বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বন্যার জলে ইতিমধ্যেই প্লাবিত হয়েছে কালিয়াচক ৩ নম্বর ব্লকের বৈষ্ণবনগর থানার বিস্তীর্ণ এলাকা। ফলে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাতায়াতের জন্য স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে বিভিন্ন পাড়ায় ছোট ছোট ডিঙি নৌকা দেওয়া হয়েছে। তবে এই নৌকাগুলিতে তিন চারজনের বেশি একসঙ্গে যাতায়াত না করার মৌখিক পরামর্শও পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে।
কালিয়াচকের ৩ নম্বর ব্লকের কৃষ্ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বহু এলাকাও গঙ্গার জলে ইতিমধ্যেই প্লাবিত। সেই কারণে এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায় যাতায়াত সহ বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য ভুবনমণ্ডল পাড়াতেও ডিঙি নৌকা দিয়েছে পঞ্চায়েত। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে এমনই এক ডিঙি নৌকা করে মঙ্গলবার বিজয়া দশমীর রাতে অন্য পাড়ায় প্রতিমা নিরঞ্জন দেখার উদ্দেশ্যে আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে ওই তিনি শিশুও যাচ্ছিল। যে প্লাবিত জায়গার উপর দিয়ে নৌকাটি যাচ্ছিল সেখানে আগে একটি ইটভাটা ছিল। সেই ইটভাটার অংশটি যথেষ্ট গভীর। অন্যদিকে জলের স্রোতও ছিল প্রবল। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, ছোট নৌকাটিতে প্রায় ১০ জন যাত্রী ছিল। অথচ তাতে সর্বোচ্চ পাঁচজন যাতায়াত করতে পারে। ফলে একদিকে অতিরিক্ত যাত্রী অন্যদিকে জলের প্রবল স্রোতের টান সামলাতে না পেরে নৌকাটি উল্টে যায়। নৌকার বাকি যাত্রীরা কোনও মতে সাঁতরে ডাঙায় উঠলেও প্রবল স্রোতের টানে নিখোঁজ হয়ে যায় প্রেমকুমার মণ্ডল(১১), জুলি ওরফে টুসি মণ্ডল(৯) ও তার ভাই দেবরাজ ওরফে ধীরাজ মণ্ডল(৬)।
কোনও মতে বেঁচে ফেরা যাত্রীদের চিৎকারে জড়ো হয়ে যান স্থানীয় গ্রামবাসীরা। খবর দেওয়া হয় পুলিসেও। ঘটনাস্থলে বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের একটি দল সহ ছুটে আসে পুলিস। ততক্ষণে নিখোঁজ নাবালক নাবালিকাদের খোঁজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শেষ পর্যন্ত, রাতের দিকে ব্যাপক তল্লাশি চলাকালীন একের পর এক ভেসে ওঠে তিন নাবালক নাবালিকার নিথর দেহ। স্থানীয় গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তিনজনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন। মুহূর্তে শোকের ছায়া নেমে আসে পুরো এলাকায়।
মালদহের অতিরিক্ত পুলিস সুপার (গ্রামীণ) দীপক সরকার অবশ্য জানিয়েছেন, ছোট ডিঙি নৌকাটিতে মাত্র ছয়জন যাত্রী ছিল। অতিরিক্ত পুলিস সুপার বলেন, এই ধরনের নৌকাগুলির যা আয়তন তাতে পাঁচ থেকে ছয়জনের বেশি ওঠা সম্ভব নয়। নৌকাটি চালাচ্ছিল এক নাবালক। ফলে স্রোতের মুখে নৌকাটিকে সামলানো তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। নৌকাটি উল্টে যায়। তিনটি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। মৃতদেহগুলি ময়না তদন্তে পাঠানো হয়েছে। কীভাবে ঘটনাটি ঘটল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দীপকবাবু।
এদিকে একই সঙ্গে দুই সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছেন স্বপন মণ্ডল। কোনও মতে কান্না চেপে তিনি বলেন, বিজয়া দশমীর দিন আমার কোল খালি হয়ে গেল। এক সঙ্গে দুই সন্তানই চলে গেল। আমার জীবনের আলোও যেন নিভে গেল।
এদিকে জেলায় একই সপ্তাহের মধ্যে পরপর দুইটি নৌকাডুবিতে মোট ১২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় বেশ কিছু প্রশ্ন উঠতে শুরু করছে। এই মুহূর্তে মালদহের অনেক এলাকাই বন্যা পরিস্থিতির কারণে প্লাবিত। জেলার প্রধান নদীগুলির জলস্তরও বেড়ে রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এই দু’টি দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে পুজোর মরশুমে বিসর্জনের সময় নদীর ঘাট সহ বিভিন্ন এলাকায় কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করা উচিৎ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।