অনুপ দত্ত, ময়নাগুড়ি, বিএনএ: ‘লুটেরা এবং তার মদতদাতাদের রেহাই দেবে না চৌকিদার’— শুক্রবার ময়নাগুড়ির চূড়াভাণ্ডারের মঞ্চে দাঁড়িয়ে এভাবেই হুঁশিয়ারি দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, যারা মানুষের টাকা লুট করেছে তাদের কাউকে ছাড়া হবে না। সিবিআই হানার পর পুলিস কর্তা রাজীব কুমারের সমর্থনে মেট্রো চ্যানেলে ধর্নায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর এই ধর্নায় বসা নিয়ে প্রথম মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী। মোদির কটাক্ষ, পশ্চিমবঙ্গে এমন একজন মুখ্যমন্ত্রী আছেন, যিনি গরিব মানুষের পয়সা যারা লুট করেছে, তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। জনতা মমতা দিদির কাছে জানতে চায়, চিটফান্ডকাণ্ডের তদন্তে আপনি এত ভয় পাচ্ছেন কেন? যে লোকেদের বিরুদ্ধে তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ উঠছে, দিদি তাদের জন্য ধর্নায় বসেছেন। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস, সারদা, নারদ, রোজভ্যালিতে যারা ঠকেছেন, তাদের সবাইকে এই বিশ্বাস দিতে চাই, এই চৌকিদার কাউকে ছাড়বে না। যারা লুট করেছে, তাদের কাছ থেকে পাই পয়সার হিসাব নেব। আপনারাই বলুন, চিটফান্ডকাণ্ডের তদন্তে দিদির এত ভয় কেন? বক্তব্যের শুরুতেই বাংলায় সম্বোধন করে জনতার হাততালিও কুড়িয়ে নেন মোদি।
এদিন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর সভায় নজিরবিহীন জমায়েত হয়েছিল। কনকনে ঠাণ্ডা ও হালকা মেঘ-বৃষ্টির খেলার মধ্যেই সকাল থেকে সভায় লোক দাঁড়িয়েছিল। ৩টে ৪০ মিনিটে যখন প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার চূড়াভাণ্ডারে পৌঁছয় তখন সভা জনসমুদ্রের চেহারা নিয়েছে। সভায় পৌঁছে প্রথমে তিনি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চের উদ্বোধন করেন। একই সঙ্গে সলসলাবড়ি ফোর লেনের কাজের শিলান্যাসও করেন। এদিন দলীয় সভা কার্যত নির্বাচনী সভায় পরিণত হয়। তিনি চা-বাগানের শ্রমিকদের থেকে অসংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিকদের জন্য তাঁর সরকারের পেনশন প্রকল্পের কথা মনে করিয়ে দেন। এদিন আগাগোড়া মোদির আক্রমণের লক্ষ্য ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, জগাই-মাধাইয়ের সরকার চলছে। রাজ্যে গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। তিনি শিলিগুড়ি পুরসভার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, রাজ্য সরকার পুরসভা চালাতে কোনও সহযোগিতা করছে না। বক্তব্যে সিপিএম পরিচালিত পুরসভার পাশে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী কী বার্তা দিতে চাইলেন, তা নিয়ে নয়া জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গের তিনটি টি— টিম্বার, টি এবং ট্যুরিজমকে দিদি শেষ করে দিয়েছে। দিদির মন দিল্লির দিকে পড়ে আছে। আর রাজ্যের মানুষের অবস্থা দুর্বিষহ। তিনি বলেন, মানুষ কমিউনিস্ট সরকার সরিয়ে তৃণমূলকে এনেছিল। তারা তো আরও ভয়ঙ্কর। এখন জোট সরকারের কথা বলছে। যেখানে যারা পিছিয়ে গিয়েছে, তাদের নিয়ে জোট হচ্ছে। ২০১৯ সালে বিজেপি কেন্দ্রে সরকার গঠন করবে দাবি করে তিনি বলেন, রথযাত্রা করতে দেয়নি। আমরা চেয়েছিলাম এই রথ যাত্রার মাধ্যমে মানুষ কী চাইছে সেটা জানতে। আমি বলছি, আগামী ২০১৯’র নির্বাচনে জিতে এসে মানুষ কী চায়, সেটা জানতেই আমরা দেশব্যাপী রথযাত্রা করব। চা বাগান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরাই বন্ধ চা বাগান খুলে দিয়েছি। চা শ্রমিকদের দুঃখকষ্ট আমরাই দেখি। শ্রমিকেরা ৬০ বছরের পর মাসে ৩০০০ টাকা করে পেনশন পাবেন। অসংগঠিত ক্ষেত্রেও শ্রমিকরা পেনশন পাবেন। শেষে জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুঁড়ে ভোট ভিক্ষা করে স্পষ্ট বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, এই রাজ্যে সিন্ডিকেট থেকে আপনারা মুক্ত হতে চান কি না? রাজ্যের হিংসা, খুনখারাবি থেকে মুক্ত হতে চান কি না? তাহলে আপনাদের একটি ভোট খুবই মূল্যবান। এদিন সভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুরিন্দর সিং আলুয়ালিয়া, রূপা গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সভায় যোগ দেন প্রগ্রেসিভ কামতাপুর পিপলস পার্টির নেতা অতুল রায়।