বিদ্যার জন্য স্থান পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণামূলক কাজে সাফল্য আসবে। কর্মপ্রার্থীরা কোনও শুভ সংবাদ পেতে ... বিশদ
তন্তুজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রবীন্দ্রনাথ রায় বলেন, অমিতাভবাবুর তৈরি বালুচরি শাড়ি দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। পুজোর মরশুমে ওঁর তৈরি ৫০ হাজার টাকা দামের শাড়ি রপ্তানি করেছি। এবার এক লক্ষ টাকার ওই শাড়ি কিছুদিনের মধ্যে ইউরোপে পাঠাব।
প্রসঙ্গত, মুর্শিদাবাদের বালুচর গ্রামে প্রথম ওই শাড়ির প্রচলন হয়। গ্রামের নাম অনুসারে শাড়ির নামকরণ হয়। মুর্শিদাবাদ থেকে প্রায় ৯০বছর আগে বিষ্ণুপুরে বালুচরি শাড়ির নকশা আসে। বিষ্ণুপুরের তাঁতশিল্পীরা সহজেই ওই শাড়ি তৈরির কৌশল রপ্ত করে ফেলেন। মাত্র ৬০জন ওইসময় হস্তচালিত তাঁতের মাধ্যমে বালুচরি শাড়ি বুনতে শুরু করেন। বর্তমানে বালুচরি শাড়ির জন্য মল্লরাজাদের রাজধানী বিষ্ণুপুরের খ্যাতি বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। প্রথমদিকে শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মন্দিরগুলির টেরাকোটার কাজ বালুচরি শাড়ির নকশা হিসেবে শিল্পীরা ব্যবহার করতেন। পরে নতুনত্ব আনার জন্য রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনী নকশায় ফুটিয়ে তোলা হয়। পরবর্তীকালে শকুন্তলার কাহিনী এবং আদিবাসী নৃত্য বালুচরিতে ফুটিয়ে তোলা হয়। মহাভারতের কাহিনী অবলম্বনে পঞ্চপাণ্ডবের বীরত্ব শাড়ির উপর ফুটে ওঠে। ওই শাড়ি একসময় প্রচুর বিক্রি হয়েছিল।
বাম আমলের শেষ দিকে বালুচরির বাজারে মন্দা আসে। একসময় বিষ্ণুপুরে প্রায় দুই হাজার হস্তচালিত তাঁত ছিল। বালুচরি শিল্পের সঙ্গে ৫-৭ হাজার মানুষ যুক্ত ছিলেন। কিন্তু, ২০০৬সালের পর থেকে ওই শিল্প ক্রমশ ধুঁকতে থাকে। তাঁতিরা লটারি বিক্রি শুরু করেন। কেউ কেউ দিনমজুরির কাজে যুক্ত হন। এক ধাক্কায় হস্তচালিত তাঁতের সংখ্যা পাঁচশোয় নেমে আসে। ২০১৬সালের পর থেকে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের চেষ্টায় ফের বালুচরি শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বালুচরি শিল্পকে বাঁচাতে একাধিক প্রকল্প চালু করেন। মহাজনদের হাত থেকে শিল্পীদের বের করতে সরকারের তরফে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তারপরেও বালুচরি বাজারজাত করতে শিল্পীদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছিল। রাজ্য সরকারের আওতায় থাকা তন্তুজ বালুচরির বিপণনে এগিয়ে আসে। তন্তুজের হাত ধরে রকমারি পোশাকের মাঝে বালুচরি জায়গা দখল করছে।
শিল্পী অমিতাভ পাল বলেন, ৫০ হাজার টাকার শাড়ির আঁচলে দুই রঙের ৭৪০টি বুটি ছিল। এক লক্ষ টাকার শাড়িতে সমসংখ্যক বুটি থাকলেও তিনটি রঙের সুতো ব্যবহার করা হয়েছে। ত্রিভুজাকৃতির বুটিগুলি পিরামিডের মতো শাড়ির আঁচলে থাকছে। নতুন শাড়িতে পাঁচটি পাড় থাকছে। তাতে পদ্মফুল, হাতি ও টিয়াপাখি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সব মিলিয়ে শাড়িতে সোনালি, ধূসর, কালো, তুঁতে, কালচে সবুজ, তসর এবং পেস্তা সবুজ রঙের সুতো ব্যবহার করা হয়েছে। প্রথমদিকে বালুচরি শাড়িতে মাত্র দুটি রঙের সুতোর কাজ হতো। এর আগে একটি শাড়িতে একসঙ্গে এত বেশি রঙের সুতোর ব্যবহার হয়নি বলে অমিতাভবাবু দাবি করেন। শাড়িতে তিন বা তার বেশি রঙের সুতো ব্যবহার করে পুরস্কৃত হয়েছেন বলেও তিনি জানান।
শিল্পী আরও বলেন, মালদা ও বেঙ্গালুরু থেকে রেশমের সুতো আনার পর আমরা বাড়িতে রং করি। গত ৪৭ দিন ধরে তিনজন মিলে একলাখি শাড়িটি বুনেছি। প্রতিদিন গড়ে ১০ঘণ্টা করে পরিশ্রম করতে হয়েছে। এর আগে আমেরিকার এরি, ওড়িশার কটকি এবং আসামের মুগা সিল্কের সঙ্গে বালুচরির সমন্বয় করে শাড়ি তৈরি করেছি। তিনকন্যা নামের শাড়িতে বাংলার মাদল, ওড়িশার ঢোল ও আসামের বিহু সঙ্গীতের বাদ্যযন্ত্র ফুটিয়ে তোলা হয়।
বিষ্ণুপুর তাঁতহীন তাঁতশ্রমিক সমবায়ের ম্যানেজার হলধর দাস বলেন, কিছুদিন আগে পর্যন্ত বালুচরি শাড়ির দাম ১২০০-৫০০০টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করত। বিদেশে রপ্তানি শুরু হওয়ার পর থেকে শাড়ির দাম বাড়তে শুরু করে। তবে বিদেশে পাঠানোর আগে শাড়ির যাতে কোনও খুঁত না থাকে সেব্যাপারে শিল্পীদের সজাগ থাকতে হয়।