উচ্চতর বিদ্যায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় আগ্রহ বাড়বে। পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতে আনন্দলাভ হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ... বিশদ
শ্রীরামকৃষ্ণ (বৈষ্ণবভক্ত ও অন্যান্য ভক্তদের প্রতি)—‘আমার ধর্ম ঠিক আর অপরের ধর্ম ভুল—এমত ভাল না। ঈশ্বর এক বই দুই নাই। তাঁকে ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন লোকে ডাকে। কেউ বলে গড্, কেউ বলে আল্লা, কেউ বলে কৃষ্ণ, কেউ বলে শিব, কেউ বলে ব্রহ্ম। যেমন পুকুরে জল আছে—এক ঘাটের লোক বলছে জল, আর-এক ঘাটের লোক বলছে ওয়াটার, আর-এক ঘাটের লোক বলছে পানি— হিন্দু বলছে জল, খ্রিস্টান বলছে ওয়াটার, মুসলমান বলছে পানি,—কিন্তু বস্তু এক। মত—পথ। এক-একটি ধর্মের মত এক-একটি পথ,—ঈশ্বরের দিকে লয়ে যায়। যেমন নদী নানাদিক থেকে এসে সাগরসঙ্গমে মিলিত হয়।
‘বেদ-পুরাণ-তন্ত্রে, প্রতিপাদ্য একই সচ্চিদানন্দ (কৃষ্ণ, রাম প্রভৃতি)। তন্ত্রেও সচ্চিদানন্দ (শিব)। সচ্চিদানন্দ ব্রহ্ম, সচ্চিদানন্দ কৃষ্ণ, সচ্চিদানন্দ শিব। ...আবার ভক্তদের ভিতর থাক থাক আছে, উত্তম ভক্ত, মধ্যম ভক্ত, অধম ভক্ত। গীতাতে এ-সব আছে।’
বৈষ্ণব ভক্ত—আজ্ঞা হাঁ।
শ্রীরামকৃষ্ণ—‘অধম ভক্ত বলে, ঈশ্বর আছেন—ওই আকাশের ভিতর অনেক দূরে। মধ্যম ভক্ত বলে, ঈশ্বর সর্বভূতে চৈতন্যরূপে—প্রাণরূপে আছেন। উত্তম ভক্ত বলে, ঈশ্বরই নিজে সব হয়েছেন, যা কিছু দেখি ঈশ্বরের এক-একটি রূপ। তিনিই মায়া, জীব, জগৎ এইসব হয়েছেন—তিনি ছাড়া আর কিছু নাই।
চতুর্বিধা ভজন্তে মাং জনাঃ সুকৃতিনো’হর্জুন।
আর্তো জিজ্ঞাসুরর্থার্থী জ্ঞানী চ ভরতর্ষভ।
তেষাং জ্ঞানী নিত্যযুক্ত একভক্তিবিশিষ্যতে।
প্রিয়ো হি জ্ঞানিনোহত্যর্থমহং স চ মম প্রিয়ঃ।।
হে ভরতশ্রেষ্ঠ অর্জন, আর্ত, তত্ত্বজিজ্ঞাসু, অর্থকামী ও তত্ত্বজ্ঞানী—এই চার রকম সুকৃতিশালী বা পুণ্যাত্মা ব্যক্তিগণ আমাকে ভজনা করেন।
এই চার প্রকার ভক্তের মধ্যে জ্ঞানী-ভক্তই শ্রেষ্ঠ। তিনি সতত আমাতেই নিত্যযুক্ত ও একমাত্র আমাতেই ভক্তিমান। আমি জ্ঞানীর অত্যন্ত প্রিয় এবং জ্ঞানীও আমার অতীব প্রিয়।
স্বামী প্রেমেশানন্দ: (১) আর্ত—বিপদে পড়িয়া, (২) জিজ্ঞাসু—জ্ঞানলাভের জন্য, (৩) অর্থার্থী—ইহ বা পরকালের কোনও স্বার্থ সিদ্ধির জন্য অথবা (৪) জ্ঞানী—জ্ঞান হওয়াতে ভগবানই সার বস্তু জানিয়া,—লোকে ভগবানকে ডাকে।
সুকৃতিন:—‘পুণ্যকর্মের দ্বারা মন নির্মল না হইলে ভগবানকে ডাকিবার প্রবৃত্তি হয় না।’
স্বামী রঙ্গনাথানন্দ: ‘এখানে একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, জ্ঞানী বলতে ভক্তকেও বোঝানো হচ্ছে। কারণ সর্বোচ্চ জ্ঞান ও সর্বোচ্চ ভক্তি, দুটি একই বস্তু; দুটিই মায়ার কবল থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত।
...‘যেমন ধরুন বালক প্রহ্লাদ,...ভগবানের কাছে কিছু চায়নি। চাইত শুদ্ধা ভক্তি, শুধু ভালবাসার জন্যই ভালবাসা।... নৃসিংহদেব বললেন...“তুমি আমার কাছে বর চাও”...এর উত্তরে প্রহ্লাদ বলছেন, “আমি ব্যবসাদার নই যে ভক্তি-ভালবাসা কেনাবেচা করব। আমার ভক্তি একনিষ্ঠ।”
বিশ্বনাথ দাসের সংকলিত ‘কথামৃতে গীতা’ থেকে