী ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও রুদ্রও তোমারই রূপ। আর যেহেতু ওঙ্কারের তিনটি অবয়র-অকার, উকার ও মকার যথাক্রমে ঐ ঋগাদি তিন বেদ, জাগ্রদাদি তিন অবস্থা, পৃথিবী আদি তিন লোক ও ব্রহ্মাদি তিন দেবতার বাচক সেই হেতু ওঙ্কার পৃথক পৃথক ঐ তিন বর্ণের দ্বারা তোমার স্তুতি করছে।
আবার ঐ তিন বর্ণের একত্র সমাবেশ যে সূক্ষ্ম ওঙ্কার নাদ স্ফুরিত হয়, তা তোমারই তুরীয় স্বরূপের স্তুতি করছে।
স্বামী ধ্যানানন্দের ‘ধ্যান’ গ্রন্থ থেকে