উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
তারপর খানিকটা ঘুমিয়েই পড়ে। আমার টিমে যারা ছিল সবাই কূপের মধ্যে ছিল। একমাত্র আমিই সাইড-আপার বার্থ পেয়েছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ। তখনই বুঝতে পারি ট্রেনটা লাইনচ্যুত হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে আমি উপর থেকে ছিটকে নীচে পড়ে গেলাম। সাইড আপার বার্থ খাঁড়া হয়ে উপরের দিকে উঠে গেল। জিনিসপত্র সব এদিক-ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল। অনুভব করলাম, চোখের উপরে তীব্র যন্ত্রণা। ফেটে গিয়ে রক্ত ঝড়ছে। এমন ফুলে উঠেছে যে বাঁ চোখ দিয়ে কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।
কোনওরকমে উঠে দাঁড়াতেই দেখি সাইড-লোয়ার বার্থের নীচের জানালা আমাদের মাথার উপর রয়েছে। শুরু হয়ে গিয়েছে প্রবল চিৎকার, আর্তনাদ। যেহেতু আমি টিম লিডার, তাই দলের অন্যান্য সদস্যদের খোঁজার চেষ্টা করছি। কিন্তু, কূপ হওয়ার জন্য তাদের হদিশ পাচ্ছি না। কিছুক্ষণের মধ্যে আপদকালীন আলো জ্বলে উঠতেই বুঝতে পারলাম আমরা সকলেই সুরক্ষিত। শুধু একজন একটু আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। দেখতে পাই অনেক বয়স্ক মানুষ জখম হয়ে মেঝেতে পড়ে রয়েছেন। এসি বন্ধ থাকার জন্য ততক্ষণে দমবন্ধ পরিস্থিতি। কামরারই কয়েকজন তড়িঘড়ি করে আপদকালীন জানালা খুলে যাত্রীদের বের করতে শুরু করে।
আমিও আমার কিছু স্টুডেন্টদের বাগপত্র নিয়ে বের করে দিই। শেষে আমাদের কোচের দু’টি ছেলে ও আমি বের হই। দুঘর্টনার কালবিলম্ব না করে ঘটনাস্থলে চলে আসে পুলিস ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে চলে আসেন জেলাশাসক। সেখান থেকে আমাদের একটা বড় অ্যাম্বুলেন্সে করে হাইরোডে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখান থেকে আবার একটা বাসে করে কানপুর সেন্ট্রাল স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। গুরুতর জখমদের সেখান থেকেই স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেন্ট্রাল স্টেশনেই অপেক্ষারত ছিল একটি বিশেষ ট্রেন। সেটা করে আমাদের দিল্লি নিয়ে আসা হয়। সেখানে অপেক্ষা করছিল প্রচুর বাহিনী। প্রাথমিক চিকিৎসার পর প্রয়োজন বুঝে গুরুতর জখমদের রেলের হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন তাঁরা। যেহেতু আমার মাল্টিপল ইনজারি ছিল তাই আমাকেও
সেখানে পাঠানো হয়। রেল হাসপাতালেও খুব তৎপরতার সঙ্গে বিভিন্ন পরীক্ষা, এক্স-রে, স্ক্যান, ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা হয়। তারপর পরিস্থিতি বুঝে বেশিরভাগকেই ছেড়ে দেওয়া হয়। ভগবানের খুব কৃপা যে আমাদের টিমের আর কারও কিছু হয়নি।