উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভদ্রক থেকে জয়ী হয়েছিলেন বিজু জনতা দলের অর্জুন চরণ শেঠি। কেন্দ্রে বাজপেয়ির জোট ক্যাবিনেটেও মন্ত্রী ছিলেন। গতবার তিনি দু’ লক্ষেরও বেশি ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। কিন্তু এবার তিনি টিকিট পাননি। তিনি অবশ্য আগেই পার্টিকে জানিয়েছিলেন, তিনি আর ভোটে লড়বেন না। তার বদলে তাঁর ছেলে অভিমন্যুকে টিকিট দেওয়া হোক। কিন্তু পার্টি তাঁর আর্জি মঞ্জুর না করে এই কেন্দ্রে প্রার্থী করে দেন মঞ্জুলতা মণ্ডলকে। সেই ক্ষোভে অর্জুনবাবু বিজেপিতে যোগ দেন এবং তাঁর ছেলে অভিমন্যু শেঠির জন্য টিকিট সংগ্রহে সমর্থ হন। বেশ কিছুদিন ধরেই অর্জুন শেঠির সঙ্গে নবীনের মতান্তর চলছিল। সেটা প্রকাশ্যে চলে এল। নিজের কথা বলতে তিনি ভুবনেশ্বরে নবীনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে ভিজিটর্স রুমে চার ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও দেখা করেননি নবীন। অপমানিত অর্জুন সেখানে দাঁড়িয়েই প্রতিজ্ঞা করেন, তিনি এর বদলা নেবেন। এখন ভদ্রক কেন্দ্রে ছেলেকে জিতিয়ে মুখতোড় জবাব দিতে চান অর্জুন। ভদ্রকে নিজে না লড়লেও এটা অর্জুনের কাছে বদলার লড়াই। বললেন, ‘দলে কারও উত্থান নবীন সহ্য করতে পারেন না। উনি স্বৈরাচারীর মতো দল চালান।’
এখানে বিজেপির তেমন সাংগঠনিক শক্তি নেই। আপনার ছেলে জিতবেন কীভাবে? প্রশ্নটা অস্বীকার করে তিনি বললেন, ‘ভুল। এখানে গত কয়েক বছরে বিজেপির শক্তি অনেক বেড়েছে। তাছাড়া এতদিন ধরে মানুষ আমাকে চেনেন। তাঁরাই ভোট দেবেন।’
এই কেন্দ্রে প্রচারে বেরিয়েছিলেন বিজেডির প্রার্থী মঞ্জুলতা মণ্ডল। অর্জুনবাবুর কথা শুনে বললেন, ‘উনি জিতেছিলেন ঠিকই, তবে সেটা শঙ্খ চিহ্নে দাঁড়িয়েছিলেন বলেই। ওড়িশায় কোনও প্রার্থীই নিজের ক্যারিশমায় ভোট পান না। সবাই নবীনবাবুকে ভোট দেন। শঙ্খ চিহ্ন ছাড়া মানুষ আর কিছু জানেন না।’ নতুন প্রার্থী হিসাবে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? প্রশ্নটা শুনে বললেন, ‘দারুণ সাড়া পাচ্ছি। লোকসভা ভোটে নতুন প্রার্থী হলেও আমি নতুন নই। আমার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে এখানকার মানুষ পরিচিত।’
‘ওঁরা নন, আমিই জিতব।’ দাবি করলেন এই কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী মধুমিতা শেঠি। মধুমিতা উচ্চশিক্ষিত। প্রচারে খুব খাটছেন। বললেন, ‘বহুদিন পর এবার ভদ্রক আসনটি কংগ্রেস দখল করবে। মানুষের কাছে যাচ্ছি, তাঁরা বর্তমান এমপির কাজ নিয়ে ক্ষুব্ধ। মোদিজির নোটবাতিল নিয়েও মানুষের ক্ষোভ আছে। কেন্দ্রে এবার রাহুলজির নেতৃত্বে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসবে। আমি শুধু তাঁর হাত শক্ত করতে চাই।’ প্রচারে তেমন লোকজন নজরে পড়ল না। বললেন, ‘গরমের জন্য এখন লোক কম। সন্ধ্যার পর প্রচারে জোর দিয়েছি। মানুষ আমাকে বলছেন, আপনিই আসবেন। এখানে নারী শক্তির জয় হবেই।’ বাবা প্রাক্তন এমপি, ভাই বিধায়ক। সুতরাং পরিবারতন্ত্রের প্রসঙ্গ উঠবেই। সেক্ষেত্রে মধুমিতার উত্তর, ‘লোকে পরিবারতন্ত্রের কথা বলেন। আমি যোগ্য কি না, সেটা তো আগে বিচার করা দরকার।’
ভদ্রক কেন্দ্রটি অন্য কেন্দ্রের তুলনায় একটু পৃথক। এখানে তারকা প্রার্থী নেই। তবে যা আছে তা হল পরিবারতন্ত্র। এখানে ত্রিমুখী লড়াইয়ে তিন দলের প্রার্থীই পরিবারতন্ত্রের ধ্বজা তুলে ধরেছেন। নবীনের দল এখানে প্রার্থী করেছে ধামনগর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক মুক্তিকান্ত মণ্ডলের স্ত্রী মঞ্জুলতা মণ্ডলকে। নবীন এখানে মহিলা কার্ড খেলে জয় হাসিল করার কৌশল নিয়েছেন। নবীনের কৌশলের পাল্টা তাস খেলেছে কংগ্রেস। তারাও একজন মহিলাকে প্রার্থী করেছে। এখানে কংগ্রেসের প্রার্থী হলেন মধুমিতা শেঠি। তিনি হলেন প্রাক্তন এমপি অনন্ত শেঠির মেয়ে।
শুধু পরিবারতন্ত্রই নয়, এই তিন প্রার্থীর অন্য এক জায়গাতেও মিল আছে, তিনজনেই ক্রোড়পতি। এখানে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হিসাবে লড়াই করছেন তিলোত্তমা জেনা। অন্য তিনজনের তুলনায় তিলোত্তমা আর্থিকভাবে দুর্বল হলেও লড়াকু, আশাবাদী।
ভদ্রক লোকসভা সাতটি বিধানসভা নিয়ে গঠিত। সোরো, সিমুলিয়া, ভদ্রক, ভাণ্ডারিপোখারি, বাসুদেবপুর, ধামনগর এবং চান্দাবলী। সাতটি কেন্দ্রেরই বিধায়ক বিজেডির। তবে এখানেও বিজু জনতা দলের মধ্যে গোষ্ঠী কোন্দল আছে। চান্দাবলীতে ব্যোমকেশ রায়কে প্রার্থী করায় বিজেডির অনেক নেতা ও কর্মী ক্ষুব্ধ। ভদ্রক লোকসভা কেন্দ্রে খুব টাফ ফাইট হবে বলে সাধারণ মানুষের অনুমান। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মধ্যেও সংগঠনের জোর যার, জয়ও তারই।
কেন্দ্র: ভদ্রক
২০১৪’র ভোটে জয়ী: অর্জুন চরণ শেঠি (বিজেডি)
ভোটের দিন: ২৯ এপ্রিল